বয়োবৃদ্ধদের বিপথগামী হওয়া ও আমাদের দায়বদ্ধতা – BANGLANEWSUS.COM
  • ২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

 

বয়োবৃদ্ধদের বিপথগামী হওয়া ও আমাদের দায়বদ্ধতা

newsup
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
বয়োবৃদ্ধদের বিপথগামী হওয়া ও আমাদের দায়বদ্ধতা

help concept, special toned photo f/x, focus point selective

সম্পাদকীয়: কয়েকদিন আগে পত্রিকার পাতায় কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ লোকের ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যাদের সবাইকে চোর বলে উল্লেখ করা হয়। বস্তুত এ দেশের বৃদ্ধরা জীবনের শেষ সময়গুলোতে ধর্মকর্ম করেন, সংসার চালান, পরিবারের দেখাশোনা করেন এবং সবার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলেন। বয়োবৃদ্ধরা সমাজের বা পরিবারের বোঝা নন; তারা আপনার-আমার ও পবিরাবের জন্য আশীর্বাদ। যদিও অতি বয়োবৃদ্ধদের আজকাল কিছু কিছু বৃদ্ধাশ্রমেও রাখা হয়। এই বৃদ্ধাশ্রমে অল্প কিছু বয়োবৃদ্ধ থাকলেও বৃদ্ধ মা-বাবাদের সঙ্গে রাখাই শ্রেয়। এ ব্যাপারে প্রতিটি ধর্মেই বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফিরে আসা যাক বৃদ্ধদের চোর হওয়ার খবরে। বৃদ্ধ কয়েকজন মানুষ মিলে চুরি করেছে। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক বৃদ্ধ চোর হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, আমাদের সমাজের অবক্ষয় এতটাই হয়েছে যে, যারা আমাদের উপদেশ দেবেন, ধর্মপরায়ণ হতে বলবেন, নীতিবাক্য শুনাবেন, সমাজের উন্নয়নের জন্য বুদ্ধি-পরামর্শ দেবেন, তারাই যদি চুরি করেন, তবে বিষয়টি কেমন মনে হয় না? এ বয়স্ক চোরদের চুরি করাটাই কেমন যেন সমাজের একটা অভূতপূর্ব অবক্ষয়ের ইঙ্গিত করছে। ছবিতে যে কয়জন বৃদ্ধ দেখলাম, তাদের কয়েকজনের মুখে আবার পাকা দাড়ি। প্রশ্ন হলো, এই বয়স্ক লোকেরা কেন চুরি করলেন? এমন বয়সে তারা আর যাই করুন না কেন, চুরি করাটা কিছুতেই তাদের মানায় না। তবে কী কারণে তারা এমন ঘৃণ্য কাজে জড়িয়ে পড়লেন? জীবিকার অভাব, ছেলেমেয়েরা তাদের ভরণপোষণ করেন না-সমাজ বা রাষ্ট্র থেকে সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়া ইত্যাদি কারণেই হোক না কেন-বয়স্ক ব্যক্তিদের চোর হওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।

আমি বর্তমানে যে স্থানে কাজ করছি, এখানে নানা কারণে বয়স্ক ও অতি বয়োবৃদ্ধ লোকদের প্রায়ই আসতে হয়। যেসব বৃদ্ধলোক বহু দেশ ঘুরেছেন, তারা প্রায়ই আমাকে প্রশ্ন করেন-এখানে কি সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই? দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না-এমন কথা অনেক বৃদ্ধলোক আক্ষেপ করে বলেন। আমি তাদের সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। নিজের অপারগতা প্রকাশ করা ছাড়া আমার আর কী বা করার আছে!

ফিরে আসা যাক-কী এমন ঘটল যে, বয়োবৃদ্ধরা চুরি করেছেন; তাও আবার দলবদ্ধ হয়ে। এখানটায় সমাজের বেশ দায় আছে বলে আমি মনে করি। বৃদ্ধদের সম্মান এখন আর পরিবার বা সমাজে সেরকমভাবে হয় না। বয়োবৃদ্ধদের বাড়িতে রাখাটাকে অনেক ছেলেমেয়ে বোঝা মনে করেন। বয়োবৃদ্ধ অবস্থায় অনেক মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দেখা যায়। অথচ বাবা-মা নিঃশেষ হলেও নিজ নিজ সন্তানকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে রাখেন শত অভাব অনটনের মধ্যেও। কজন বাবা অথবা মা জীবিত থাকা অবস্থায় নিজ সন্তানকে এতিমখানায় পাঠিয়েছেন-ভেবে দেখার বিষয়। বয়োবৃদ্ধদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ উঠে যেতে শুরু করে, যখন থেকে এদেশের একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভাঙতে শুরু করে। তারপর বয়োবৃদ্ধদের প্রতি শ্রদ্ধার সেই নিম্নগামিতা আর ফেরানো গেল না। ছেলেমেয়েদের বিদেশ পাঠানোও অনেক ক্ষেত্রে এ প্রবণতার জন্য দায়ী।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।