অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনার সময়ে বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এলেও ব্যাংকে মুনাফায় উলটো চিত্র দেখা গেছে। অবশ্য ব্যাংকগুলো বলছে, করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আবার চাঙ্গা হয়েছে। ২০২১ সাল শেষে ব্যাংকগুলোর হিসাব থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকগুলো এ সময়ে অন্যান্য খরচ কমিয়েছে এবং বিতরণ করা ঋণের একটা অংশ আয় হয়েছে। অন্যদিকে এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির কারণে খেলাপি ঋণ না হওয়া এবং প্রভিশন কম রাখায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেড়েছে।
এদিকে মহামারির মধ্যে ব্যাংকগুলোর এ মুনাফা বৃদ্ধির চিত্র নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মহামারির মধ্যে ব্যাংকগুলো মুনাফার যে প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে, তা যুক্তিসংগত নয়। এখানে কিছু কারসাজি আছে। কিছু মুনাফা দেখানো হচ্ছে, যা শুধু কাগজে, বাস্তবে এই মুনাফা নেই।
ব্যাংকগুলো কিছুদিন পরে তাদের বার্ষিক অনিরীক্ষিত আর্থিক ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে পেশ করবে। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এর আগে তা প্রকাশের ওপর এসইসির বিধিনিষেধ রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত (নিট) মুনাফা নয়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই কোনো ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) এবং সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে পরিচালন মুনাফার যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর প্রাথমিক হিসাব ও প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছে। বেসরকারি অন্যান্য ব্যাংকের মতো ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতেও আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে বলে ব্যাংকগুলো নিশ্চিত করেছে।
ব্যাংকারদের অনেকেই জানিয়েছেন, কাগজ-কলমে যা দেখানো হয়েছে প্রকৃত অবস্থা আরও খারাপ। ব্যাংকগুলোর স্হিতিপত্রের সস্বাস্থ্য ভালো দেখানোর জন্য পরিচালন মুনাফা বাড়িয়ে দেখানোর একটা প্রবণতা আছে। এর পরের ধাপে গেলেই প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাবে। প্রভিশন করলেই বোঝা যাবে কোন ব্যাংকের মুনাফা কেমন।
বছর শেষে ব্যাংকগুলো অর্ধবছরের হিসাব করে। এ সময়ে ব্যাংকগুলো কেমন মুনাফা করল, তা বোঝার চেষ্টা করে। অবশ্য প্রকৃত কাজ শেষ হতে আরও কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাংকের তথ্য হাতে এসেছে তাতে দেখা গেছে যে, বেশির ভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। তবে কয়েকটি ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে কম মুনাফা করেছে বলেও দেখা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, সদ্যবিদায়ি ২০২১ সালে ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এক বছরে মুনাফা ৮০ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২১ সালে পূবালী ব্যাংক মুনাফা করেছে ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৯৩৫ কোটি টাকা। মুনাফা ২০৫ কোটি টাকা বেড়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংক বিদায়ি বছরে মুনাফা করেছে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৮৭০ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে ১৮০ কোটি টাকা মুনাফা বেড়েছে।
এক্সিম ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৭৪১ কোটি টাকা। মুনাফা ৩৯ কোটি টাকা বেড়েছে। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭৫০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৬৮০ কোটি টাকা। বছর শেষে মুনাফা ৭০ কোটি টাকা বেড়েছে। যমুনা ব্যাংকের মুনাফা করেছে ৭৫০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা। মুনাফা ১১৩ কোটি টাকা বেড়েছে। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭১৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৪৮১ কোটি টাকা। ২৩৬ কোটি টাকা মুনাফা বেড়েছে।
এছাড়া এনআরবিসি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৫০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৩২৩ কোটি টাকা। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক মুনাফা করেছে ২১০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ১৫২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে ৫৮ কোটি টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৬২ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ১২৫ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে মুনাফা ৩৭ কোটি টাকা বেড়েছে।
মেঘনা ব্যাংক মুনাফা করেছে ১০৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৭৩ কোটি টাকা। মুনাফা ৩২ কোটি টাকা বেড়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩৭৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৩১৭ কোটি টাকা। ৫৮ কোটি টাকা মুনাফা বেড়েছে। এনসিসি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭১৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে যা ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। ১৪৪ কোটি টাকা মুনাফা বেড়েছে।