আমেরিকাকে মোকাবিলায় রাশিয়া ত্ত চীনের জোট

Daily Ajker Sylhet

১১ মে ২০২০, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ


আমেরিকাকে মোকাবিলায় রাশিয়া ত্ত চীনের জোট

ডেস্ক রিপোট, ঢাকা: ২০১৪ সালে শীতল যুদ্ধের ঢঙের ভূরাজনীতি শুরু হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আগ্রাসন ও ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের কারণে পশ্চিম ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর বড়সড় অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে। এর ফলে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে চিড় ধরেছে। আর ক্রেমলিনও চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়া কি এই জনগণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে প্রকৃত অর্থেই কোনো জোট গঠন করতে পারবে।
প্রাথমিকভাবে মনে হয়, এটা সম্ভব। হ্যাঁ, প্রথাগত ক্ষমতার ভারসাম্যের খেলায় ক্ষমতার সম্পদের ক্ষেত্রে মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে এই রুশ-চীন অংশীদারত্ব দাঁড়াবে।
আরও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, এরূপ অংশীদারত্বের ঐতিহাসিক নজিরও রয়েছে। ১৯৫০-এর দশকে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৭২ সালে চীনের ব্যাপারে মুক্ত অবস্থান নিলে পাশা ঘুরে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল, সেটা মোকাবিলায় তারা একত্র হয়।
পরবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিন-চীন কার্যত (বিধিগতভাবে না হলেও) জোট শেষ হয়ে যায়, আর চীন-রাশিয়ার মধ্যে গালাগাল শুরু হয়। ১৯৯২ সালে দেশ দুটি ঘোষণা করে, তারা একটি গঠনমূলক অংশীদারত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এরপর ১৯৯৬ সালে তারা একটি কৌশলগত অংশীদারত্বের দিকে অগ্রসর হয়। আর ২০০১ সালে তারা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একে অন্যকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করেছে। অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও তারা একই অবস্থান নিয়েছে। তারা নিজেদের নীতিগত অবস্থান সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক কাঠামো ব্যবহার করেছে। যেমন, প্রধান প্রধান উদীয়মান দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস (ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে) ও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের সঙ্গে) গঠনের মাধ্যমে তারা এটা করেছে। আর ভ্লাদিমির পুতিন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি ভালো কাজের সম্পর্ক গঠন করতে পেরেছেন। তাঁদের ভিত্তি দুটি: মার্কিন আদর্শ ও আধিপত্য মোকাবিলা ও অভিন্ন অভ্যন্তরীণ অনুদারতা।
অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত বছর ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের পরপরই রাশিয়া চীনের সঙ্গে ৩০ বছরের জন্য ৪০০ বিলিয়ন ডলারের একটি গ্যাস চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফলে ২০১৯ সাল থেকে রাশিয়া ৩০ বছর বার্ষিক ৩৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করবে। রাশিয়ার মহিরুহ রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গাজপ্রমের সঙ্গে চীনের ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের এই চুক্তির আওতায় চীনের হেইলঙগিজাঙ প্রদেশ পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ মাইল লম্বা পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে (যেখানে কয়েক বছর আগে দেশ দুটি প্রায় যুদ্ধে লিপ্ত হতে বসেছিল)। প্রকৃত মূল্য গোপন রাখা হলেও ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া এই চুক্তিটি করার জন্য অনেক ছাড় দিয়েছে। এর আগে দশকব্যাপী দামাদামিও হয়েছে।
তা ছাড়া, এই নভেম্বরে গাজপ্রম পশ্চিম সাইবেরিয়া থেকে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে নতুন আরেকটি পাইপলাইনের মাধ্যমে ৩০ বছরের জন্য আরও ৩০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে একটি কাঠামোগত ঐকমত্যের ঘোষণা দিয়েছে। এই পরিকল্পিত পূর্ব ও পশ্চিম পাইপলাইন নির্মাণ শেষ হলে রাশিয়া চীনে বার্ষিক ৬৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করবে। ফলে সে যে বর্তমানে জার্মানিকে বছরে ৪০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে, তা এর কাছে হার মানবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।