সন পদক পেলেন স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সন্ধ্যা ৬:২৫, ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

সন পদক পেলেন স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম

newsup
প্রকাশিত নভেম্বর ২১, ২০২১
সন পদক পেলেন স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম

নিউজ ডেস্কঃ 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও একবার বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করলেন স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম। সম্প্রতি তিনি জিতে নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত সন পদক। কেবল প্রথম বাংলাদেশি স্থপতি হিসেবেই নয়, পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চল থেকেও এ পুরস্কার জয়ী প্রথম স্থপতি মেরিনা। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত স্থপতি স্যার জন সনের নামে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। সম্প্রতি গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনেও মেরিনা তাবাশ্যুমের এ অর্জনের কথা উঠে আসে।

মেরিনা তাবাশ্যুম দেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। বেশকিছু ভিন্নধর্মী কিছু কাজের মাধ্যমে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। স্থপতি হিসেবে মেরিনা সবসময়ই দেশীয় উপকরণের মিশেলে পরিবেশবান্ধব স্থাপনা তৈরির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন । পরিবেশের জন্য উপকারী এবং টেকসই ভবন নির্মাণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।

 

মানব সভ্যতার বিকাশে স্বাপত্যের গুরুত্বকে তুলে ধরা এবং মানুষকে উৎসাহ দেয়ার জন্য প্রতি বছর  সন পদক দেয়া হয়। কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে স্থপতি, শিক্ষাবিদ এবং সমালোচকদের এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়। গত ২০১৭ সাল থেকে নিজ ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল পুরস্কারের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করে থাকেন। এই প্যানেলের নেতৃত্বে থাকেন স্যার জন সন জাদুঘরের সাবেক ট্রাস্টি স্যার ডেভিড চিপারফিল্ড।

এবার এ পুরস্কার অর্জনের সুবাদে মেরিনা তাবাশ্যুম লন্ডনে তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। সেখানে দেয়া বক্তৃতায় তিনি তাঁর স্থাপত্য-দর্শন সম্পর্কে বিশদ তুলে ধরেন। এ ছাড়াও সেখানে একটি আলোচনা সভায় যোগদান করেন তিনি। স্যার ডেভিড চিপারফিল্ড সেই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মেরিনার দেয়া বক্তৃতাও প্রকাশিত করেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

পুরস্কার জেতার পর মেরিনা বলেন, “শুরুতে আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। আমি মনে করি, আমার আগে বিজয়ী হওয়া রাফায়েল মনেও, ডেনিস স্কট ব্রাউন ও কেনেথ ফ্রাম্পটনের তুলনায় আমার কাজ এখনো অনেকটাই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।”

গতবছর থেকেই মেরিনা বাংলাদেশের বদ্বীপ অঞ্চল নিয়ে কাজ শুরু করেন। ভূপ্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশ গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। প্রতি বছর বর্ষাকালে দেশের প্রধান তিনটি নদীর পানি একত্রিত হয়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে করে সৃষ্টি হয় বন্যা। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে দ্রুত গলে যাচ্ছে হিমবাহ। যার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি অতিবৃষ্টির ফলে তীব্র বন্যার সৃষ্টি হয়। উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর পড়ে বিরূপ প্রভাব। মূলত এই সমস্যাটিকে মাথায় রেখেই তিনি কর্মপরিকল্পনা সাজানো শুরু করেন।  দেশে বন্যার সময় পলি জমে সৃষ্টি হয় ‘চর’। সেসব চরে ভূমিহীন মানুষেরা বসবাস করার চেষ্টা করে। সেখানে চাষাবাদ ছাড়াও অন্যান্য কৃষিকাজ করে থাকেন। মেরিনা তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তাঁর স্থাপত্যবিদ্যার দক্ষতা কাজে লাগানোর চেষ্টা শুরু করেন। গত বছর মেরিনা তাবাশ্যুম এবং তাঁর দল ভূমিহীন চরের বাসিন্দাদের জন্য কম খরচের ‘মড্যুলার হাউজ  কিট’ তৈরির কাজ শুরু করেন।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে তাঁর এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ব্যাপক প্রশংসা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে। মেরিনা তাবাশ্যুম বলেন, ‘একজন স্থপতি হিসেবে এসকল ভূমিহীন মানুষের প্রতি আমার দায়িত্বের জায়গা থেকে আমার এ উদ্যোগের শুরু। বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে শিল্প কারখানাগুলোই প্রধানত দায়ী। অথচ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজন এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

স্বনামধন্য স্থপতি হিসেবে ইতোমধ্যে মেরিনার ঝুলিতে রয়েছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক অর্জন। এবারের অর্জনের ফলে তাকে স্যার জন সনের পাওয়া স্বর্ণপদকের একটি রেপ্লিকা দেয়া হয়। এর আগে ২০২০ সালে বিশ্বের সেরা ৫০ চিন্তাবিদের তালিকায় শীর্ষ দশে স্থান করে নেন তিনি। সেরা দশ জনের মধ্যে তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্ট প্রতি বছর এ তালিকা দিয়ে থাকে। এ ছাড়াও ২০১৬ সালে ঢাকার দক্ষিণখানে তাঁর নকশায় নির্মিত ‘বায়তুর রউফ’ মসজিদের জন্য সম্মানজনক আগা খান পুরস্কার পান এই স্থপতি। এর আগে ২০০৪ সালেও তিনি এ পুরস্কারের জন্য প্রাথমিক মনোনয়ন লাভ করেছিলেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।