মাহফুজ আদনান ::
২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক করোনা মহামারি সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল গতবছর । চীনের উহান রাজ্য থেকে শুরু হওয়া এই ভাইরাসটি কেড়ে নিয়েছে কয়েক মিলিয়ন মানুষের প্রাণ । যার ফলে মানুষ সভ্যতা এক চরম অবনতির পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এই যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা আজ থেকে ২-১ বছর আগেও কেউই কল্পনাও করতে পারেন নি ।
এই করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপি তোলপাড় হচ্ছে তা ১০০ বছর পর পর যে খরা বা রোগ সৃষ্টি হয় তারই ধারাবাহিকতায় ঘটছে। এর মধ্যে এই প্রানঘাতি ভাইরাস আমদের ভারতবর্ষে তথা বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। ইন্ডিয়ার বর্তমান যে পরিস্থিতি তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময় ইন্ডিয়াতে যে হারে করোনা তান্ডব চালাচ্ছে এবং মানুষের মৃত্যু ঘটছে তা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। ভারতের করোনা বিপর্যয় এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।
“ভারতে ভয়াবহভাবে করোনা ভাইরাসের বিস্তারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত সরকার ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মীদের জন্য বাড়তি সাপোর্ট দেয়ার জন্য খুব বেশি সচেষ্ট তারা” -শনিবার হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র এ কথা বলেছেন।
অপরদিকে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন আশীষ ঝা বলেছেন, “১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারত মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে।’ এ অবস্থায় করোনা ভাইরাসের টিকা তৈরির কাঁচামাল রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ওয়াশিংটনের হাতে থাকা এস্ট্রাজেনেকার অব্যবহৃত ৩ কোটি টিকা ভারত ও সঙ্কটে থাকা দেশগুলোকে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আশীষ ঝা।
ইমেইলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে হোয়াইট হাউজের ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারত যখন করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, তখন সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়তি সাপোর্ট দেয়ার জন্য উচ্চ পর্যায়ে সক্রিয় আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে আমরা দ্রুতই আরো তথ্য জানাতে পারবো।
এছাড়া চীনকে কাউন্টার দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কৌশলগত মিত্র ভারতকে অধিক সহায়তা দেয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপে রয়েছে ওয়াশিংটন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে ভারতকে এই মহামারি পরিস্তিতি মোকাবেলা করতে তারা সাহায্য করবে।
রোববারও ভারতে নতুন করে একদিনে রেকর্ড পরিমাণ ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬০১ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ সময়ে করোনায় প্রাননাশ ঘঠেছে প্রায় এক লাখ ৯১ হাজার ৩১১ জন ভারতীয় নাগরিকের।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন আশীষ ঝা সতর্কতা দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে শনিবার একটি মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন ভারতে। কিন্তু বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ বলেন মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুন। এছাড়া তিনি ভারতে অক্সিজেন, অতিরিক্ত টেস্টিং কিট, উচ্চ মানসম্পন্ন পিপিই, মাস্ক, রেমডেসিভিরসহ করোনা চিকিৎসার ওষুধ সরবরাহ দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কাঁচামাল রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়া উচিত ওয়াশিংটনের বলে তিনি মনে করেন।
এই সঙ্কট সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এবং ভারতীয় কর্মকর্তারা উপায় বের করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন পসাকি। তবে কখন এই সহায়তা পাওয়া যাবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন ইঙ্গিত দেন নাই বরং তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য সহায়তা, জরুরি রিলিফ সামগ্রি, ভারতের জন্য মহামারি প্রশিক্ষণ এবং ভেন্টিলেটরসহ ১৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারত সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এবং সিঙ্গাপুরসহ অন্য দেশ থেকে রাজধানী দিল্লিতে জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য অক্সিজেন আনতে সামরিক বিমান এবং ট্রেন মোতায়েন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে করোনা ভাইরাসের টিকা তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় চলছে।
কিন্তু সর্বপরি নিজেকে বিশ্বের একটি সুপার পাওয়ার দাবি করা ভারতের অবস্থা অতটা নাজুক হচ্ছে যে জনমনে এক চরম অশান্তি বিরাজ করছে। অনেক পালিয়ে অন্যদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশের সাথে ভারতের বর্ডার থাকায় সেসব মানুষের বাংলদেশে ঢুকার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। আর এটি হলে বাংলাদেশ একটি অন্ধকার গলির দিকেই হাটা শুরু যা কখন কাম্য নয়।
তাই বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের দাবি হল বাংলাদেশের সাথে বন্ধু রাষ্ট্র ইন্ডিয়ার বর্ডার এখন যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তা না হলে বাংলাদেশও ঠিক একই পরিস্থিতির দিকে পা বাড়াবে যা চিন্তার করতেও বুক কেঁপে উঠে। । তাই বাংলাদেশ সরকারকে এই বিষয়ে অনতিবিলম্বে ভাবা দরকার।
লেখক : মাহফুজ আদনান, চীফ নিউজ এডিটর ও সিইও, বাংলানিউজইউএসডটকম ।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।