ওয়াশিংটনে ট্রাম্প–কার্নি বৈঠক: শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝেও আশাবাদী কানাডা – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৯:৪৩, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

ওয়াশিংটনে ট্রাম্প–কার্নি বৈঠক: শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝেও আশাবাদী কানাডা

newsup
প্রকাশিত অক্টোবর ৭, ২০২৫
ওয়াশিংটনে ট্রাম্প–কার্নি বৈঠক: শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝেও আশাবাদী কানাডা

Manual3 Ad Code

ডেস্ক রিপোর্ট

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকে বসছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়—দুই দেশের মধ্যে শুল্কনীতি ও বাণিজ্য সম্পর্ক। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, বড় কোনো ছাড় বা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আশা করা যাচ্ছে না।

Manual7 Ad Code

কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম একক বাণিজ্যিক অংশীদার (মেক্সিকোর পরেই) এবং মার্কিন পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের বছর দুই দেশের মধ্যে ৭৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য আদান-প্রদান হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের জনশুমারি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কানাডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৪৯.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং রপ্তানি করেছে ৪১২.৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বর্তমানে কানাডার মোট রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রমুখী, এবং দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের বৃহত্তম সরবরাহকারী।

ট্রাম্প প্রশাসন কানাডার রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ সাধারণ শুল্ক আরোপ করেছে। তবে উত্তর আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তি (USMCA) অনুযায়ী ‘উত্তর আমেরিকান পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃত পণ্যগুলো এই শুল্কের আওতার বাইরে রয়েছে। তবুও ট্রাম্প কানাডার গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত—যেমন গাড়ি, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও কাঠের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন, যা “জাতীয় নিরাপত্তা”র অজুহাতে ন্যায্যতা দেওয়া হয়েছে।

Manual4 Ad Code

এই শুল্কের প্রভাব ইতোমধ্যে স্পষ্ট। জেনারেল মোটরস অন্টারিওর ওশাওয়ায় তাদের পিকআপ ট্রাক কারখানায় ২,০০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছে, এবং স্টেলান্টিস ব্রাম্পটনের কারখানায় নতুন জীপ মডেল তৈরির কাজ স্থগিত রেখেছে। শুল্কের আঘাত সামলাতে কানাডা ১০ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের (প্রায় ৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা বরাদ্দ করেছে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের জন্য।

এদিকে দেশে ফিরে কার্নিকে এখন রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পলিয়েভ ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় কার্নির অদক্ষতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। সোমবার তিনি হোয়াইট হাউস বৈঠকের আগে কার্নিকে একটি প্রকাশ্য চিঠিতে লিখেছেন, “আর কোনো পরাজয় নয়—এখন সময় এসেছে প্রতিশ্রুত সাফল্য অর্জনের।” যদিও চিঠিতে কিছু তথ্যগত ভুল ছিল, তবুও এটি রাজনৈতিকভাবে কারনির ওপর চাপ বাড়িয়েছে।

অন্যদিকে অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ডও কার্নিকে আরও কঠোর অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যদি কার্নি কোনো চুক্তি করতে না পারেন, তাহলে আমাদের পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে। তুমি প্রতিদিন এক বুলির হাতে মার খেয়ে বসে থাকতে পারো না।”

সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কানাডা–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ আসা ম্যাকার্চারের মতে, বৈঠক সফল হবে যদি ট্রাম্প কানাডার প্রচেষ্টার কোনো স্বীকৃতি দেন। তিনি বলেন, “কার্নি সম্প্রতি নতুন প্রতিরক্ষা সংস্থা গঠন করেছেন এবং সামরিক ব্যয়ও বাড়িয়েছেন। যদি ট্রাম্প অন্তত কিছু শিল্পক্ষেত্রে, বিশেষত অটোসেক্টরে, শুল্ক কমান, তবে সেটি দারুণ সাফল্য হবে।”

বিনিয়োগকারীরাও বৈঠকের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছেন। মঙ্গলবার কানাডার প্রধান স্টক সূচক প্রায় স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল—সাম্প্রতিক রেকর্ড উত্থানের পর বাজার সামান্য বিরতি নিচ্ছে। স্প্রাং ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রেসিডেন্ট মাইকেল স্প্রাং বলেন, “আমাদের মনোযোগ এখন কার্নি–ট্রাম্প বৈঠকের দিকেই, তবে বাজার বড় কোনো অগ্রগতি প্রত্যাশা করছে না।”

Manual1 Ad Code

আগামী বছর উত্তর আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তি (USMCA) পুনর্মূল্যায়নের কথা রয়েছে, যার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সম্প্রতি বলেছেন, ভবিষ্যতের আলোচনা “প্রায় দ্বিপাক্ষিক” হতে পারে, কারণ কানাডা ও মেক্সিকোর অবস্থানে পার্থক্য আছে। তবে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবামের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে কারনি স্পষ্ট করেছেন—কানাডা মেক্সিকোকে বাদ দিয়ে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোনো ধাঁচের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে ফিরতে চায় না।

Manual8 Ad Code

কারনির দপ্তর বৈঠকটিকে একটি “কর্মসভা” (working meeting) হিসেবে বর্ণনা করেছে। ওয়াশিংটনে তিনি কার সঙ্গে আরও বৈঠক করবেন, তা স্পষ্ট না হলেও, তিনি বুধবার সকাল পর্যন্ত শহরে অবস্থান করবেন। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর মতে, এই বৈঠক থেকে বড় কোনো ঘোষণা আসার সম্ভাবনা কম, তবে এটি ভবিষ্যৎ আলোচনার পথ খুলে দিতে পারে।

কানাডার অটোমোটিভ পার্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফ্লাভিও ভোল্পে বলেন, “আমি ওয়াশিংটনে এমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখছি না যা কানাডার স্বার্থে তাৎক্ষণিকভাবে সহায়ক হবে। তবে এটি সদিচ্ছার প্রতিফলন হতে পারে, যা ভবিষ্যৎ আলোচনার একটি ইতিবাচক সূচনা।”

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code