কারাবরণ করেছিলেন মুৎসুদ্দি – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ৪:৫৬, ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

কারাবরণ করেছিলেন মুৎসুদ্দি

newsup
প্রকাশিত আগস্ট ১২, ২০২৩
কারাবরণ করেছিলেন মুৎসুদ্দি

ডেস্ক রিপোর্ট: ভাষাসৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পড়ে গিয়ে বাঁ হাতে আঘাত পেয়েছিলেন। এখনো হাতটা পুরোপুরি ঠিক হয়নি। কেমন আছেন বলতেই তিনি বললেন, এমনিতে সুস্থ আছি। তবে বাঁ হাত এখনো স্বাভাবিক হয়নি। করোনার কারণে ঘর থেকেও তেমন বের হয়ে ওঠা হয় না।

প্রতিভা মুৎসুদ্দি একজন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের প্রশাসক। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান অনেক। ছাত্রজীবনে তিনি যেমন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে দেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেন। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে নেমে কারাবরণ করেন। তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রকেও নকলমুক্ত করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নিলেও শিক্ষাক্ষেত্র থেকে তিনি সরে দাঁড়াননি। বরং ভারতেশ্বরী হোমসসহ কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী হাসপাতাল স্কুল অব নার্সিং-এর কর্মকাণ্ডে এখনো সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট আছেন।

ছেলেবেলায় জেঠতুত দাদার কাছ থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। দাদার কাছে রাজনীতির দীক্ষা নিলেও পড়াশোনায়ও মনোযোগী ছিলেন তিনি। পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়ার কারণে তাকে কখনোই বাবার কাছে বকা খেতে হয়নি বরং এই মেয়েটিকে নিয়ে বাবা গর্ব করতেন। বাবা কিরণ বিকাশ মুৎসুদ্দি তাদের ভাইবোনদের পড়াশোনার তদারকি করতেন। ভাইদের জন্য গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা থাকলেও তার এবং অন্য বোনদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখা হতো না।

১৯৪৮ সালে তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ৩০ জানুয়ারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা মহাত্মা গান্ধী নিহত হলে অন্যায়ের প্রতিবাদে সভা, মিছিল করেন। কাঙালি ভোজ দেন। এ বছরই মে মাসে স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকার কৃষকদের অধিকার আদায়ের বিরোধিতা করে কৃষক হত্যা করে। ঘটনাটি ছিল চট্টগ্রামের মাদারশায় খাল কাটা নিয়ে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন কৃষক নিহত হয়। ওইদিন প্রতিভা অসুস্থতার কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারেননি। তার ছোট বোন ছিলেন এ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। বিদ্যালয়ে এসে কৃষক হত্যার সংবাদ শোনামাত্র ছোট বোন দ্রুত বাড়ি ফিরে পুরো ঘটনাটি প্রতিভাকে জানান। ছোট বোনের মুখে এ হত্যাকাণ্ডের খবর শুনেই তিনি আর দেরি করলেন না। তিনি দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিদ্যালয়ে চলে এলেন। কৃষক হত্যার প্রতিবাদে তিনি ছেলেমেয়েদের ক্লাস বর্জন করে মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য বেরিয়ে আসতে অনুরোধ করেন। শিক্ষকরা স্কুল থেকে মিছিল বের করতে দেবে না। মিছিল বন্ধ করার জন্য ছেলেদের ক্লাসে ঢুকিয়ে দেন। এতে এতটুকু দমলেন না প্রতিভা।
বরং তিনি মুখে চোঙা লাগিয়ে ছেলেদের ক্লাস বর্জন করে বাইরে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান। শিক্ষকরা তার এ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ মেনে নিতে পারলেন না। সঙ্গে সঙ্গে প্রধান শিক্ষক তার জেঠামশায় হৃদয় মুৎসুদ্দিকে ডেকে ঘটনাটি জানান এবং এও জানান, তিনি প্রতিভাকে এ বিদ্যালয়ে রাখবেন না। জেঠামশায় দ্রুত তার বাবাকে ঘটনাটি জানান। বাবা তার এ দুঃসাহসিকতা দেখে ভীষণ ক্ষেপে যান। এরপরও মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় বাবা তার পড়াশোনা বন্ধ না করে শহরে নিয়ে এলেন। নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিলেন ড. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫১ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। আইএ ভর্তি হন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে। প্রতিভা মুৎসুদ্দি ১৯৫২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া প্রসঙ্গে প্রতিভা মুৎসুদ্দি বলেন, ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’-মো. আলী জিন্নাহর এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদে পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতা রোষে ফেটে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম কমিটি গঠন করে। চট্টগ্রামেও মাহবুব উল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম কমিটি গড়ে ওঠে। ভাষার দাবিতে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিই। অন্যান্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে মিছিল, সভা, স্লোগান করি। পোস্টার লিখি। বাবা কখনোই চাইতেন না মেয়ে রাজনীতিতে জড়াক। অভিভাবকদের বাধাকে উপেক্ষা করে মাতৃভাষার দাবিতে রাজপথে নেমে মিছিল, সভা, স্লোগানে অংশ নিই। চট্টগ্রাম রাষ্ট্রভাষা কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর আহ্বানে ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমি ধর্মঘট পালন, মিছিল ও সভায় যোগ দিই। ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের জন্য আগের দিন সারা রাত জেগে পোস্টার লিখি। ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে বিকালে শিক্ষার্থীদের এক বিরাট মিছিল নিয়ে ডা. খাস্তগীর স্কুলে যাই। ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে ঢাকার ছাত্রদের ওপর পুলিশি জুলুমের কথা এবং ছাত্র হত্যার কথা মেয়েদের অবগত করি। সেখান থেকে ট্রাকযোগে মেয়েদের মিছিল নিয়ে চট্টগ্রামের সারা শহর প্রদক্ষিণ করি। আমাদের সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন নারী সংগঠন। চট্টগ্রামের সর্বদলীয় কর্মপরিষদের হয়ে সেদিন রাজপথে নামেন শেলী দস্তিদার, প্রণতি দস্তিদার (পূর্ণেন্দু দস্তিদারের বোন), মীরাসহ সিনিয়র শিক্ষার্থী সুলেখা, মিনতি, রামেন্দ্র, সুচরিত চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।