পিপিই তৈরি করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় গার্মেন্টস খাত - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ১:৩৯, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

পিপিই তৈরি করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় গার্মেন্টস খাত

ADMIN, USA
প্রকাশিত জুন ২৭, ২০২০
পিপিই তৈরি করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় গার্মেন্টস খাত

ডেস্ক রিপোর্ট, ইউএসঃ করোনা ভাইরাসের প্রকোপে পশ্চিমা অনেক ব্রান্ড বাংলাদেশের গার্মেন্টসগুলো থেকে অর্ডার বাতিল করেছে। এতে বিপাকে পড়েছে দেশের অনেক পোশাক শ্রমিক। তবে বেশ কিছু পোশাক কারখানা করোনাকালে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেক্টশন ইক্যুইপমেন্ট) তৈরি করে এই সংকটময় কালে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন মাস্ক, গ্লোভস, গাউনের মতো পিপিই তৈরি করে রফতানি করছে বাংলাদেশের বহু পোশাক কারখানা।

ঢাকার উত্তরে অবস্থিত সাভার। সেখানকার একটি পোশাক কারখানায় পোশাকের পরিবর্তে এখন তৈরি করা হচ্ছে পিপিই। জানা গেছে, হাজার হাজার শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা করে সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে যাচ্ছে পিপিই তৈরির জন্য। পোশাক কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সাদা-নীল গাউনের স্তূপের পাশে বসে সেলাই মেশিন চালিয়ে যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা।

জারা, ক্যালভিন ক্লেইন এবং টমি হিলফিগারের মতো ব্রান্ডের সরবরাহকারী বাংলাদেশের কোম্পানি বেক্সিমকো। কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদ নাভেদ হুসাইন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে আমরা সুযোগটি দেখতে পারি এবং দ্রুত আমরা পিপিই উৎপাদনের কাজ শুরু করি।

 

জানা গেছে, বেক্সিমকো গত মাসে মার্কিন ব্রান্ড হ্যান্সের কাছে ৬৫ লাখ মেডিক্যাল গাউন রফতানি করেছে। এছাড়া চলতি বছর ২৫ কোটি ডলার মূল্যের পিপিই রফতানি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কোম্পানিটি।

এ নিয়ে সাইদ নাভেদ হুসাইন বলেন, আমাদের ৪০ হাজার কর্মীর ৬০ শতাংশ এখন পিপিই তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। করোনা পুরো বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।

সুমাইয়া আখতার এবং রুবেল মিয়া নামের দুই পোশাক শ্রমিক পশ্চিমা ব্রান্ডের পোশাকের অর্ডার বাতিলের পর তাদের কাজ হারিয়েছেন। তবে তারা এখন পিপিই তৈরির কারখানায় নতুন কাজ পেয়েছেন।

৩৪ বছর বয়সী সুমাইয়া আখতার বলেন, আমি সৌভাগ্যবান যে এই কারখানায় কাজ করতে পারছি। অনেকেই কাজ হারিয়ে এখন দুর্ভোগের মধ্যে আছেন। আমিতো আমার পরিবার এবং বাবা-মাকে খাওয়াতে পারছি।

চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তৈরি পোশাক রফতানিকারক বাংলাদেশ। গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যহারে তৈরি পোশাক রফতানি করে আসছে। বিশ্বের নামীদামী এইচএন্ডএম এবং প্রাইমার্কের মতো ব্রান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করতো।

করোনা বৈশ্বিক মহামারি শুরুর আগে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রফতানি করে বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার করতো। দেশের অন্তত ৮০ শতাংশ রফতানি আয় তৈরি পোশাক খাত থেকে আসতো। আর এই তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী শ্রমিক এবং তারা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের।

করোনা মহামারি শুরু হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন দেয়া শুরু হয়। গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের সাড়ে ৪ হাজার পোশাক কারখানায় হঠাৎ করে ৮৪ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়ে যায়।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রায় ৩২ লাখ ডলারের অর্ডার বাতিল অথবা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

আর এ কারণে বাংলাদেশের বহু পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ হারিয়েছেন হাজার হাজার কর্মী। এর প্রতিবাদে এই করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই বাংলাদেশে ওই সব পোশাক শ্রমিকরা আন্দোলনও করেছেন। অর্ডারের বিষয়ে বিজিএমইএ’র মুখপাত্র খান মনিরুল আলম শুভ বলেন, কিছু অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় সেগুলো অনেক কম। জুনে আমাদের কারখানাগুলো ৫৫ শতাংশ ধারণক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে।

বাংলাদেশেও করোনার প্রকোপ থাকায় পোশাক শ্রমিকদের কাজের সময় সামাজিক দূরত্ব এবং ফেস মাস্ক ব্যবহার করে কাজ করতে হচ্ছে। এ নিয়ে একটি পোশাক কারখানার মালিক জানান, দূরত্ব মানা কারখানাগুলোতে প্রায় অসম্ভব কারণ কাজের ধরণটাই এমন।

বিজিএমইএ বলছে, পিপিই’র চাহিদার কারণে অনেক পোশাক কারখানার মালিকরা এখন আশাবাদী হচ্ছে। সংগঠনটির মুখপাত্র শুভ বলেন, কমপক্ষে ৩০টি কারখানা করোনা মহামারির শুরু থেকেই পিপিই উৎপাদন করছে। আর এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

বাংলাদেশে অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা সীমিত আকারে পিপিই তৈরি করতো কিন্তু তারাও পশ্চিমা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এখন পুরোদমে সুরক্ষা উপকরণ তৈরির কাজে নেমে পড়েছে।

ফকির এ্যাপারেলস’র পরিচালক মশিউর রহমান শোম্মো বলেন, মাত্র তিন দিন আগে। আমরা দুই কোটি সার্জিক্যাল মাস্ক তৈরির অর্ডার পেয়েছি। আমাদের কারখানাগুলো পুরো বছরের জন্য কাজ পেয়ে গেছে।

জানা গেছে, ফকির এ্যাপারেলস তাদের পাঁচটি কারখানায় পিপিই তৈরি করছে। আর এ জন্য অতিরিক্ত ৪০০ শ্রমিক ভাড়া করেছে। কোম্পানিটির ধারণা এই বছর ২ কোটি ডলার মূল্যের পিপই তারা রফতানি করতে পারবে।

ঢাকায় একটি গবেষণা সংস্থায় কাজ করা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ’র সাবেক কর্মী আহসান এইচ মানসুর বলেন, কারখানাগুলো ৫০ শতাংশ ধারণক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। পিপিই উৎপাদনের কারণে তারা কিছু পরিত্রাণ পাবে। এএফপি।

 

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।