পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত আনার উদ্যোগ জরুরি

Daily Ajker Sylhet

newsup

২৪ জুন ২০২৩, ০৩:৩১ অপরাহ্ণ


পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত আনার উদ্যোগ জরুরি

সম্পাদকীয়: সুইস ব্যাংক থেকে নাকি টাকা সরিয়ে ফেলার হিড়িক পড়েছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক তথা সুইস ব্যাংক থেকে গত ১ বছরে ১০ হাজার ১১৭ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশিরা। এখন অবশিষ্ট আছে ৬৮৪ কোটি টাকা।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ সুইস ফ্রাংক (১২৪ টাকায় ১ সুইস ফ্রাংক), যা আগের বছর ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্রাংক। অবশ্য নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা দেওয়া কোনো বাংলাদেশির তথ্য এ প্রতিবেদনে নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গত ১ বছরের মধ্যে এত টাকা গেল কোথায়?

বিশাল অঙ্কের টাকা উধাও হওয়া নিয়ে বিশ্লেষকরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এর আগে নির্বাচনি বছরগুলোয় যেখানে আমানত বেড়েছে, এবার সেখানে ১ বছরে ৯৫ শতাংশ আমানত কমেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আমানতের তথ্য ফাঁস হওয়ায় পাচারকারীরা সুইস ব্যাংকে টাকা রাখা এখন আর নিরাপদ মনে করছেন না। ফলে ১ বছরে বিপুল অঙ্কের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে।

বলাই বাহুল্য, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের যে টাকা রাখা হয়েছে, এর বড় একটি অংশ মূলত অবৈধ ও দুর্নীতির। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টেও বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য আসছে। ঋণের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা, বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ এবং ঘুস-দুর্নীতির টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। শুধু সুইস ব্যাংক নয়, সুইস ব্যাংকের বাইরেও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের অর্থ পাচার বাড়ছে।

অভিযোগ আছে, গত দেড় দশকে অনেক বাংলাদেশি মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউএই ইত্যাদি দেশে বাড়ি-ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন ব্যবসায় হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

মূলত অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে টাকা পাচার হয়। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে দেশ থেকে অর্থ পাচার হলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। গত অর্থবছরের বাজেটে অর্থ পাচারকারীদের বিশেষ সুযোগ দিয়েছিল সরকার, যাতে কেউ ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে বৈধ করতে পারে।

কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত ১ টাকাও ফেরত আসেনি। তবে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বরাবরই এ ধরনের সুযোগের সমালোচনা করে আসছেন। আসলে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তাদের অনেকেই প্রচলিত রাজনৈতিক শক্তির ভেতরেই অবস্থান তৈরি করে নেন। পাচার রোধ করতে হলে তাই দুর্নীতি কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি নাগরিক জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।