বিজয় দিবসের মাসে নতুন প্রতিজ্ঞা করতে হবে - BANGLANEWSUS.COM
  • ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

 

বিজয় দিবসের মাসে নতুন প্রতিজ্ঞা করতে হবে

newsup
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩, ২০২২
বিজয় দিবসের মাসে নতুন প্রতিজ্ঞা করতে হবে

ডেস্ক নিউজ: গত একযুগে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির দিক থেকে যে অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিশ্ববাসীর কাছেও বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু যদি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হতেন, যদি আর দশটি বছরও বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর একটি হিসেবে গৌরবের আসন নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু পরাশক্তিসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দেশি-বিদেশি নানা শক্তির গভীর চক্রান্ত সেই স্বপ্ন নস্যাৎ করে দিয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে।

সময় নামের নদী বয়ে যায় নিরন্তর। মহাকালের সাগর, মহাসাগরে হারিয়ে যায়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া নদী যেমন রেখে যায় তার দুই তীরে বসতি উজাড় করা ভাঙনের নির্মম দুঃখবহ স্মৃতি, তেমনই রেখে যায় সোনালি ফসলের আশাজাগানিয়া উর্বর পলিও। একইভাবে সময়ও রেখে যায় তার কিছু অবিস্মরণীয় স্মৃতি, কালজয়ী কিছু ঘটনাপ্রবাহ, যাকে আমরা বলি ইতিহাস। সেই ফেলে আসা সময়ের অনেক কিছু হারিয়ে যায়, হারিয়ে গেছে বটে আমাদের জীবন থেকে, কিন্তু জ্বলন্ত সূর্যের দীপ্তি হয়ে রয়ে গেছে ১৯৭১।

হাজার বছর ধরে পরাধীন বাঙালি জাতির জীবনে এমন মহত্তম আশাজাগানিয়া উদ্বেল সময় আর কখনও আসেনি। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর শঙ্কা জেনেও এমন দুঃসাহসী আর ঐক্যে অটুট যোদ্ধার ভূমিকায়ও কখনও আর দেখা যায়নি বাঙালিকে।

সেই অবিস্মরণীয় একাত্তর থেকে আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১। মহান মুক্তিযুদ্ধ বিজয় ও স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে এই ডিসেম্বরেই। এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমরা যারা বেঁচে আছি নিঃসন্দেহে তারা বড় ভাগ্যবান। কত বীর মুক্তিযোদ্ধা ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের উল্লাসে মুক্ত জন্মভূমিতে স্বাধীনতা অর্জনের আনন্দে উল্লসিত হয়েছেন, কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে সমৃদ্ধির আলোয় উদ্ভাসিত বাংলাদেশ তারা দেখলেন না, শামিল হতে পারলেন না এমন ঐতিহাসিক গৌরবময় আনন্দ উদযাপনে।

কী বিস্ময়করভাবেই না বদলে গেছে বাংলাদেশ! অনুন্নত, দারিদ্র্যপীড়িত, অনাহারক্লিষ্ট, একটা ভূখণ্ড কীভাবে সচ্ছল, সমৃদ্ধশালী, তথা উন্নয়নের আলোয় আলোকিত, প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগের আধুনিকতম সমাজে রূপান্তরিত হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত আজকের বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ থেকে আজকের বাংলাদেশ পর্যন্ত আমাদের যাদের অভিজ্ঞতা, আবারও বলি সত্যিই তারা ভাগ্যবান।

মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে গিয়ে আমাদের মনে পড়বে ১৯৭১ সালের লাখ লাখ মানুষের আত্মাহুতি, স্বাধীনতার বেদিমূলে তারা তাদের বর্তমান উৎসর্গ করেছিলেন আমাদের ভবিষ্যৎ রচনার জন্য। ত্রিশ লাখ শহীদ আর কয়েক লাখ মা-বোন তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন এই স্বাধীনতার জন্য।

১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো আজ প্রবীণদের স্মৃতির জানালা খুলে দেবে, পেছন ফিরে তাকালে কোটি কোটি মানুষের দুঃখ-দুর্দশার ছবি ভেসে উঠবে। প্রিয় মাতৃভূমি মৃত্যুগুহা হিসেবে দেখতে বাধ্য হওয়া অগণিত মানুষের অশ্রু আর রক্তের মর্মস্পর্শী সেই ঘটনাপ্রবাহ স্মৃতিকে আপ্লুত করে দেবে নিশ্চয়ই।

এই ডিসেম্বরে নিঃসন্দেহে স্মৃতিতে ভেসে উঠবে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১৬ ডিসেম্বর শেষ বিকেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের সেই দৃশ্য, যা বাঙালির জন্য অনন্য গৌরবের স্মৃতি হয়ে আছে।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে বিজয় থেকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় পর্যন্ত অনন্য ঘটনাপ্রবাহ চোখের সামনে ভেসে উঠছে আজ। মনে হয় যেন সেদিনের ঘটনা! অথচ ৫০ বছর অতিক্রান্ত!

ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িকতাদূষ্ট সামরিকশাসনে পিষ্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দুর্বার আকাঙ্ক্ষায় বাংলার মানুষের নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছর যে কঠিন ত্যাগস্বীকার আর প্রাণপণ সাহসী সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের ঘটনাবলিও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর ডিসেম্বরে আমাদের স্মৃতিতে ধ্রুবতারার মতো দেদীপ্যমান হয়ে জ্বলবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।