নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীল ও গালিগালাজকারী হয় না।’ সুনানে তিরমিজি : ১৯৭৭
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমরা ভাষায় মিষ্টভাষী হও, আচরণে সংযমী হও।’ হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকো এক টুকরো খেজুর দিয়ে হলেও। যদি তা না পাও তা হলে মধুর ভাষার বিনিময়ে।’ বোখারি : ৫৫৯৮
হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের) ধূলি ও জাহান্নামের ধোঁয়া কোনো বান্দার মধ্যে কখনো একত্র হতে পারে না। অনুরূপভাবে মনের সংকীর্ণতা ও ইমান কখনো একত্র হতে পারে না।’ ইবনে মাজা
হজরত সামুরা (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরকে আল্লাহর অভিশাপ, আল্লাহর ক্রোধ এবং আগুনের দ্বারা অভিসম্পাত করো না।’ তিরমিজি
হজরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অশ্লীল কথা বলে এবং তা প্রচার করে তাদের উভয়ে সমান পাপী।’ আদাবুল মুফরাদ
‘যেসব লোক ইমানদার পুরুষ ও নারীদের বিনা কারণে কষ্ট দেয় তারা একটি অতি বড় মিথ্যা অপবাদ ও সুস্পষ্ট গোনাহের বোঝা নিজেদের মাথায় উঠিয়ে নেয়।’ সুরা আহজাব : ৫৮
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিমকে গালি দেওয়া গোনাহের কাজ এবং তার সঙ্গে মারামারি করা কুফুরি। সহিহ্ মুসলিম : ১২৪
‘হে ইমানদাররা, তোমাদের কোনো দল যেন অপর কোনো দলকে উপহাস না করে। কেননা, যাদের উপহাস করা হলো তারা উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অপর নারীদের উপহাস না করে। কেননা, যাদের উপহাস করা হলো তারা উপহাসকারীনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরকে দোষারোপ করো না এবং মন্দ নামে ডেকো না। ইমানের পর ফুসুক অতি মন্দ। যারা তওবা করে না তারাই জালেম।’ সুরা হুজুরাত : ১১
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে চারটি বিষয় হলো জাহিলি বিষয়, এগুলোকে লোকেরা (পুরোপুরিভাবে) ছাড়বে না। ক. মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা, খ. বংশ তুলে গালি দেওয়া, গ. রোগ সংক্রমিত হওয়ার ধারণা, একটি উটে চর্ম রোগ হলে একশটি উটে তা সংক্রামিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রথমটিকে কে চর্ম রোগে আক্রান্ত করল … ? ঘ. আর নক্ষত্র ও রাশিচক্রের (প্রভাব) মান্য করা, (তারা বলে) অমুক, অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের বৃষ্টি হলো। তিরমিজি : ১০০১
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তুমি হক কথা বলো যদিও তা তিক্ত হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দর ভাষা জান্নাতে পৌঁছায় আর দুর্ব্যবহার দোজখে পতিত করেন।’ সহিহ্ বোখারি
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নিচ ও অসভ্য হয়ে থাকে।’ সুনানে আবু দাউদ
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো অশ্লীলভাষী, অভিশাপকারী বা গালি বর্ষণকারী ছিলেন না। অসন্তুষ্ট হলে তিনি বলতেন, তার কী হলো? তার কপাল ধূলিমলিন হোক।’ সহিহ্ বোখারি
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের কাছ থেকে দূরে থাকো।’ সুরা আরাফ : ১৯৯
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সঙ্গে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।’ সুরা ফোরকান : ৬৩
হাদিস শরিফে আরও বলা হয়েছে, ‘সেই প্রকৃত মুসলমান, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’
বর্ণিত এসব আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলাম এসেছে মানুষকে সভ্য-ভদ্র ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, নৈতিকতার অসম শিখরে পৌঁছানোর জন্য, ব্যবহার দিয়ে বিশ্ব জয় করার জন্য। অথচ আমাদের ব্যবহারে আজ আমরাই নির্যাতিত। তাই বলি, আসুন! ইসলামি চেতনার অধিকারী হয়ে নিজেদের জীবন সৌন্দর্যমণ্ডিত করি। মনে রাখতে হবে, এ জীবন ক্ষণস্থায়ী, ডায়েরির পাতার মতো। আপনার জীবন যদি অসুস্থ পথে কাটান তাহলে সে জীবনের ডায়েরি কি আপনি আপনার প্রিয়জনদের দেখাতে পারবেন? জীবনের পাতা যত সুন্দর হবে আপনার ডায়েরি অবলীলায় মানুষের অবলোকনে আসবে ও অনুসরণযোগ্য হবে।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ (জিহ্বা) ও দুই রানের মধ্যভাগ (লজ্জাস্থান) হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি।’ সহিহ্ বোখারি : ৬৪৭৪