সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে সিলেটের গোলাপগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেট ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ও ঢাকাদক্ষিণ এলাকায় আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের সময় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের জেরে বিক্ষুব্ধরা থানা ঘেরাও করে রাখে। উপজেলা সদরের আশপাশে মসজিদে-মসজিদে মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করা হয়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেনাসদস্যরা এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বললে তারা স্থান ত্যাগ করে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩), শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮), নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নজমুল ইসলাম (২৪), তরাইল গ্রামের আলাদ্দিনের ছেলে মিনহাজ আহমদ (২৬), পৌর এলাকার ঘোষগাঁও গ্রামের মৃত মোবারক আলীর ছেলে গউছ উদ্দিন (২৯), ঢাকাদক্ষিণ রায়গড় গ্রামের ছুরুই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ (১৫)।
আহতদের সবার নাম পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা সবাই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহতরা হলেন ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের বারকোট গ্রামের মৃত মিয়ার পুত্র মো. জাবেদ আহমদ (২৩), একই গ্রামের আকিল আহমদের পুত্র ফরহাদ হোসেন (২২), ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের কানিশাইল গ্রামের মৃত শুক্কুর আলীর পুত্র হৃদয় আহমদ (২৫), ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের ফজলু মিয়ার পুত্র হাসিব আহমদ (২৩), একই ইউনিয়নের শরিফ আহমদ (২০)। এদের মধ্যে হাসিব আহমদ ও শরিফ আহমদের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। তাদের কোমরে গুলি লেগেছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. সুদর্শন সেন তাজ উদ্দিন ও সানি আহমদের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এছাড়াও অপর নিহত নাজমুল ইসলামের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার পিতা তৈয়ব আলী। এছাড়াও গোলাপগঞ্জের সংঘর্ষে মিনহাজ আহমদ ও গৌছ উদ্দিন এবং ঢাকাদক্ষিণে নিহত হাসান আহমদের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী।
জানা যায়, সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনে রোববার সকাল ১১টার দিকে ঢাকাদক্ষিণ বাজারে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। এসময় পুলিশ বিজিবির সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধলে উভয় পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষ প্রায় টানা ৩ ঘন্টা চলে। এ সংঘর্ষে এক পর্যায়ে পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকাদক্ষিণ গোলাপগঞ্জ রোডের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নিয়ে আসলে সেখানে পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে তাজ উদ্দিন, সানি আহমদ ও নজমুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসান আহমদ মারা যান।
বিকেল ৩টার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর শহরেও শিক্ষার্থীরা মিছিল করে। এসময় ঢাকাদক্ষিণে নিহত তাজ উদ্দিনের লাশ নিয়ে ঢাকাদক্ষিণ বাজারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে যোগ দিলে মিছিলকারীরা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এসময় আবারো পুলিশ-বিজিবি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এসময় আন্দোলনকারীরা গোলাপগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পুরাতন টিনের ঘর ও নতুন ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতি ভাঙচুর করে। এছাড়াও গোলাপগঞ্জ শাখা ট্রাস্ট ব্যাংকের কয়েকটি গ্লাস ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করা হয়।
এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা গোলাপগঞ্জ মডেল থানায়ও হামলার চেষ্টা করে। এসময় শিক্ষার্থীদের পুলিশ ও বিজিবি রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়লে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুরুতর আহত গৌছ উদ্দিন ও মিনহাজ আহমদকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।