
ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী নয়ন, নিউইয়র্ক: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই মুসলিম কমিউনিটির উপর বাড়ছে হামলার ঘটনা। ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া হামলার ঘটনায় চরম আতংকে দিনাতিপাত করছেন বাঙালী সহ মুসলিম কমিউনিটির লোকজন। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি আমেরিকার নিউইয়র্কস্থ ওজোন পার্ক এলাকায় নির্মমভাবে খুন হওয়া ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জি ও তারা উদ্দিনের খুনী হিসেবে পুলিশের হাতে আটক হওয়া অস্কার মোরেলকে গত বৃহষ্পতিবার দ্বিতীয়বারের মতো আদালতে হাজির করা হয়েছিলো। পুলিশের তথ্য মতে মোরেল হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করলেও আদালতে সে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেছে। অপরদিকে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাঙালী কমিউনিটির লোকজন সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন পুলিশ এখন পর্যন্ত এই হত্যার মোটিভ উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এ নিয়ে তারা এখনও বিভ্রান্তিতে রয়েছে। নিউইয়র্কের সর্বস্তরের মানুষ এই জোড়া খুনের ঘটনাকে স্পষ্টতই ‘হেইট ক্রাইম’ হিসাবে অভিহিত করলেও পুলিশ এখনও তা বিবেচনায় না নেয়ায় বাংলাদেশী ও সার্বিকভাবে মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দুজনেরই মাথা তাক করে পরিকল্পিত ভাবে গুলি করে হত্যা করাকে বাঙালী কমিউনিটির লোকজন প্রথম থেকেই ‘হেইট ক্রাইম’ বলে উল্লেখ করে আসছেন। অস্কার মোরেলকে যখন আদালতে হাজির করা হয় তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার মা, ভাই এবং কয়েকজন বন্ধু। তাকে দেখে বন্ধুরা ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ এবং ‘উই লাভ ইউ’ বলে চিৎকার করে সম্ভাষণ জানায়। জানা গেছে ওইদিন ছিল মোরেলের ৩৬তম জন্মদিন। তবে মোরেলের মা বা ভাই কেউ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেননি। তবে আসামীর আইনজীবী মাইকেল শ্যুড বলেছেন, এই হত্যার কোন মোটিভ ছিল বলে তার কিছু জানা নেই। তিনি দাবী করেন তার মক্কেল নিরপরাধ। তার মক্কেল কোন ধর্মের কাউকে ঘৃণা করেন না। যে ব্যক্তি এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে হতে পারে তার মোটিভ ছিল হেইট ক্রাইম, তবে সে ব্যক্তি তার মক্কেল মোরেল নন। তিনি বলেন, মোরেল আমাকে এই কথাই জানিয়েছেন। আদালতের কার্যক্রম শেষে অস্কার মোরেলকে আবার আগামী সোমবার আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। আদালত মোরেলকে জামিন অযোগ্য আটকাদেশ দিয়েছে। এদিকে, গতদিনের শুনানির আগে মুসলিম কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সিটি হলে এক সভায় মিলিত হয়ে এই খুনের ঘটনার নিন্দা জানান। তারা বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণার পরিণতি এই হত্যাকান্ড। পুলিশ এখনও পর্যন্ত এই হত্যার মোটিভ উদ্ঘাটন করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে তারা স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু রাজনীতিক যেভাবে ভীতি ছড়াচ্ছে তাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসাকে উস্কে দিচ্ছে। আমেরিকার বহুল আলোচিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প এর বিভিন্ন সময়ে ইসলাম বিরোধী বক্তব্যের ফলেই মুসলিমদের উপর হামলার ঘটনা কেবল বেড়েই চলছে। কমিউনিটি লিডার আওয়ামী লীগ নেতা শেখ জামাল হোসেন বলেন, নিউইয়র্ক সহ পুরো আমেরিকা জুড়েই মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষের ফলেই ক্রমাগত ভাবে বেড়েই চলছে মুসলিম কমিউনিটির উপর হামলার ঘটনা। ইতিপূর্বে নিউইয়র্কের ওজন পার্ক সহ বিভিন্ন স্থানে মুসলিম কমিউনিটির লোকজন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। বাঙালী লোকজনের কাছে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় জীবন যাপন ক্রমেই ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই আমেরিকার কোথাও না কোথাও বাঙালী লোকজনের উপর হামলার খবর পাওয়া যায়।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।