যেমন আছেন কোরআনের হাফেজরা
২৭ এপ্রি ২০২৩, ০১:৩৮ অপরাহ্ণ

ডেস্ক নিউজ: হাফেজ গড়তে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেন হিফজ বিভাগের শিক্ষকরা। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা তারা ছাত্রদের পেছনে নিবেদিত থাকেন। ক্লাসের সময় তো বটেই, বড় দু’টি বিশ্রামের সময়– সকাল ও রাতে ছাত্রদের ঘুমও হয় তাদের তত্ত্বাবধানে। বিকালে যখন খেলাধুলার সময়, তখনও হিফজখানার শিক্ষকরা ছাত্রদের দেখভাল করেন। যাতে ছোট বাচ্চারা পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য বজায় থাকে।
দেশের প্রায় সব হিফজখানা-ই আবাসিক। ছোট ছোট ছাত্র বাবা-মাকে ছেড়ে এখানে অবস্থান করে। এজন্য হাফেজে কোরআন হিফজ বিভাগের শিক্ষকরা তাদের ‘মা-বাবা’ হয়ে ওঠেন। এক দম্পতির যদি একসঙ্গে দুজন ছোট বাচ্চা থাকে, তাহলে তারা বাচ্চাদের সামলাতে হিমশিম খান, কিন্তু হিফজ বিভাগের একজন শিক্ষক তার তত্ত্বাবধানে থাকা ১০-১৫ বছর বয়সের ২০-২৫ জন শিশু শিক্ষার্থীকে ‘বাবা-মায়ে’র আদরে আগলে রাখেন। কখনও ধৈর্যচ্যুতি ঘটে না, তা নয়; তবে এমনটি হলে আবার সামলে নেন নিজেকে।
যারা শুধু হাফেজে কোরআন নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাকমিল (মাস্টার্স সমমান) পর্যন্ত পড়েননি, তাদের বেশিরভাগই হিফজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। এর বাইরে মসজিদে আজান দেওয়া, রমজানে তারাবি পড়ানো ইত্যাদি সাময়িক ও তুলনামূলক কম সংখ্যক মানুষ এগুলো করেন। এ জন্য আজকের লেখা শুধুই হিফজ শিক্ষক হাফেজে কোরআনদের নিয়ে।
এমনই একজন হিফজ শিক্ষক হাফেজ মাহদি হাসান রাসেল। গত চার বছর ধরে হিফজ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। এখন তার কর্মস্থল মাগুরার মোহাম্মদপুরের দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম–হিফজ বিভাগে খেদমত (চাকরি) কেমন উপভোগ করছেন। ‘আনন্দ’র কথা জানালেও কিছুটা আক্ষেপ উঠে আসলো তার কণ্ঠে। বললেন, দ্বীনের খাতিরে ও নিজেকে গোনাহ থেকে বাঁচাতে হিফজখানায় চাকরি করছি। এখানে (দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা) আমি তুলনামূলক বেশ স্বস্তিতে আছি। কিন্তু দেশের হিফজ বিভাগের যে ২৪ ঘণ্টার রুটিন, তা পরিবর্তনযোগ্য।’ তার মতে, এমন রুটিনে হিফজ শিক্ষকরা একপ্রকার ‘বন্দি’।
হাফেজ মাহদি হাসানের বেতন ১০ হাজার টাকা। দেশের হিফজ বিভাগের বেতন স্কেল সাধারণত ১০-১২ হাজার টাকার ভেতরেই। এরচেয়ে বেশি আছে, তবে তা খুব কম জায়গায়।
মাদ্রাসায় যারা জামাত বিভাগে শিক্ষকতা করেন, তারা এর পাশাপাশি মসজিদে ইমামতিসহ বাইরের অন্যান্য টুকটাক কাজও করতে পারেন। তাদের বেতন সামান্য হলেও টুকিটাকি কাজ করে আরও যে টাকা তারা পান, তা দিয়ে মোটামুটিভাবে সংসার চালাতে পারেন, কিন্তু হিফজখানার শিক্ষকদের সে সুযোগ নেই। তারা অন্যের সন্তানদের গড়তে জীবন ব্যয় করে দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু নিজেদের সন্তানদের ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না।
এমন পরিস্থিতিতে হিফজখানার শিক্ষকদের দু’টি সুবিধার যেকোনও একটি দেওয়া যায়– এমন কথা আলোচনা হয়। তা হলো, হয়তো শিফট পদ্ধতির প্রচলন অথবা বেতন বৃদ্ধি। হাফেজ মাহদি হাসান রাসেল মনে করেন– দ্বিতীয় পদ্ধতিটি বাস্তবায়িত হলেই ভালো।
তবে শিফট পদ্ধতি চালু করলেও এই সুবিধা ধরে রাখা সম্ভব। সেক্ষেত্রে হাফেজ মাহদি হাসানের পরামর্শ হলো– শিফট পদ্ধতি চালু করার পর এই সুবিধা (শিক্ষার্থীদের একই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে রাখা) কায়েম রাখতে হলে শিক্ষকদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিতে হবে। তার মতে– একজনের জায়গায় যদি শিফট পদ্ধতিতে দু’জন শিক্ষক পাঠদান করেন এবং তারা দু’জনেই স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ছয় মাস একই হিফজ বিভাগে পড়াতে থাকেন, তাহলে তারা দু’জনেই সমানভাবে প্রতিটি ছাত্রের ব্যাপারে ধারণা লাভ করতে পারবেন। এতে শিক্ষার্থীদের উন্নতিতে তেমন অসুবিধা দেখেন না তিনি।