নারীর শিক্ষা প্রসারে অনন্য এক স্কুলের গল্প

Daily Ajker Sylhet

২৮ ফেব্রু ২০২০, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ


নারীর শিক্ষা প্রসারে অনন্য এক স্কুলের গল্প

সকাল ৯টা বাজতেই এক এক করে, আবার কখনো দলবেঁধে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে সামাজিক সব বাধা অতিক্রম করে তারা এখন নিয়মিত স্কুলে আসে। ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বেশ কয়টি গ্রামের মেয়েরা নির্বিঘ্নে এখন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা গ্রামে এ এফ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে, টিফিন পিরিয়ডে বা ছুটির সময় এমন মনোরম দৃশ্য প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে।

শুধু শিক্ষার আলো পেতে প্রতিদিন ২-৫ কিলোমিটার দূর থেকে সাইকেলে যাতায়াত করে মেয়েরা। বিশেষ করে কাফুরা, মুন্সিবাজার, পশরা, আলিয়াবাদ, গদাধরডাঙ্গি, বিলমামুদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে।

১৯৬৯ সালে বিদ্যালয়টি অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৩০ জন। যার মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রী। শিক্ষক রয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে দাতব্য প্রতিষ্ঠান এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন নিয়োগকৃত সার্বক্ষণিক শিক্ষক ৬ জন।

school-cover

এক সময় স্কুলে ছাত্রীদের উপস্থিতি বেশ কম ছিল। দূরত্ব আর সামাজিক অবস্থার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেয়ে নিয়মিত স্কুলে অনুপস্থিত থাকত। এ পরিস্থিতিকে জয় করতে এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মেয়েদের বাইসাইকেল চালানো প্রশিক্ষণ শেষে বিনা মূল্যে সাইকেল দেওয়া হয়।

 

এরই ধারাবাহিকতায় মেয়েদের খালি হাতে আত্মরক্ষা কৌশল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এসব প্রশিক্ষণের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে মেয়েদের জন্য দেয়াল ঘেরা আলাদা মাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি ব্যাচে নিয়মিত দু-তিন মাসে ২০-২৫ জন মেয়েকে প্রশিক্ষণের পরই ফাউন্ডেশনের খরচে বাইসাইকেল কিনে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ৬৯ জন ছাত্রী বিনা মূল্যে বাইসাইকেল পেয়েছে।

আয়েশা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমার বাড়ি স্কুল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি। প্রথম প্রথম সমস্যা হতো, কিন্তু এখন কোনো সমস্যা হয় না।’

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুই আক্তার বলে, ‘আগে হেঁটে স্কুলে আসতে অনেক সময় লাগত। তাই নিয়মিত স্কুলে আসা হতো না। এখন বাইসাইকেল নিয়ে আসার কারণে অনেক সময় বেঁচে যায়। টিফিনের সময় বাড়ি গিয়ে খেয়ে আবার সহজেই স্কুলে আসতে পারি। ম্যানেজিং কমিটি তৎপর থাকায় রাস্তা-ঘাটে কেউ উত্যক্ত করার সাহস পায় না।’

school-in-(1)

অভিভাবকরা প্রথমদিকে কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও এখন মেয়েদের সাইকেল চালানো খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, এতে নারী শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে। কেটে যাচ্ছে অপ্রয়োজনীয় জড়তা বা সংস্কার।

বাইসাইকেল প্রশিক্ষক তৃষ্ণা বিশ্বাস বলেন, ‘মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে। আমরা নিয়মিত এদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাছাড়া এ স্কুলে মেয়েদের খেলাধুলা, শারীরিক শিক্ষা, গার্লস গাইডসহ অন্যান্য সহশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা হয়।’

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।