নিউজ ডেস্কঃ লেবার পার্টির নেতা জোনাস গাহর স্টোরের নেতৃত্বাধীন নরওয়ের বামপন্থী বিরোধী জোট দেশটির জাতীয় নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়েছে। দেশের তেল শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে এক ব্যাপক প্রচারাভিযানের পর গতকাল সোমবার এই বিজয় পেল নরওয়ের বামপন্থীরা।
২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গের নেতৃত্বাধীন মধ্য-ডানপন্থী জোটকে পরাজিত করে জোনাস গাহর স্টোরের নেতৃত্বাধীন বামপন্থী জোট এবার ক্ষমতায় আসল।
সোলবার্গ পরাজয় স্বীকার করে নেওয়ার পর উৎসাহী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে নরওয়ের সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী জোনাস স্টোর বলছিলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করেছিলাম, আমরা আশা করেছিলাম, এবং আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম, এবং এখন আমরা অবশেষে বলতে পারি যে, আমরা এটা করে দেখিয়েছি!’
১০০% ভোট গণনার পর জোনাস স্টোরের নেতৃত্বাধীন লেবার এবং চারটি মধ্য-বামপন্থী দলের এই জোটের আসন সংখ্যা বেড়ে ১০০টিতে গিয়ে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৯৭.৫ শতাংশ ভোট গণনার পর বর্তমানে এই জোটের আসন সংখ্যা ৮১টি হয়েছে।
আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো ৬১ বছর বয়সী শতকোটিপতি এবং শীর্ষ ধনী সোলবার্গ বলেন, ‘নরওয়ের জনগণ এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, তার একটি ন্যায়পরায়ণ ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ চান’।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) থেকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়ে আগস্ট রিপোর্টের পর পশ্চিম ইউরোপের বৃহত্তম তেল ও গ্যাস উৎপাদক হিসেবে নরওয়ের অবস্থানের বিষয়টি নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। জোনাস স্টোর তেল অর্থনীতি থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসার কথা বলেছিলেন, অন্যদিকে গ্রিন পার্টি অবিলম্বে তেল উৎপাদন বন্ধের কথা বলেছিল। কনজারভেটিভরাও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে বের হয়ে আসার কথা বলেছে। নরওয়েকে ধনী করেছে এই জীবাশ্ম জ্বালানি।
সোলবার্গ তার বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি জোনাস স্টোরকে অভিনন্দন জানাতে চাই, যিনি সরকার পরিবর্তনের জন্য স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন’।
একটি টেকসই মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য স্টোরকে তার সম্ভাব্য মধ্য-বাম অংশীদারদেরকে তেল এবং ব্যক্তিগত মালিকানা থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে নরওয়ের সম্পর্ক বিষয়ক বিভিন্ন নীতি নিয়ে আপোষ করতে রাজি করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
পার্টির সদস্যদের উদ্দেশ্যে এক বক্তৃতায় স্টোর বলেন, ‘সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আমরা চেষ্টা করব নরওয়ে যেন সম্পূর্ণ নতুন একটি সরকার এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি নতুন গতিপথ পায়’।
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে, আমি এমন সব দলের নেতাদেরকে আমন্ত্রণ জানাব যারা পরিবর্তন চান’। তিনি বলেন, সেন্টার পার্টি এবং সমাজতান্ত্রিক বামদের দিয়ে তিনি এই আমন্ত্রণ শুরু করবেন।
নরওয়ের মোট দেশীয় উৎপাদনের ১৪ শতাংশ এবং রপ্তানির ৪০ শতাংশ আসে তেল খাত থেকে। এ ছাড়া ১,৬০,০০০ লোকের সরাসরি কর্মসংস্থানও হয় এই খাতে।
এই তেল খাতের মাধ্যমেই মাত্র ৫৪ লাখ মানুষের দেশ নরওয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্বভৌম সম্পদের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে, বর্তমানে যার মূল্য প্রায় ১২ ট্রিলিয়ন ক্রোনার (১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার)।
২০০৫ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে জেন্স স্টলটেনবার্গের সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জোনাস স্টোর এখন প্রধানত গ্রাম ভিত্তিক সেন্টার পার্টির সাথে আলোচনা শুরু করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর পরিবেশগত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য শক্তিশালী সমর্থক সমাজতান্ত্রিক বামপন্থীদের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করবেন।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর ওপর কর কমিয়ে এবং ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন জোনাস স্টোর।