বিশেষ প্রতিবেদন:স্কুল পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে ছবি তুলছে। দোতলার উঠে আর কোনও দর্শনার্থীর দেখা মিললো না। সেখানে জাদুঘরের স্টাফরা অনেকটা নিরিবিলি সময় কাটাচ্ছেন। দর্শনার্থী না থাকায় তাদেরও কাজ নেই।
দোতলায় উঠতেই চোখে পড়লো বহু বছরের পুরনো একটি কাঠের খাট। ১৯১৮ সালে একশ’ রুপি দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। নগরীর আমির আলী খান খাটটি ব্যবহার করতেন। ২০১৯ সালের ৪ মার্চ তার ভাই এনায়েত হোসেন খান ও নওশের নেওয়াজ আলী খান খাটটি জাদুঘরে দেন। পুরো একটি ঘরজুড়ে খাটটির অবস্থান। সেগুন কাঠ দিয়ে তৈরি খাটের নামকরণ করা হয়েছে ‘অলঙ্কৃত খাট’।
আমির কুটির এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম জানান, নগরীর আমির কুটির এলাকার জামাই ছিলেন আমির আলী। এক সময় তিনি ওই এলাকার বেশিরভাগ জমি কিনে ল্যান্ডলর্ড বনে যান। পরবর্তী সময়ে তার নামানুসারে ওই এলাকার নাম রাখা হয় আমির কুটির। এছাড়া তার বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন যুগ্ম সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।
জাদুঘরের কক্ষগুলো ঘুরে দেখা গেলো, একটিতে রয়েছে ধান রাখার মাটির মটকা। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত এবং ঢাকা থেকে আনা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এর সঙ্গে রয়েছে জাদুঘর ভবনের কিছু উল্লেখযোগ্য জিনিসপত্র।
দোতালায় সাজানো ৯টি গ্যালারিতে গ্রামোফোন রেকর্ডার (কলের গান), আসবাবপত্র, শিবলিঙ্গ, মারীচি মূর্তি, কৃষ্ণ মূর্তি, হরগৌরী মূর্তি, মহাদেব মূর্তি, মুসলিম যুগের শিলালিপি, গুপ্ত যুগের পোড়ামাটির নিদর্শন, প্রস্তর নির্মিত পাল যুগের বুদ্ধমূর্তি, পদ্মখচিত সুলতানি যুগের পোড়ামাটির ফলকচিত্র, ব্রোঞ্জের বদনা, পাথরের মালা, মাটির সামগ্রী, তৈজসপত্রসহ অনেক মূল্যবান, দুষ্প্রাপ্য ও আকর্ষণীয় নিদর্শন প্রদর্শন করা হয়েছে।
পরিবেশ ও সমাজকর্মী কাজী মিজানুর রহমান জানান, এত আয়োজন যাদের জন্য সেই দর্শনার্থী সংকটে ভুগছে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর। দিনে ২৫-৩০ জনের বেশি দর্শনার্থী আসে না। প্রতিষ্ঠার পর সাত বছর পার হলেও বরিশাল জাদুঘর পূর্ণতা পায়নি। এখনও বরিশাল জাদুঘর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালকের আওতাধীন। এখানে দ্রুত আঞ্চলিক পরিচালক পদ তৈরি করা দরকার। প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি কাজে গতিশীলতা আনতে সক্ষম। ডিজিটাল প্রচার-প্রচারণা, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, স্থানীয় বেতারযোগে প্রচার ইত্যাদি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করবে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।