ডেস্ক রির্পোট::মৌলভীবাজার-২ আসনে গত ২২ বছরে জয় পায়নি আওয়ামীলীগ-বিএনপি। বরং এই আসনে একবার ধানের শীষ ৫ হাজার ভোট পেয়ে এবং নৌকা ২ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছে।
মৌলভীবাজার-২ আসন সারা বাংলাদেশে আলোচিত। এখানে কেন্দ্রের মনোনীত প্রার্থীকে তৃনমূল গ্রহন করেনা যদি তাদের পছন্দ না হয়। স্রোতের বিপক্ষে গিয়েও পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয় এমনকি নিজ নিজ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েও । দলীয় প্রতিক থেকে এখানে প্রার্থীর ব্যাক্তিগত ইমেজ প্রাধান্য পায়। ২২ বছরে ২ বার নির্বাচিত হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। বড় দলগুলোর কেন্দ্র মনোনিত প্রার্থীকে জামানত হারাতে হয়েছে ২ বার। গত ২২ বছরে আওয়ামীলীগ বিএনপি কেউই জয়ি হতে পারেনি। এখানে একই প্রার্থীর একবার ভুমিধস জয়ের পরের বছরই ভোটাদের একেবারে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় জামানত হারানোর রেকর্ডও আছে।
১৯৯১ সালে বিএনপি যখন সরকার গঠন করে তখন সারা দেশের শ্রোত ছিল ধানের শীষে কিন্তু এই আসনে প্রায় ৫ হাজারের কম ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছে ধানের শীষের প্রার্থী । ২০০৮ সালে সারেদেশ ভূমিধস বিজয় পায় আওয়ামীলীগ কিন্তু মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রায় ২ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছিল অথচ মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার ভোট ব্যংক খ্যাত চা শ্রমিক এবং সংখ্যালঘুদের ভোট রয়েছে।
সর্বশেষ বড়দলের মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগের সুলতান মনসুর নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ কেটে গেছে দীর্ঘ সময় কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও মৌলভীবাজার ২ আসনে নৌকা -ধানের শীষের জয়ের দেখা মেলিনি।
২০০১ সালে এই আসনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ না পেয়ে দলের বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেন এম.এম শাহীন। ১৯৯১ সালে যে বিএনপি জামানত হারায় ২০০১ এর নির্বাচনে সে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সুলতান মনসুরকে হারিয়ে ফুটবল প্রতিক নিয়ে জয়ী হন সে নির্বাচনেও জামানাত হারায় ধানের শীষ। ২০০৮ এর নির্বাচনে মনোয়ন বঞ্চিত হন সুলতান মনসুর, সে নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হন জাতীয় পার্টীর নবাব আলী আব্বাস। সে নির্বাচনে জয় পায় জাতীয় পার্টি অথচ ১৯৯৬ এর জয়ী নৌকা এ নির্বাচনে পায় ২ হাজার ভোট অবশ্য সে নির্বাচনে তৃণমূলের জনপ্রিয় প্রার্থী সুলতান মনসুর জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামেন। ২০১৪ তে বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করে এই আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পায় জাতীয় পার্টি কিন্তু মহাজোটের সিন্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামীলীগের আব্দুল মতিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয় লাভ করে চমক সৃষ্টি করেন। ২০০৮ এ ১ লাখ ৩৫ হাজার ভোট পেয়ে যে লাঙ্গল জয় লাভ করে নৌকা পায় ২ হাজার ভোট সে লাঙ্গল ২০১৪ তে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হারে ।
শুধু তাই নয় এই আসনে ১৯৮৬ সালে মুসলিম লীগের ইউসুফ জিতেছিলেন বিপুল ভোটে কিন্তু এর পরের নির্বাচনে সে একই প্রার্থী পান ১ হাজারের কম ভোট। ১৯৯১ সালে যে বিএনপি ৫ হাজারের কম ভোট পেয়ে জামানত হারায় ২০০১ এ বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হন শাহীন। ১৯৯৬ এ নৌকা জয়ী হয় ২০০১ এ হয় দ্বিতীয় কিন্তু ২০০৮ এ নৌকার প্রার্থী জামানত হারায় ২ হাজার ভোট পেয়ে। ২০০৮ জাতীয় পার্টি ১ লাখ ৩৫ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয় কিন্তু ২০১৪ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পার্থী মহাজোটের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেও হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মতিনের কাছে।
এবার ঘটেছে আরো নাটকীয় ঘটনা, আওমীলীগের সুলতান মনসুর ধানের শীষ নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন অন্যদিকে বিএনপির শাহিন বিকল্পধারায় যোগ দিয়ে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন তিনি নির্বাচন করবেন নৌকা নিয়ে।
ফলে এই বছর আওয়ামীলীগ- বিএনপির জোটের প্রার্থী থাকলেও নেই দলীয় প্রার্থী। তবে একাদশ নির্বাচনে ওয়ামীলীগ বিএনপি এখানে না থাকলেও মুল লড়াই হবে সুলতানের ধান এবং শাহীনের নৌকায় ফলে বড় দুই দল না থাকলেও ২২ বছর পর তাদের কোন একটি প্রতিকের জয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে দলীয় নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এই আসনে বড় কোন দল থেকে জয়ী সর্বশেষ প্রার্থী।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।