মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে মশাকেই যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, ভোর ৫:২৮, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে মশাকেই যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে

প্রকাশিত মার্চ ৬, ২০১৮
মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে মশাকেই যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে

মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে সিঙ্গাপুরে৷ এর দ্বিতীয় পর্বে আরও মশা ছাড়ার পরিকল্পনা করছে দেশটি৷

প্রকল্পের নাম ‘প্রোজেক্ট ওলবাকিয়া’৷ ওলবাকিয়া হচ্ছে একটি ব্যাকটেরিয়া৷ ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য দায়ী এডিস এজিপ্টি মশার মধ্যে এই ওলবাকিয়াকে ঢুকিয়ে দেয়া হবে৷ ফলে ঐ মশাগুলো বন্ধ্যা হয়ে যাবে৷ এই অবস্থায় সেগুলোকে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া হবে৷

উদ্দেশ্য হচ্ছে, ওলবাকিয়া সমৃদ্ধ পুরুষ এডিস এজিপ্টি মশা যখন নারী এডিস এজিপ্টি মশার সঙ্গে মিলিত হবে, তখন যে ডিম উৎপাদিত হবে, তা নিষিক্ত হবে না৷ ফলে এডিস মশার সংখ্যা আর বাড়বে না৷

সিঙ্গাপুরের ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি’এনইএ সোমবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে৷ এপ্রিল থেকে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে৷

ওলবাকিয়া সমৃদ্ধ মশা দিয়ে এডিসকে নিধন করার এটিই প্রথম উদ্যোগ নয়৷ এর আগে গতমাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রোগবাহী এডিস এজিপ্টির সংখ্যা কমাতে ওলবাকিয়াবাহী বন্ধ্যা মশা ছেড়েছিলেন৷ তারও আগে গত আগস্ট মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জানিরোতেও একই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল৷

এডিস এজিপ্টি মশার কারণে প্রতিবছর বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশের দুই কোটিরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন৷ তবে শুধু ডেঙ্গু নয়, জিকা, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি রোগের জন্যও দায়ী এডিস এজিপ্টি মশা৷

ডেঙ্গুর কারণে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ও গাঁটে ব্যথা, ত্বকে র‍্যাশ ইত্যাদি হয়৷ কখনও কখনও তা প্রাণঘাতীও হতে পারে৷

তাছাড়া জিকা ভাইরাসের কারণে নবজাতক শিশুর জন্মের সময় মারাত্মক ত্রুটি দেখা দেয়৷ ২০১৬ সালে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেই সময় কিছুদিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল৷

২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়েছিল৷ এরপর গতবছর চিকুনগুনিয়া রোগে ভুগেছিলেন অনেকে৷ এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকলেও রোগীর কষ্ট হয় বেশি৷

মশাবাহিত রোগ ‘চিকুনগুনিয়া জ্বর’
এডিস অ্যালবোপিকটাস ও এডিস এজিপটি নামক মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে থাকে৷ তবে কেবল নারী এডিস মশাই এই জ্বরের জন্য দায়ী৷

লক্ষণ
মশার কামড় খাওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে শরীরে এই রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে৷ এক্ষেত্রে মাথাব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত ও পায়ের গিঁটে এবং আঙুলের গিঁটে ব্যথা, ফোসকা পড়া ও শরীর বেঁকে যেতে পারে৷ জ্বর উঠতে পারে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত৷ থাকতে পারে ২ থেকে ১২ দিন৷ তবে সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে৷

ডেঙ্গু নয়
অনেকে চিকুনগুনিয়া জ্বরকে ডেঙ্গু জ্বর মনে করতে পারেন৷ কারণ এদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে৷ তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার মূল পার্থক্য হলো, এই জ্বরে হাড়ের জোড়াগুলো ফুলে যায়, ডেঙ্গু জ্বরে যেটা হয় না৷

চিকিৎসা
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা যায়৷ এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তাই চিকুনগুনিয়া সারাতে সাধারণ জ্বরের চিকিত্সা নিলেই চলবে৷ বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাবার ও প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে৷ তবে চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রতিরোধে এডিস মশার প্রজনন বন্ধ করতে হবে৷

ঢাকায় চিকুনগুনিয়া
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর গত বছর এই রোগের উপর একটি সমীক্ষা চালায়৷ এ সময় ঢাকার মোট ৬০১ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ এদের মধ্যে ২০৭ জনই চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় জানা যায়৷ সে হিসেবে ঢাকার প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত৷

ইতিহাস
১৯৫২-৫৩ সালে আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় প্রথম এই রোগের আবির্ভাব ঘটে৷ বাংলাদেশে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঢাকার দোহার ও কেরানীগঞ্জে৷ পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে নতুন করে পাবনার সাঁথিয়ায় আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ আর ঢাকায় প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালের আগস্টে৷

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।