বিশ্ব মা দিবস ও আমার মা - BANGLANEWSUS.COM
  • ১লা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

 

বিশ্ব মা দিবস ও আমার মা

newsup
প্রকাশিত মে ১৪, ২০২৩
বিশ্ব মা দিবস ও আমার মা

ফারুক আহমদ :
আজ বিশ্ব মা দিবস। আধুনিক বিশ্বে মা দিবস উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভরে ওঠে মায়ের সঙ্গে সন্তানদের ছবিতে, নানা লেখায়। বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন অনেক বেশি মানুষ নিজের মাকে ফোন করেন, তার জন্য ফুল কেনেন, উপহার দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আমার মা বেঁচে নেই। তাই তেমন কিছু করার সুযোগ নেই আমার। তবে মা দিবস উপলক্ষে আজ মা-বাবার কবরের গিয়ে হাজির হয়েছিলাম খালি হাতে। তবে দোয়া-দুরুদ পড়ে মহান রবের অনুগ্রহ চেয়েছি যেন আমার মা বাবাকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করেন।
মা দিবস উপলক্ষে আমার মায়ের অনেক দিন আগের একটি ঘটনা এখনও মনে পড়লে মায়ের জন্য আমার চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। একবার মাকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলাম । হটাৎ মা ঢাকার একটি বহুতল ভবন দেখে প্রশ্ন ছুঁড়েন এসব ভবন কারা থাকে আমি উত্তর দিলাম এসব ভবনে বড় লোকেরা থাকে। তারপর এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলেন । আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে সংক্ষেপে ফ্লাট বাড়ির মালিকদের সম্পর্কে যা কিছু জানতাম মাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলাম। উত্তর শুনে মা তৎক্ষণাৎ বলে উঠলেন “আল্লাহ আমার ছেলেটা বড় হয়ে যেন এমন একটি বাসার মালিক হয়”।
মা’র এমন চাওয়া তখন আমি পাত্তা দেইনি হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। তারপর অনেক দিন চলে যায় ইতিমধ্যে আমার মায়ের মৃত্যুরও দুই বছর পেরিয়ে যায়।
গতবছরের বন্যায় আমার সিলেট উপশহরের ভাড়া বাসায়(নিচতলায়) পানি উঠলে আমার ব্যবহার্য আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ক্ষয়ক্ষতি আমি মেনে নিলেও আমার সহধর্মিণী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। বাসার ক্ষতিগ্রস্ত আসবাবপত্র দেখে সহধর্মিণী তাৎক্ষণিক সিন্ধান্ত নিলেন উপশহরের নিচতলার বাসায় উনি উঠবেন না। তার এমন সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে পারতেছিলাম না। কারণ উপশহরের ঐ বাসায় আমি অনেকটা নিজের বাড়ি হিসেবে থাকতাম। এদিকে বাড়িওয়ালা চাচা আমাকে কোনভাবেই ছাড়তে রাজি ছিলেন না। কারন বাড়িওয়ালা চাচা আমাকে পুত্র সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। একবার উনার ছেলের বিয়ে উপলক্ষে লন্ডন থেকে উনার পরিবারের জন্য শপিং করে আনার সময় আমার পরিবারের সবার জন্য শপিং করে নিয়ে আসার ঘটনায় আমি অভিভূত হই। প্রতিবার দেশে আসার সময় আমাদের জন্য উপহার আনতে ভুল করতেন না। আমার স্ত্রীর এমন ঘোষণায় বাড়িওয়ালা চাচা আমার দুই মাসের বাসা ভাড়াও মওকুফ করার ঘোষণা দিয়ে শান্তনা দেবার চেষ্টা করেন। কিছু নিকট আত্মীয় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আর্থিক সহায়তাও করেছিলেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বাসা পরিস্কার করে আমি বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় উঠলেও স্ত্রী অভিমান করে প্রথমদিন ফিরলেন না। পরে অবশ্য আত্বীয় স্বজনদের হস্তক্ষেপে উপশহরের বাসায় ফিরলেও সারাক্ষণ অন্যত্র বাসা ভাড়া নেয়ার তাগাদা ছিল। ফলে আমি কিছুটা নিরুপায় হয়েই বাসা ভাড়া খুঁজছিলাম। গাড়ি পার্কিং সহ আমার সীমিত বাজেটে মনের মতো বাসা খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে গেছিলাম। এমন সময় সিলেটের Woondaal King Kebab এর মালিক সালাউদ্দিন বাবলু ভাইয়ের সাথে এক বৈঠকে আমার হতাশার কথা জানালে উনি তাৎক্ষণিক ভাবে রেডি একটি ফ্লাট ক্রয়ের পরামর্শ দেন। আমি বললাম এতো টাকা দিয়ে এই মূহুর্তে আমার পক্ষে ফ্লাট ক্রয় সম্ভব নয়।‌ উনি আমাকে আশ্বাস দিলেন চাকুরীজীবি হিসেবে ব্যাংক লোন নিয়ে ক্রয় করা সম্ভব। বাবলু ভাইয়ের পরামর্শ মোতাবেক নগরীর মেজরটিলায় প্যারাগন টাওয়ারে লন্ডন প্রবাসী এক চাচার ফ্লাট দেখতে গেলাম। চাচার ফ্লাটটি দেখে আমার ভীষণ পছন্দ হলো। আমি সহজ-সরল ভাষায় চাচাকে বললাম আপনার এই ফ্ল্যাট আমার পছন্দ হলেও এতো দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। তবে ফ্লাটের মালিক আমার কাছ থেকে ফ্লাটের পরিপাটি ও দামি দামি আসবাব পত্র সহ সবকিছুর প্রশংসা শুনে ভীষণ প্রীত হন। উনি জানালেন অনেক ক্রেতাই দেখতে এসে ফ্লাটের নানা রকম ক্রুটির কথা বলে দাম কমানোর চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে আমিই কেবল ভিন্ন। আমার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে উনি আমার কাছে ফ্লাট বিক্রির আগ্রহ দেখালেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শুনে একপর্যায়ে তিনি সকল আসবাবপত্র বিনা মূল্যে আমাকে দিয়ে দিবেন বলে জানান। আমার নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব যাদের ফ্লাট দেখিয়েছি কিংবা পরামর্শ চেয়েছি বেশীরভাগ পরামর্শ দিয়েছেন ফ্লাটটি হাতছাড়া না করতে। ফ্লাটটি ক্রয় করতে গিয়ে প্রতিটি পদে পদে আমি আপনজনদের অকল্পনীয় সহযোগিতা পেয়েছি। ফ্লাট বিক্রির জন্য যিনি মিডিয়া হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ফ্লাট মালিকের সম্পর্কে ভাতিজা প্রবাসী জয়নাল ভাই । পরবর্তীতে জানতে পারলাম উনি আমার সম্বন্ধী মাহবুব ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জয়নাল ভাই সহ প্যারাগন প্রপার্টিজ এমডি এনামুল হক চৌধুরী, প্যারাগন প্রপার্টিজ ফ্লাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবলু সহ-সভাপতি ইকবাল আহমদ ভাই নানা ভাবে সহযোগিতা করেছেন ফ্লাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে।
হটাৎ করে ফ্লাট ক্রয় করার মতো সামর্থ্য আমার ছিল না। তবে আমার দেশী-বিদেশী আপনজন ও বন্ধুরা সবাই আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছি। আমার সহধর্মিণী নিজের গয়না বিক্রি করে টাকা তুলে দিলেন। আমার সহকর্মীরাও এগিয়ে এলেন ব্যাংক লোন দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তোলনে।
উক্ত ফ্লাট ক্রয়ের সময় হটাৎ করে আমার মনে হলো দীর্ঘ দেড় যোগ আগে আমার মমতাময়ী মা এমন একটি ফ্লাট বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য মহান মাবুদের দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন। আমার অগাধ বিশ্বাস আমার মায়ের সেই প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেছেন। মহান রবের অপার কৃপা না থাকলে আমার পক্ষে এমন ফ্লাটের মালিক হওয়া আসলেই কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল। আমার মরহুম বাবাও আমার জন্য সব সময় বিশেষ দোয়া করতেন। এখনও আমার কানে বাজে বাবা প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে বাড়িতে তেলাওয়াত করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন। এসময় নিয়মিত আমার নাম ধরে বিশেষ মোনাজাত করতেন বাবা। সেই প্রিয় বাবা-মা আজ দুজনেই কবরবাসী আমার জন্য তাদের দোয়া হয়তো বন্ধ। তবে উনাদের জীবদ্দশায় আমার জন্য যেসব দোয়া করে গেছেন মহান আল্লাহ যেন সেগুলো কবুল করেন। যেকোনো মানুষের কাছে তাদের মা-বাবা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম মা-বাবা। তবে আমার আমার মা-বাবা এর চেয়েও এগিয়ে তারা জৈন্তাপুর উপজেলার সাধারণ মানুষ হয়েও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমি দাতা। এইসব দানের উসিলায় নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁদের ক্ষমা করে দিবেন। আমার বাবা-মা, ভাই-বোন সহ কবরবাসী সকল আত্মীয়-স্বজনকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করেন। আমিন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।