ডেস্ক রিপোর্ট
সিরিয়ার শরণার্থীসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী আগমনের দশ বছরের মাথায় অভিবাসন বিষয়ে ইইউর নীতি কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে৷
ইইউর অভিবাসন কমিশনার মাগনুস ব্রুনার মনে করেন, গত দশ বছরে ইউরোপ যা শিখেছে তার প্রতিফলনের সময় এখনই৷ আশ্রয়প্রার্থীদের ক্রমাগত আগমনের মুখে ভবিষ্যতে কী হতে পারে সেই বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিতে চান তিনি৷
ইউরোপীয় নিউজরুম (ইএনআর)-কে দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘সীমান্ত কে অতিক্রম করতে পারবেন আর কে করতে পারবেন না সেই সিদ্ধান্ত নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷’’
আশ্রয়প্রার্থীদের আগমনের বিষয়টিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে তিনি যে সব অভিবাসীর আশ্রয় পাওয়ার আইনি অধিকার নেই তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন৷ তাছাড়া ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর সাথে সহযোগিতার উপরও জোর দেন তিনি৷
ব্রুনার বলেন অভিবাসন বিষয়ে গত দশ বছরে ইউরোপ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং অসাধারণ দায়িত্ব পালন করেছে৷ এই সময়ের প্রতিবন্ধকতাগুলো পরিস্কারভাবেই আমাদের আশ্রয়প্রদান ব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলেছে৷ আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি৷ আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় যে দিকটি আমরা শিখতে পেরেছি তা হলো, অভিবাসনের বিষয়টি ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে একসাথে সামলাতে হবে৷ দশ বছরের আলোচনার পর আমরা একটি আধুনিক অভিবাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে যাচ্ছি, যার মাধ্যমে কে ইউরোপের আসতে পারবেন আর কে পারবেন না সেই বিষয়টির উপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাবে৷
এখনো আমরা পুরোনো আইনি ব্যবস্থা-ই প্রয়োগ করছি৷ ২০২৬ সালের জুনে প্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম কার্যকর করা, প্রত্যাবাসন বিষয়ে আমাদের অন্যান্য প্রস্তাবনা এবং যেসব পথ দিয়ে অনিয়মিত অভিবাসীরা আসছেন সেসব তৃতীয় দেশগুলোর সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে৷ যে জায়গাগুলোতে আমরা আমাদের সহযোগিতা বাড়িয়েছি সেখানে আমরা অনিয়মিত পথে আগমন অনেক কমে আসতে দেখেছি৷ যেমন বলকান রুট ২০২২ সালে পর ৯৫ ভাগ এবং মধ্য ভূমধ্যসাগর পথে ৬০ ভাগ কমে এসেছে৷
তিনি বলেন আমাদের বহিঃসীমান্তের কথা বলতে গেলে, এখানে কোনাে যদি, কিন্তুু নেই৷ মানবিক এবং মৌলিক অধিকার অবশ্যই রক্ষা করতে হবে৷ এটিই আমাদেরকে ইউরোপিয়ান করে তুলেছে৷ বহিঃসীমান্তে ট্যাকনিক্যাল এবং অপরাশেনাল কাজে সহায়তা দিয়ে ফ্রন্টেক্স সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহযোগিতা করে থাকে৷ আমরা ফ্রন্টেক্সের ম্যান্ডেট বাড়াতে কাজ করব৷
ব্রুনার আরও বলেন গঠনগত, টেকসই পরিবর্তন আনতে সহযোগী দেশগুলোর সাথে চুক্তিসহ দ্বিমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে কমিশন৷ আমার এটি নিশ্চিত করছি যে, আশ্রয়প্রদান, ফেরত পাঠানো এবং ইউরোপের বাইরের দেশগুলো থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আগমনের পর বিষয়টিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করাসহ ইত্যাদি বিষয়ে একটি সঠিক আইনি ফ্রেমওয়ার্ক বলবৎ আছে৷ একই সাথে আমরা জানি যে, অভিবাসন প্রক্রিয়া আমাদের সীমান্ত থেকে শুরু হয় না কিংবা এখানে এসে শেষ হয় না৷ আর তাই অনিয়মিত পথে যে দেশগুলো থেকে যাত্রা করে সেই দেশগুলোর সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতির সামলানো যেতে পারে৷
ব্রুনার জানান অভিবাসন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করা যে, ইউরোপে যা হচ্ছে তার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷ এজন্য অবশ্যই ইউরোপিয়ান পর্যায়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বচ্ছ এবং শক্তিশালীভাবে বিষয়টিকে সামলাতে হবে৷ এর মানে হলো, কে ইউরোপে প্রবেশ করতে পারবেন আর কে পারবেন না, কাদের ইউরোপ থেকে চলে যেতে হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট নীতি প্রণয়ন করা৷ জনগণ ইউরোপের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং জাতীয় পর্যায়ের সরকার হিসাবে আমাদের কাছে যা প্রত্যাশা করে তা হলো, যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা হচ্ছি, তা সমাধানের সামর্থ্য আমাদের রয়েছে৷ আমাদেরকে জনগণের উদ্বেগের বিষয়টি শুনতে হবে এবং এই উদ্বেগের সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ করতে হবে৷ কমিশন, সদস্য রাষ্ট্র এবং পার্লামেন্ট–সবাই মিলে আমাদেরকে কাজ করতে হবে৷
তথ্যসুত্রঃ ইনফো মাইগ্রেন্টস
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।