খুলনা প্রতিনিধি :
খুলনার উপকূলীয় এলাকা কয়রায় অর্ধশত কিলোমিটার দূর্বল বেড়িবাাঁধ সমুদ্রের ঘন ঘন নিম্মচাপ ও অতিমাত্রায় জোয়ারের পানিতে ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। স্থানীয়রা বলেছেন, ৩০ থেেেক ৪০ বছর আগে নির্মাণ করা এসব বেড়িবাঁধ সময়মত সংস্কার না করা এবং স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অতিমাত্রায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ ভাঙার মূল কারণ।
উপকূলীয় এলাকা কয়রার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি তুললেও এ যাবত সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছায়নি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে কয়রা-পাইকগাছা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আকতারুজ্জামান বাবু প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি তোলেন। এছাড়া জাতীয় সংসদে বিভিন্ন অধিবেশনেও সংসদ সদস্য বারবার এধরণের দাবি উপস্থাপন করায় সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এখাতে বরাদ্দ দিয়েছেন। এদিকে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় ১২০ কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধের ৩৫ কিলোমিটার অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ এবং অর্ধশত কিলোমটিার ঝুঁকির আওতায় রয়েছে বলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানায়- ঘূণিঝড় সিডর, আইলা, মসেন, ফনি, বুলবুল ও সর্বশেষ আম্পান এবং সম্প্রতি সমুদ্রের নিম্মচাপের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে এ এলাকার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়ীয়া নদীতে জোয়ারের পানি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। ফলে দূর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম বার বার লবণ পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া জোয়রের সময় প্রবল তুফানে পানির ধাক্কায় বেড়িবাঁধ দূর্বল হয়ে পড়ায় সামান্য আঘাতে বাঁধ ভেঙে যায়।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহসিন রেজা জানান, কয়রা উপজেলা সদরে মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালি, হরিন খোলা, ২ নং কয়রা, হাজত খালী, গাজী পাড়া, শাকবাড়ীয়া, পদ্মপুকুর, চরামুখা, গোলখালি, আংটিহারা, গাতীর ঘেরী. হরিহরপুর, কাটকাটা, মঠবাড়ী , দশালিয়া ও উত্তর মহেশ্বরীপুর গ্রামের বেঁড়িবাধ এই মহুর্তে অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, চলতি বছরে আরও তিনবার আমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে নদীতে অতিমাত্রায় পানি বৃদ্ধি পাবে এবং তার আগেই এসব বাঁধ দ্রুত সংস্কার করতে হবে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তীতে সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রী ও সচিবকে নিয়ে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ ঘুরে দেখেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দেন।
এ বিষয় খুলনা-০৬ জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আকতারুজ্জামান বাবু জানান, ৫০ বছর আগে নির্মিত দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ওয়াপদার বেড়িবাঁধের অনেক এলাকা আজও অরক্ষিত। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে পাইকগাছার আলমতলা গ্রামে নিজ হাতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিভিন্ন সময় স্বৈরাচার সরকারের এই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বেড়িবাঁধের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় বেড়িবাঁধ অরক্ষিত হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর বার বার সামুদ্রীক জলোচ্ছাস এবং সর্বশেষ আম্পান ও নিম্মচাপের কারণে অনেক স্থানে দূর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় আম্পান পরবর্তী সরকারের উর্দ্ধতন মহলে যোগাযোগ করে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং সেনাবাহিনীর প্রধান এ অঞ্চলে সরেজমিনে ঘুরে গেছেন এবং তারপর থেকে সেনাবহিনী বাঁধ রক্ষার কাজ করে চলেছেন।
এছাড়া ৩৫ কিলোমিটার দূর্বল বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য দ্রুত সরকারি অর্থ রবাদ্দ করা হয়েছে। সংসদ সদস্য বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদের প্রথম অধিবেশনে আমার নির্বাচনী এলাকা কয়রা-পাইকগাছার টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানিয়ে আসছি। চলতি অর্থ বছর থেকে টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন, যার অর্ধেক টাকা কয়রা উপজেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ রক্ষার কাজে ব্যয় করা হবে।
এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় শাখ কর্মকর্তা মসিউর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আম্পান পরবর্তী উপজেলার ১৬টি স্থানে বেড়িবাঁধ ঝঁকিপূর্ণ হওয়ায়, সংসদ সদস্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত অর্থ বরাদ্দ করায় সবগুলি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। তবে বেদকাশি কাশিরহাটখোলা ভেঙে যাওয়া বাঁধে কাজ শুরু হলেও পানি আটকাতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।