নিউজ ডেস্কঃ
না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুলশানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
দেশের কিংবদন্তি এই গণসংগীতশিল্পীর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এর আগে গত বুধবার (১৪ জুলাই) ফকির আলমগীরের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এজন্য তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাত ১টায় হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভর্তির পরপরই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে রবিবার (১৮ জুলাই) আইসিইউ থেকে তাকে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। শুক্রবার (২৩ জুলাই) তার হার্ট অ্যাটাক হয়।
এদিকে একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট গণসংগীত শিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক ফকির আলমগীর এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাতে বঙ্গভবন থেকে পাঠানো এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তার গান তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেমের নবজাগরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ সময় মরহুম ফকির আলমগীরের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান রাষ্ট্রপতি।
অপরদিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও দেশবরেণ্য গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে বিশেষ করে গণসংগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেছা। ফকির আলমগীর কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে ১৯৬৬ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।
জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সঙ্গীত বলয়ে প্রবেশ করেন। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। অবশ্য এর আগে ষাটের দশক থেকেই গণসংগীত গেয়ে আসছিলেন তিনি। ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অসামান্য ভূমিকা রাখেন তিনি।

স্বাধীনতার পর ফকির আলমগীর পপ ঘরানার গানে যুক্ত হন। পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে বাংলার লোকজ সুরের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি বহু গান করেছেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্রীয় ‘একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযোগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা’, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’ পুরস্কারে তাকে ভূষিত করা হয়।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।