মধ্যবিত্ত মানেই লড়াই সংগ্রাম, দুঃখ কষ্টের নকশা। পৃথিবীর আদিকাল থেকেই মুখ থুবড়ে মধ্যবিত্ত। ইয়াসির আহমেদ সবেমাত্র ভার্সিটি লাইফ শেষ করে বেকার যুবক। নিয়মতান্ত্রিক এখন আর ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রাবাসে থাকা যাবেনা। রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি না থাকায় দ্রুত ছাড়তে হবে হোস্টেল। ব্যাচেলর ছেলেদের বাসা পাওয়া অনেক কষ্টকর। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ঘুরাঘুরি করে অনেক শর্ত মেনে একটি বাসার ছাদ ঘরে রুমের ব্যবস্থা হলো কোনমতে। বাড়িওয়ালা ষাটোর্ধ রাকিবুল ইসলাম তার মেয়ে আফসানা বীথি থাকেন একটি ফ্ল্যাটে। বীথি মেয়েটি আদিযুগের ভয়ংকর দারোগার মত।
ব্যাচেলর ছেলেরা ঘর ঘুছিয়ে রাখেনা, অনেক নোংরা ইত্যাদি ইত্যাদি। ইয়াসিরও এই নিয়মেই রয়ে গেল। তার বই পড়া ও গিটার বাজানোর শখ বেশি। তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে এগুলো। বিভিন্ন সময় স্টেজ শোতেও গিটার বাজায়। কবিতা আবৃত্তি করে। ছাত্র অবস্থায় বহু পুরুষ্কার ঘরে তুলে নিয়েছে। মেঘলা আকাশ। ইয়াসির গিটারের সুরে গানের সাথে মিশে আছে। বীথি ছাদ বাগানের যত্ন নিতে প্রতিদিন বিকালে সময় দেয়। যদিও সে ব্যাচেলর ছেলেদের পছন্দ করে না। একদিন তো রীতিমত ঘর নোংরা রাখার জন্য অনেক শাসিয়েছে ইয়াসিরকে। তবে হ্যাঁ, গিটারের সুরে আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে ইয়াসির এর সাথে। ইয়াসিরও বীথির পছন্দের গানে তুলে তুফান। ইট কংক্রিটের শহরে বড় হলেও বীথি পছন্দ করে হাসন রাজা, রাধারমণ, শাহ আব্দুল করিমের গান। আর এই সাধকদের উত্তরসূরী ইয়াসির আহমেদ। জন্ম সুনামগঞ্জ জেলা।
নিয়মতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থায় এখন আর ইয়াসির এর সময় যাচ্ছেনা। রাত জেগে চাকুরির বই আর দিনের বেলা একটি চাকুরির জন্য বিভিন্ন অফিসের দরজায় কড়া নাড়া। কিন্তু কোন ব্যবস্থাই আর হচ্ছে-না। সন্ধ্যাকাশে তারাগুলো জোনাকিপোকার সাথে সখ্যতা পেতেছে। ঝিরিঝিরি বাতাস আর ছাদের ফুলের ঘ্রাণে ঘ্রাণে ম-ম চারপাশ। ইয়াসির গিটার বাজাচ্ছে আর গুন গুন করছে। বীথি একটি খবরের কাগজ নিয়ে দৌড়ে এলো। একটি টিভি চ্যানেল গানের কমপিটিশন আয়োজন করেছে। বীথি ইয়াসিরকে বেশ মোটিভেট করছে কমপিটিশনে নাম দিতে। সে সাহস পাচ্ছেনা। একরকম জোরপূর্বক বীথি-ই ইয়াসির এর মোবাইল নিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করলো।
প্রায় মাসখানেক যাবত হতাশায় ডুবে যাচ্ছে ইয়াসির। কিচ্ছু ভাল লাগেনা। কোন কিছুতে মন বসেনা। মধ্যবিত্ত পরিবারের টাকা ভেঙে আর খেতে চায়না। বাবার একটি ছোট চাকুরির টাকা আর কত খরচ করবে। ইস্ বলেই চুল দাড়ি টানতে লাগলো। হতাশ চোখ দুপুরের রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে। পড়নের কাপড়চোপড় দিন দিন ময়লা হয়ে যাচ্ছে। ধুয়ে দিতে মন চায়না একদম। কয়েকদিন যাবত বীথিদের বাসায় মেহমান থাকায় ইয়াসির এর ভালো ভাবে খোজখবর দিতে পারছেনা। এর কারণও আছে। বাবা ছাড়া বীথি আর দুনিয়াতে কেউ নেই। আজ হঠাৎ রান্নাবান্না শেষ নিজ হাতে খাবার দাবার নিয়ে ইয়াসির এর ছাদ ঘরে আসলো। ছেলেটার মলিন চোখ মুখ দ্যাখে বীথির মনটা হাহাকার করে উঠলো।
-আরে বাবা এতো চিন্তা করছো কেন? বাসাভাড়া দেওয়া লাগছে না। খাবারের চিন্তা করা লাগছেনা। আমি-ই তো সবকিছুর ব্যবস্থা করে রাখছি। তাহলে… কি যে করোনা। চেহেরাটার বারোটা বাজিয়ে রাখছ। ঘর তো শেষ, যেন ভূতের বাসা।
– ইস্ বীথি এতো কথা বলো না। আমার কিচ্ছু ভালো লাগেনা। এর মধ্যে এ তুমি আরো আগুন দিলে। চাকুরীটা হয়ে গেলেই সব পরিশোধ করে দিব।
– বুঝেছি বুঝেছি আর ভাব নিও না। তোমার কিচ্ছু পরিশোধ করা লাগবেনা। মাথায় টেনশন নিও না। ঘরজামাই করেই রাখবো। গানটান ভাল ভাবে চালিয়ে যা-ও।
ইয়াসির নিরব। কথা বলছেনা। বীথির কোন কথার প্রতিবাদও করছেনা। এখন সময় তার খারাপ। সব মেনে নিতে হবে।
কি যেন অচিনপুরের ভাবনায় ডুবে আছে। মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো। এইজাতীয় মেসেজ মোবাইল কোম্পানিওয়ালারা ইচ্ছে মত দিয়ে থাকে। একটা অবহেলার মাঝেই বীথি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখছে স্বপ্নের মেসেজ। ইয়াসির কে রেয়েল্যাটি শো-এর টাইমটেবল দিয়ে ডাক দিচ্ছে। চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠলো বীথি। জড়িয়ে ধরলো ইয়াসির কে। যদিও এই কমপিটিশন নিয়ে ইয়াসির এর তেমন মাথা ব্যাথা নেই। তবুও বেজায় খুশি। ইয়াসির বীথির হাতে থাকা মোবাইল স্কিনের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইল। কিছুটা সত্যতা প্রমাণিত হলেও নামটা পুরোপুরি মিলছে না। তখনই বীথি বলে দিয়েছে, কি নিয়ে ভাবছেন মহাশয়? এখন থেকে তোমার নাম আদনান ইয়াসির। এজাতীয় কমপিটিশনে নাম টাম ফ্যাশনেবোলই হয়ে থাকে। ইয়াসির বুঝতে পেরেছে এটা বীথির কাজ।
১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগীয় অডিশন।
ইয়াসির প্রস্তুতি নিচ্ছে, সময়ও কাছাকাছি। বীথি বাবার কাছে বায়না ধরছে সিলেট যাবে। ইয়াসির কে পাশে থেকে উৎসাহ যোগাবে। বাবা চিন্তিত কি করা যায়। জিদি মেয়ে না করলেও সমস্যা। তবুও অপরিচিত জায়গা বলে – টলে অর্থাৎ বুঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা। বীথি আর ইয়াসির সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। পারাবত ট্রেন চেপে দু’জন পৌঁছে গেল সিলেটে। হোটেলে ব্যাগ রেখেই ফ্রেশ হয়ে দু’জন দোয়া নিতে শাহজালাল (রহঃ) মাজারে আসলো। বীথির এই প্রথম সিলেট আশা। দোয়া দুরুদ করে ঘুরে বেড়িয়ে দেখল মাজার শরীফ। সন্ধ্যা ৭ টায় অডিশন শুরু হবে। ইয়াসির তাড়া দিচ্ছে বীথিকে। দু’জন খাওয়া দাওয়া করে চলে গেল হোটেলে।
অডিশন হচ্ছে লাক্কাতুরা চা বাগানে। মালনীছড়া আর লাক্কাতুরা চা বাগান পাওয়া যাবে একই যাত্রা পথে। ব্যবধান শুধু রাস্তার এপাশ ওপাশ। শ্রেষ্টত্বের দিক থেকে লাক্কাতুরা চা বাগানটি কখনো কখনো মালনীছড়া চা বাগানকে ছাড়িয়ে গেছে। সিলেট নগরীর চৌকিদেখি আবাসিক এলাকা পেরুনোর পর গলফ ক্লাবের রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই একবারেই চলে যাবেন বাগানের মধ্যিখানে। বাগানের এপাশ ওপাশ ঘুরে গলফ ক্লাবের সুন্দরম টিলার উপরই সাজানো গোছানো অডিশন মঞ্চ। একটু সামনে এগুলেই পেয়ে যাবেন সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম। চারপাশে চা বাগান আর মাঝখানে স্টেডিয়াম, সত্যিই অসাধারণ! এমন সবুজ প্রকৃতির ভেতর স্টেডিয়াম পৃথিবীতে সম্ভবত একটাই। অডিশন রাউন্ড শুধু হওয়ার আগে বীথি ঘুরে দেখলো চারপাশ। ঘড়ির কাটা ৭ টা বাজার সাথে সাথেই অডিশন শুরু। দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীরা বিচারকের দায়িত্বে আছেন। এবার মঞ্চে ডাক পড়লো আদনান ইয়াসির এর । কালনী পাড়ের গণমানুষের বাউল শাহ আব্দুল করিম এর উজান ধলের ছেলে। ইয়াসির সাহস নিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিয়েই বাঁধলো জন্মস্থানের গান।
‘কোন মেস্তরি নাও বানাইলো এমন দেখা যায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায়’।
‘হারা-জিতা-ছুবের বেলা কার পানে কে চায়
পাছের মাঝি হাল ধরিয়ো ঈমানের বৈঠায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায়’।
গানের তালে তালে হাজার দর্শক নিরব হয়ে গেল। আমরা কিসের আভাস পাচ্ছি? আমরা কি গণমানুষের উত্তরসূরী পেতে যাচ্ছি। আমাদের জন্য নতুন আশীর্বাদ আদনান ইয়াসির। গান শেষে করতালির সাথে বিচারক ও দর্শক দাঁড়িয়ে গেলেন। এই অবস্থা দেখে আবেগ আপ্লূত ইয়াসির। বিচারক প্যানেল প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই দৃশ্য দেখে বীথি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। একরাশ তৃপ্তি নিয়ে জড়িয়ে ধরলো ইয়াসির কে।
সিলেট বিভাগীয় অডিশনে বাজিমাত লাগিয়ে ইয়াসির ঢাকার পথে। সেরাদের সেরা নির্বাচিত। এবার ঢাকায় কমপিটিশন। প্রত্যেক বিভাগের জিনিয়াসদের কে নিয়ে এই পর্ব শুরু। ইয়াসিরও প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রস্তুত করছে। আর পিছন পিছন লেগে আছে আফসানা বীথি। পৃথিবী জয়ের বিশাল এক নেশা পেয়ে বসেছে বীথিকে। মনের জানালা খুলে নিরলস ভাবে যত্ন নিচ্ছি ইয়াসিরের। এই মুকুট ঘরে চাই। যদিও অনেক সাধনার, অনেক পরিশ্রমের।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেশকয়জন ডিজাইনার দিনেরাতে কাজ করে প্রস্তুত করেছেন। অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে আদনান ইয়াসির ফাইনাল রাউন্ডে। এরইমধ্যে নিজের সুনাম ছড়িয়ে দিয়েছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের দুয়ারে। তুমুলযুদ্ধ চলছে কন্ঠে কন্ঠে। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেরাদের সেরা মুকুট আদনান ইয়াসির-ই জিতে নিল। চারদিকে হৈচৈ আর তরুণ তরুণীদের সেলফির ভিড়ে আটকে গেল ইয়াসির। এদিকে আনন্দে আত্মহারা ফারহানা বীথি। এতো ধাক্কাধাক্কির ভিড়ে স্বপ্নের গায়ককে কাছে পেতে মরিয়া উঠলো, একটুখানিক স্পর্শে আদর করতে। ইয়াসিরও ভুল করেনি। যার জন্য এই অর্জন তার মাথায়-ই মুকুট পড়িয়ে দিল এবং বিশ লক্ষ্য টাকার চেক তুলে দিল। বেশকয়বার বীথি চুমু খেল ইয়াসির এর কপালে। ইয়াসিরও বীথিকে জড়িয়ে নিশ্বাস নিল।
ইয়াসির এখন আর আগের মত নেই। তুমুল ব্যস্ত সময় পাড় করছে। টিভি শো, স্টেজ শো, বন্ধু – বান্ধবও অনেক বেড়ে গেছে। রাস্তায় বাহির হলে জেম গেলে যায়। বীথি তো অনেক সময় তারে টেনে হাশরে উদ্ধার করে। এই জনপ্রিয়তা রেস্টুরেন্টে, অভিজাত মার্কেট সব জাগায় তুঙ্গে। মানুষের মাঝে তার চাহিদা বেড়েই চলছে। এদিকে বীথি ইয়াসির কে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার বাবা রাকিবুল ইসলামের বয়সও অনেক হয়েছে।
ইয়াসির সিদ্ধান্ত নিল আপাতত বিয়ে করবেনা। তার ক্যারিয়ার আরো ডেভেলপ করবে। এই নিয়ে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে বীথির সাথে। একদিন ফ্ল্যাট কিনবে বলে বীথির কাছে জমানো টাকা নিয়ে যায়। নিজের মত করে গোছাতে ব্যস্ত নিজেকে। অনেক শিল্পপতি ও ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে মেয়ে এখন আদনান ইয়াসিরের বন্ধু। বীথি এখন তার কাছে অনেকটা তুচ্ছ। সে হারিয়ে যায় অন্য এক জগতে। একদিন বীথি কে না বলেই চলে যায় বীথিদের আশ্রিত বাসা ছেড়ে। এ যেন অন্য এক ইয়াসির।
ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে এখন ইয়াসির বসবাস করে। এখন তার পারশোনাল সেক্রেটারিও আছে। থাকারই তো কথা। দেশে বিদেশে শুধু শো আর শো। আর টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে নিয়মিত লাইভ প্রোগ্রাম। যেটুকু সময় সে অবসরে থাকে বিভিন্ন বিভিন্ন বয়সের ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েদের সাথে ফোনালাপ, চ্যাট, ফেজবুকিং করে সময় যায়। মাঝেমধ্যে উঠতি বয়সী মেয়েদের সাথে দামি গাড়ি চেপে চলে যায় লাং ডাইভে। বদলে যাওয়ার সহজ একটি দৃষ্টান্ত ইয়াসির।
আফসানা বীথি এখন বড্ড একা। ৫ বৎসর হয়ে গেল বাবা রাকিবুল ইসলাম কে হারিয়েছে। মা চলে গেছেন বীথির বয়স যখন মাত্র ১১। বাবা-ই পরম যত্নে বীথি-কে আগলে রেখেছেন। যে মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের বিশ্বাস করতোনা, সেই বিশ্বাস-ই সত্যি হয়ে গেছে চোখের পলকে। অনেক অজানা ভাবনা আজ মাথায় ঘুরছে। মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা অনেক রকম কষ্টতো আর চোখে দেখা যায়না। শরীরে চিমটি কাটলে অনুভবও হয় না। পৃথিবীর নিয়মগুলো আদিকাল থেকে-ই একরকম। শুধু কষ্ট, কষ্ট আর কষ্ট।
আদনান ইয়াসির গুরুতর অসুস্থ। সে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। হেপাটাইটিস বি তার আগেই ছিলো। তারকা খ্যাতি পাওয়ার পরে সোসাইটি মেইনটিন করতে গিয়ে মদ্যপানে জড়িয়ে যায়। তার এই কঠিন অসুখের খবরে অনেক কাছের বন্ধু বহুদূরে। তাদের আর খুঁজ নেই। দুই একজন পাশে থেকে সাহস দিলেও তাদের আর্থিক সহযোগিতা করার ক্ষমতা নেই। তার এই অসুস্থতার খবর বেশকয়টি পত্রিকার বিনোদন বিভাগে ফলাও করে প্রকাশ করেছে। শিরোনামটি ছিলো এই রকম ‘টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী আদনান ইয়াসির’। বেশকিছু শ্রোতা তাদের ফেসবুক ওয়ালে নিউজটি শেয়ার দিলেন। নিউজের পক্ষে বিপক্ষে বেশ মন্তব্য। গান গেয়ে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা আয় করা শিল্পীদের প্রায়-ই চিকিৎসা করার টাকা থাকেনা।
বীথি সকালের নাস্তা সেরে চায়ের কাপে চুমু দিচ্ছে আর খবরের কাগজের শিরোনাম দেখছে। হঠাৎ বিনোদনের পাতায় চোখ পড়তেই চমকে গেল। বিস্তারিত খবরের সাথে ক্যাপশনে আদনান ইয়াসিরের একখানা মলিন ছবি। কিভাবে যে চায়ের কাপ কয়েক টুকরা হয়ে গেল বীথি বুঝতেই পারিনি। নিরবতা ভেঙে ওঠে দাড়ালো। চোখে কয়েক ঝাপটা পানি দিয়েই ফোন দিল পত্রিকা অফিসে। বীথি জানিয়ে দিল দেশের সুনামধন্য কন্ঠশিল্পী আদনান ইয়াসির এর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে। চেয়ে নিল প্রতিবেদকের ফোন নাম্বার। বিনোদন বিভাগের সাংবাদিক হাসান রাশেদ এর সাথে শর্তসাপেক্ষে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়ে দিল।
সাংবাদিক হাসান রাশেদ আদনান ইয়াসির কে জানিয়ে দিল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রোতা তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবে। কে সে জানার জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়ে গেল ইয়াসির। হাসান রাশেদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নাম প্রকাশ করলে উনি এগিয়ে আসবেন না। অবশেষে চুপ থেকে-ই লিভার প্রতিস্থাপনের উদ্যােগ নিল ইয়াসির।
প্রায় চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ লক্ষ্য টাকার প্রয়োজন ইয়াসিরের চিকিৎসার জন্য। বীথি সিদ্ধান্ত নিল বাবার রেখে যাওয়া বাড়ীটা বিক্রি করে দিবে। তবুও ইয়াসির কে সুস্থ করে তুলতে চায়। প্রতিবেশী কয়েকজনের সাথে আলোচনা করতেই একজন রাজি হয়ে গেলেন বাড়ী কিনতে। সব প্রস্তুতির শেষে বাড়ীটা বিক্রি করে দিল। সাংবাদিক হাসান রাশেদ এর মাধ্যমে চিকিৎসার টাকা পূর্বেই ঠিক করা দেশের নামকরা হসপিটালে জমা দিল।
চিকিৎসা শেষে আদনান ইয়াসির এখন পুরোপুরি সুস্থ। হাসান রাশেদ কে কাকুতি মিনতি করছে, জানতে চায় কে সে-ই শ্রোতা, এতো টাকা ব্যয় করে থাকে সুস্থ করে তুলছেন। তীব্র অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে হাসান রাশেদ নামটি বলতে বাধ্য হয়। ইয়াসির বিস্তারিত শোনে আর্তে ওঠে। হসপিটাল থেকেই হাসান কে সাথে নিয়ে পৌঁছে যায় আফসানা বীথির বাসায়। কিন্তু বীথি আর এখানে নেই। বাড়ীতে থাকা ভদ্রলোক জানিয়ে দেন সে এই বাসা বিক্রি করে একজনের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেছে। ইয়াসির বারবার ভদ্রলোক কে তাগিদ দিচ্ছে তার ঠিকানাটা দেওয়ার জন্য। ঠিকানা, ঠিকানা কোথায় পাবে? বীথি কোথায় গেছে কাউকে বলে যায়নি। হাসান রাশেদ এর কাছে থাকা বীথির মোবাইল নাম্বারে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ওপাশ থেকে বলে যাচ্ছে ‘এখন আর সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’।
লেখকঃ বিশেষ প্রতিনিধি, বাংলা নিউজ ইউ এস এ ডটকম।
সম্পাদক, লিটলম্যাগ ‘শব্দকথা’।
রামকৃষ্ণ মিশন রোড, হবিগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৪৮৬৬৫৪৫
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।