জেনেভা, ৩ অক্টোবর ২০২২: জাতিসংঘের সাইড ইভেন্টে অনুষ্ঠিত সেমিনারে একাত্তরের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত । জেনেভায় জাতিসংঘ ভবনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তারা পাকিস্তান কর্তৃক সংঘটিত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং কাল ক্ষেপণ না করে ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ১৯৭১ এর গণহত্যার শিকার এবং তাদের বংশধরদের সম্মান জানানো একান্ত প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশের গণহত্যা আজ ইতিহাসের এক বিস্মৃত অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউরোপ ভিত্তিক প্রবাসী সংগঠন বাসুগ আয়োজিত এই সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় যখন জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫১তম অধিবেশন চলছে। সাইড ইভেন্টটি ইউরোপ-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) এবং সুইজারল্যান্ড মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতে আমরা একাত্তর, প্রজন্ম একাত্তর ও বাসুগ নির্মিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বাসুগের চেয়ারম্যান বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি সঞ্চিতা হক, সুইডেনের হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি, পাকিস্তানী বংশদূত, সৈয়দ আসিফ শাকার, ব্রাসেলস ভিত্তিক উন্নয়ন গবেষণা সহযোগিতার পরিচালক অধ্যাপক ড. তাজিন মুরশিদ, জার্মানি থেকে প্রকাশিত ৫০ বছর বাংলাদেশ এর সম্পাদক ও বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এ্যামবেসেডর ড্যানিয়েল জাইডল, সুইস ইন্টারস্ট্রাটেজি গ্রুপের এর যোগাযোগ পরিচালক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টির নির্বাসিত চেয়ারম্যান সরদার শওকত আলী কাশ্মীরি, বেলুচ ভয়েস অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রান্স, এর সভাপতি মুনির মেঙ্গল, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ, সর্ব ইউরোপীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম মিয়া এবং ইন্টারন্যাশনাল এইচআর কমিশন বিডি, সুইজারল্যান্ড এর প্রেসিডেন্ট রহমান খলিলুর মামুন।
সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্য, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং ইউরোপের অন্যান্য সুশীল সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মী, যারা দিবসটির অন্যান্য পার্শ্ব ইভেন্টে অংশ নিতে জাতিসংঘ ভবনে উপস্থিত ছিলেন।
সাইড ইভেন্টটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে লন্ডন ভিত্তিক ব্রিটিশ বাংলা নিউজ চ্যানেল, যা ঢাকা ও নিউইয়র্ক সহ বিশ্বের বিভিন্ন নগরীতে প্রদর্শিত হয়েছে।
জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি সঞ্চিতা হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য ও শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে অর্জিত বিজয় পর্যন্ত লড়াই করেছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র নারী-শিশু সহ সাধারণ মানুষের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করেছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ২৫শে মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ সরকার একাত্তরের গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের যে কোন জায়গায় নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যার নিন্দা জানায়।
বিচারপতি সৈয়দ আলী শাকার বলেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং সঠিক বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করতে হবে, যেখানে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি থাকতে হবে।
বিচারপতি সৈয়দ আলী শাকার মূলত একজন পাকিস্তানি এবং বর্তমানে সুইডেনে নির্বাসিত। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রবল সমর্থক এবং একাত্তরে গণহত্যার তীব্র সমালোচক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার তার ভূমিকার জন্য তাকে ছয় মাসের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়।
অধ্যাপক ডাঃ তাজিন মুরশিদ বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আমাদের প্রচেষ্টা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। যদি এ ব্যাপারে দ্রুত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা না হয়, জনতার আদালত গঠন করে একাত্তরের গণহত্যার একক এবং সম্মিলিত হত্যাযজ্ঞের শুনানী নথিভুক্ত করা হবে এবং দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করা হবে, যদিও সেই রায় কার্যকর করা সম্ভব নাও হয়। এছাড়া এই গণহত্যার রায় এবং দলিল ও প্রমাণ ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে।
বাংলাদেশের বন্ধু পদকে ভূষিত আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, বাংলাদেশ গণহত্যার মতো মানবতা বিরোধী অপরাধের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায়।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।