গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ম্যানেজার কেলেংকারির দায় নিচেছ না ব্যাংক

Daily Ajker Sylhet

newsup

২৪ এপ্রি ২০২৫, ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ


গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও  ম্যানেজার কেলেংকারির দায় নিচেছ না ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট

গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও শাহজালাল ব্যাংকের ম্যানেজার কেলেংকারির দায় নিচেছ না ব্যাংক অসহায় গ্রাহকরা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড দোহার, জয়পাড়া শাখা থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি ও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের সুনজর কামনা করেছেন ।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড দোহার, জয়পাড়া শাখার ভুক্তভোগী গ্রাহক নিজেদের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে ৮ জন ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহক ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন ব্যাংকের অসাধু, প্রতারক পরধন লোভী কর্মচারিদের শাস্তি ও আমানতের টাকা দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে ব্যাংকখাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ব্যাংকেই নিতে হবে। নয়তো এর বদনাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর বর্তাবে, সরকারও এর দায় এড়াতে পারবে না।

২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বাসে জমাকৃত টাকা বেহাত হওয়া ভুক্তভোগী গ্রাহকদের ৮ জনের একটি অংশ।

সংবাদ সম্মলনে ভুক্তভোগী ঢাকা দোহারের বিলাশপুরের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কৃষ্ণদেবপুর গ্রামের মৃত হাজী কিনাই মোল্লা, মৃত: জয়গুন বিবি ছেলে
মো. আলাউদ্দিন মোল্লা অভিযোগ করে জানান গত ৩ ফেব্রুয়ারি-২৫ তারিখে তার মালিকানাধীন মেসার্স লাকী এন্টারপ্রাইজের পুরাতন একটি ব্যাংক একাউন্ট (হিসাব নং-৪০১৪১১১০০০০৩৪৪০) সম্পর্কে খোঁজ নিতে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক জয়পাড়া শাখায় গেলে তৎকালিন ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান একাউন্টটি বন্ধ। ম্যানেজার বলেন ২০০০/- (দুই হাজার) টাকা জমা করলেই একাউন্টটি পুনরায় সচল হবে। একাউন্টটিতে ২০০০/-(দুই হাজার) টাকা জমা করলে সাথে সাথে একাউন্টটি সচল হয়ে যায়।

ম্যানেজারের কথা মতে তিনি একই তারিখে ম্যানেজারের রুমে বসে সরল বিশ্বাসে মেসার্স লাকি এন্টারপ্রাইজের সেই একাউন্টে নগদ ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লাখ) ও সোনালী ব্যাংক জয়পাড়া শাখার একটি ৮৭,০০,০০০০/-(সাতাশি লাখ) টাকার চেক জমা প্রদান করি। তখন ম্যানেজার আমাকে মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিট (এমটিডিআর) সম্পর্কে প্রলুব্ধ করেন। তিনি ম্যানেজারেট কথায় বিশ্বাস করে গত ০৫/০২/২০২৫ ইং তারিখে পুনরায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক জয়পাড়া শাখায় গিয়ে ম্যানেজারের রুমে বসে তার হাতে মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিট (এমটিডিআর) করার জন্য ৯০,০০,০০০/-(নব্বই লাখ) টাকার মেসার্স লাকী এন্টারপ্রাইজ এর একটি চেক প্রদান করি, যাহার চেক নং- SJIBL/ACD No-০০০০০৭১)। এর কিছুক্ষণ পর তৎকালিন ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম আমাকে মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিট (এমটিডিআর) এর প্রমাণ স্বরূপ ৯০,০০,০০০/-(নব্বই লাখ) টাকার একটি Mudaraba Term Deposit Reciept দেন (যাহার নং- SJIBL/MTDR No-০৬০২৮০৬)। কাজ শেষ করে আমি বাড়ীতে চলে আসি।

এর প্রায় ১ মাস পর ০২/০৩/২০২৫ তারিখে Mudaraba Term Deposit Reciept (MTDR) টি নগদায়নের জন্য তিনি আবারো শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক জয়পাড়া শাখায় গিয়ে আরো ১০,০০,০০০/- (দশ লাখ) টাকাসহ মোট ১,০০,০০,০০০/-(এক কোটি) টাকার নতুন মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিট (MTDR) করার আবেদন করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার কাছে ৫ দিন সময় নেন।

মো. আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন পরবর্তীতে ঐ শাখার নতুন ম্যানেজার আমাকে একটি চিঠি ইস্যু করেন যে, আমার মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিটটি (যাহার নং-SJIBL/MTDR No-০৬০২৮০৬, তাং- ৫/২/২৫ যথাযথ কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে ইস্যু করেননি, যা উক্ত রিসিটটি জাল। এ কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে যাই। আমি নতুন ম্যানেজারকে অবহিত করি, শাখায় সাবেক ম্যানেজার শহিদুল ইসলামের হাতে আমি চেক ও নগদ দিয়ে দিয়েছিলাম। ব্যাংক ম্যানেজার জালিয়াতি করলে তার দায়ভার ব্যাংককে নিতে হবে। কিন্তু জয়পাড়া শাখা কর্তৃপক্ষ আমার কোন কথায় কর্ণপাত করেনি। এছাড়াও একই শাখায় আবুল হোসেনের ২০,০০,০০০/ (বিশ লক্ষ টাকা), মাহমুদা আক্তার লাকি ৩০,০০,০০০/ (ত্রিশ লক্ষ টাকা, বোরহানুল হক, ৩০,০০,০০০/ (ত্রিশ লক্ষ টাকা), জামাল আহম্মেদ ১৫,০০,০০০ (পনের লক্ষ টাকা), রোকছানা আক্তার, ৪৫,০০,০০০/ (পয়তাল্লিশ লক্ষ টাকা), ফাতেমা আক্তারের ২টি ডিপজিট থেকে ৩২,০০,০০০/ (বত্রিশ লক্ষ টাকা) জাল মানি রিসিট দিয়ে প্রতারনা করেন। বিষয়টি শাহজালাল ইসলামিক ব্যাংকের পিএলসি জয়পাড়া শাখার দোহার ঢাকার আব্দুল রাকিব তালুকদার, শাহজালাল ইসলামিক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজার, দোহার থানায় এজাহার দায়ের করেন। সেই শাখা থেকে সাবেক ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম গ্রাহকদের কাছে থেকে প্রায় কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পলাতক রয়েছে।

গত ০৪/০৩/২০২৫ তারিখে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক জয়পাড়া শাখার ফাস্ট্য এক্সিকিউটিভ অফিসার আব্দুল রাকিব তালুকদার জয়পাড়া শাখার সাবেক ম্যানেজার শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দোহার থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। সেখানে তিনি সাবেক ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম কর্তৃক আমাকে দেওয়ার মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিটটি জাল এবং ম্যানেজার আমার ৯০,০০,০০০/-(নব্বই লাখ) টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে থানায় দায়েরকৃত এজাহারটি দুদক, ঢাকা-২ এর উপ-পরিচালক বরাবর পাঠানো হলে দুদক এখন তা তদন্ত করছেন। এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, শাখাটির সাবেক ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বিগত ৯ ফেব্রুয়ারি-২৫ইং তারিখ হতে ১৮ফেব্রুয়ারি-২৫ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে থাকার পর অদ্যাবধি কর্মস্থলে যোগদান করেননি।

পরে বিগত ২০/০২/২০২৫ ইং তারিখে ব্যাংকের মানব সম্পদ বিভাগ থেকে অনুপস্থিত এর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগের চেষ্টা সত্ত্বেও অধ্যাবধি কর্মস্থলে যোগদান করেননি এবং ব্যাংকের সাথে কোনরূপ যোগাযোগ করেনি। এহেন অনুপস্থিতি এবং উল্লেখিত সৃজিত জাল মানি রিসিট ছাড়াও নানাবিদ আর্থিক কেলেংকারীর সাথে সাবেক ম্যানেজার শহিদুল ইসলামের সম্পৃক্ততা রয়েছে মর্মে তাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে বলে এজাহারে উল্লেখ্য করা হয়।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক জয়পাড়া শাখার বর্তমান ম্যানেজার মিজানুর রহমানও সহযোগিতা করছেন না অভিযোগ করেন তারা।

ভুক্তভোগীরা আরো অভিযোগ করেন শাখার সিসিটিভিতে সেই ঘটনার সকল প্রমানাদি থাকার পরও তিনি কোন ব্যবস্থা নিছেন না ।

তারা বিগত ১৮/০৩/২০২৫ তারিখে ব্যাংকের ০৩/০২/২০২৫ হইতে ০৬/০২/২০২৫ ইং তারিখের সিসিটিভির ফুটেজ সরবরাহ ও সংরক্ষণের জন্য আবেদন করেন।
কিন্তু বর্তমান ম্যানেজার মিজানুর রহমান সিসিটিভির ফুটেজ তাদের সরবরাহ করবে না মর্মে জানান। এতে তাদের সন্দেহ হচ্ছে বর্তমান ম্যানেজারসহ ব্যাংকের আরোও কর্মকর্তা জালজালিয়াত কেলেংকারির সাথে জড়িত থাকতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বেসরকারি তফসিলভুক্ত ব্যাংক সমূহের টাকা যদি ম্যানেজার/কর্মকর্তা আত্মত্মসাৎ করেন তার দায়ভার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বহণ করবে। কিন্তু শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের কোন সহযোগিতাই করছেন না বলে অভিযোগ করা হয় ।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক জয়পাড়া শাখার সাবেক ম্যানেজার শহিদুল ইসলামের অনৈতিক ও জালিয়াতির কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা আর্থিকভাবে বিপন্ন হয়ে যাচেছন ।

শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক জয়পাড়া শাখায়, এফ.ডি.আর জালিয়াতি, ভিক্টিমেরদে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবুল হোসেন, মাহমুদা আক্তার লাকি ,বোরহানুল হক, জামাল আহমেদ, রোকসানা আক্তার,ফাতেমা আক্তার,ফাতেমা আক্তার প্রমুখ । ডেস্ক জেবি

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।