জামায়াতকে ছাড়ছে না বিএনপি - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ১১:৩০, ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

জামায়াতকে ছাড়ছে না বিএনপি

newsup
প্রকাশিত মার্চ ৬, ২০২১
জামায়াতকে ছাড়ছে না বিএনপি

নিউজ ডেস্কঃ প্রায় ছয় বছর ধরে দূরত্ব রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসলেও জামায়াতের সঙ্গ আপাতত ছাড়ছে না বিএনপি। দলটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের নানা কর্মসূচি নিয়ে যখন মাঠে, তখন তার দীর্ঘদিনের এই মিত্রের সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক রাখবে কিনা সেই আলোচনা আবার শুরু হয়।

তবে ভোটের রাজনীতির কথা মাথায় রেখে স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে পরিচিত জামায়াতকে দূরে ঠেলে দিতে চায় না বিএনপি- এমন মনোভাব স্বয়ং বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার। কয়েকদিন আগে রাজধানীর হোটেল লেকশোর-এ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছরব্যাপী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সবকিছু অবহিত করতে গুলশানের বাসায় গেলে দলের নেতাদেরকে খালেদা জিয়া এমন মনোভাবই ব্যক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবদায়ক  সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে এক ধরনের মানসিক দূরত্ব তৈরি হয় বিএনপির। ওই সময় খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে তাতে দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াত কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালে এই দূরত্বটি তৈরি হয়। তবে ২০১৫ সালের পর থেকে কর্মসূচি নেয়ার ক্ষেত্রেও জামায়াতকে দূরে রাখে বিএনপি।

দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃত্ব সারাদেশের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েছিল। সে সময় সারাদেশ থেকেই তাদের তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীরা জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার সুপারিশ করেছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে ২০ দলীয় জোটের বাইরে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের আলাদা একটি জোট গঠন করেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন না থাকার কারণে জামায়াতের প্রার্থীরা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই সেই নির্বাচনে অংশ নেয়।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে বিএনপি। এমতাবস্থায় তাদের দল সামনে কীভাবে এগুতে পারে, সে ব্যাপারে সুপারিশ বা প্রস্তাব তৈরির জন্য স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি গত বছর প্রতিবেদন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পেশ করেন।

সেই প্রতিবেদনে জামায়াতের সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক না রাখার প্রস্তাব করে তার স্বপক্ষে কারণ এবং যুক্তিও তুলে ধরা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে তাদের দলে আলোচনা চলছে। যদিও তারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

তবে বিএনপির একটি শক্তিশালী পক্ষ চায়, জামায়াতের সঙ্গে যেরকম সম্পর্ক আছে তা চলমান থাকুক। তাদের দাবি, জামায়াতকে ত্যাগ করলে তা বরং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকেই সুবিধা দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে দলটির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, ‘আমরা আজ জামায়াতের সঙ্গে সঙ্গ ত্যাগ করলাম। কিছুক্ষণ পরেই জামায়াতকে লুফে নেব আওয়ামী লীগ। যেমনটি লুফে নিয়েছিল হেফাজতে ইসলামকে।’

তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কে ভাঙন ধরাতে চায় সরকার। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যদি সম্পর্কের অবণতি হয়, তাহলে লাভ সরকারের। তিনি মনে করেন, এ লাভ হবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিকে একঘরে করে দেয়া। অন্যদিকে ভোটের মাঠেও বিএনপিকে কাবু করা সম্ভব হবে।

বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে যারা জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক বহাল রাখতে চাইছেন, তারা ভোটের হিসাব নিকাশকেই এখনো গুরুত্ব দিচ্ছেন। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক প্রায় দুই যুগের। ফলে ভোটের রাজনীতিতে এই সম্পর্কের প্রয়োজন আছে বলে বিশ্বাস করেন বিএনপির এই পক্ষটি।

তাদের একজন বলেছেন, বিএনপি কেন জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছে না- এসব প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকেই নানা প্রপাগাণ্ডা বা প্রচারণা চালানো হয়। সেজন্য তারা মনে করেন জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সরকারের ফাঁদেই পা দেয়া হবে।

জামায়াতকে ছাড়ার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বলেন, বিএনপিতে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জামায়াত ২০ দলের সঙ্গে আছে, থাকবে।

বিএনপি নেতারা বিশ্বাস করেন, বিএনপিকে দুর্বল করতেই সরকারি দল ও তাদের ‘মেশিনারিজ’ বিএনপি ও জামায়াতকে নিয়ে নানা রকম গল্প প্রচার করছে- যাতে পরিস্থিতির বাস্তবতায় এই দুই দলের ঐক্যে ফাটল ধরানো যায়। ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত যেহেতু একটি বড় ফ্যাক্টর, সেহেতু বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে জামায়াতকে বের করাতে পারলে বিএনপির ভোট ব্যাংক দুর্বল করা যাবে। কাছে টানতে না পারলেও ২০ দল থেকে জামায়াতকে আলাদা করতে পারাটাও আওয়ামী লীগের বড় সাফল্য বলে ধরা হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মানবকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি জামায়াত ছেড়ে দেবে কিংবা জামায়াত বিএনপিকে ছেড়ে দেবে- এমন নতুন কোনো আলোচনা হয়নি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।