দালালদের খপ্পরে পড়ে লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইউরোপের দেশ ইতালিতে মানবপাচার থেমে নেই। প্রতিদিন ঢাকা থেকে কোনো না কোনো ফ্লাইটে ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর লক্ষ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়ছে বিভিন্ন বয়সের লোকজন। তাদের প্রথম গন্তব্যই হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম নয়নাভিরাম দেশ আরব আমিরাতের দুবাই। এরপরই দালালদের লোভনীয় টোপের ফাঁদে লিবিয়া দিয়ে ভুমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে এসব হতভাগ্য। সর্বশেষ প্রাণ হারানো হতভাগ্যদের তালিকায় নাম উঠেছে মাদারীপুরের দুই তরুণের। তাদের মৃত্যুর সংবাদে সদর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামে নিহতের পরিবার ও স্বজনের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতরা হলেন পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২০) ও একই ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২৫)।
জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন মামুন শেখ ও সজল বৈরাগী। লিবিয়ায় পৌঁছে গত বুধবার একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তারা ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমান। ৩২ জনের ধারণক্ষমতার নৌযানটিতে ৫২ জনকে নিয়ে রওনা দেয়ায় পথে তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকার তলা ফেটে যায়। এতে মামুন ও সজলসহ বেশ কয়েকজন ডুবে মারা যায়। পরে খবর পেয়ে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে দেশটির কোস্টগার্ড।
নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজিব শেখ সাংবাদিকদের জানান, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী। তিনি প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নেন। সরকারিভাবে লাশ দু’টি দেশে আনা এবং দালাল মোশারফ কাজীর শাস্তির দাবি জানান তিনি। নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী বলেন, নৌকাডুবিতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া একজন ফোন করে মামুন ও আমার ছেলে সজলের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘জমি, গরু বিক্রি করে, লোন করে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে ইতালি যাওয়ার জন্য পাঠাই। কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন সত্যি হলো না। সব স্বপ্ন সাগরে শেষ হয়ে গেল। আমরা একেবারে পথে বসে গেছি। আমার ছেলেও গেল, সাথে আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। এ ঘটনায় আমরা দালাল মোশারফ কাজীর কঠিন বিচার চাই।’
এদিকে ঢাকার জনশক্তি প্রেরণের সাথে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, অবৈধভাবে লিবিয়ায় লোক পাঠানোর ব্যবসা বন্ধ না হওয়ার কারণে একদিকে যেমন সাগরপথে প্রতিনিয়ত লোক মারা যাচ্ছে বেশি তেমনি লিবিয়ার বৈধ জনশক্তি ব্যবসাও হুমকির মুখে পড়ছে। তারা মানবপাচারের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিমানবন্দরের কোনো কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশে দালালরা ভিজিট ভিসার নামে পাড়ি জমানো লোকগুলোকে বিমানবন্দর ত্যাগ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন তাদের শনাক্তের পর আইনগত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। নতুবা সম্ভাবনাময় লিবিয়ার শ্রমবাজার যেমন হাতছাড়া হতে থাকতে তেমনি অবৈধপথে ইউরোপ যাত্রাও কমবে না বলে তারা মনে করছেন।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।