শিক্ষাবিস্তারে রাসুলের আদর্শ - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৬:০১, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

শিক্ষাবিস্তারে রাসুলের আদর্শ

editorbd
প্রকাশিত আগস্ট ৫, ২০২৪
শিক্ষাবিস্তারে রাসুলের আদর্শ

ডেস্ক রিপোর্ট: মহান আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে অন্যান্য সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। মানুষ যেসব গুণে অন্যান্য মাখলুকের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, জ্ঞান তার অন্যতম। জ্ঞানার্জনের এই যোগ্যতা মহান আল্লাহতায়ালা একমাত্র মানুষকেই দান করেন। অন্য কোনো মাখলুককে তা দেননি। জ্ঞানার্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহান আল্লাহ কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেন : বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান? (সুরা জুমার ৩৯) অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন : তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞানদান করা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা তাদের মর্যাদায় উন্নত করবেন। (সুরা মুজাদালা ৫৮) অপরদিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞানার্জনকে প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ ঘোষণা করেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ইলম (জ্ঞান) অনে¦ষণ প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ। (মেশকাত পৃ: ৩৪)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে যে ঐশী বিধান নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সমাজে যে বাণী প্রচার করেন, তার মর্মকথা উপলব্ধি করার জন্যও জ্ঞান আহরণ করা ছিল অপরিহার্য। তাই তিনি সমাজের নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষাকর্মসূচি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষাবিস্তারে তিনি যে শিক্ষাদর্শন পেশ করেন, তা আজও অন্য কোনো শিক্ষাব্যবস্থা পেশ করতে পারেনি। তার মুখনিঃসৃত প্রতিটি বাণী জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল্যবান তথ্য উপকরণ হিসেবে গণ্য।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবদের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে নিরক্ষরতামুক্ত সমাজগঠনে কিছু ফলপ্রসূ কর্মসূচি হাতে নেন। মক্কি জীবনেই তিনি এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং আরকাম ইবনে আবুল আরকামের বাড়িতে একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক। আর নবদীক্ষিত সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। মদিনায় হিজরতের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আবু উসামা বিন জুবায়েরের (রা.) বাড়িতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। হজরত মুসআর বিন উমায়ের (রা.)-কে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিযুক্ত করেন। মদিনায় প্রতিষ্ঠিত এটিই সর্বপ্রথম শিক্ষালয়। মদিনায় হজরত আবু আইয়ুব আনসারির বাসভবনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে দীর্ঘ আট মাস শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাছাড়া শিক্ষার আলো আরও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেন। সাহাবায়ে কেরাম শিক্ষার আলো আহরণের জন্য মসজিদে নববিতে সমবেত হতেন। সেখানে নিয়মিত ধর্মীয় আলোচনা হতো। মসজিদে নববির আঙ্গিনায় বসবাসকারী ছাত্রদের আসহাবুস সুফফা বলা হতো। তারা সব সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্যে থেকে দ্বীনি জ্ঞান আহরণ করতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর তারাই মুসলিম বিশ্বের শিক্ষার গুরুদায়িত্ব পালন করেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা অর্জনের প্রতি সাহাবায়ে কেরামকে এতটাই অনুপ্রাণিত করেন যে, দূরবর্তী গোত্রগুলো থেকে অনেক নওমুসলিমরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য মদিনায় আসতে থাকেন। তারা কিছুদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে থেকে দ্বীনি বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে আবার স্বগোত্রে ফিরে যেতেন। একটি হাদিসে উল্লেখ আছে, মালিক ইবনে হুওয়াইরিস (রা.) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মদিনায় আগমন করেন এবং বিশ দিন সেখানে থেকে দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে জ্ঞানলাভ করেন। ফিরে যাওয়ার সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ও তার সঙ্গীদের বলেন : তারা যা কিছু শিখেছে, তা যেন তার গোত্রের লোকদের শিক্ষা দেয়।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে জীবনের চরম শত্রুকেও শিক্ষকের মর্যাদায় সমাসীন করতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি। বদরের যুদ্ধে কাফেরদের ৭০ নেতা মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এই শর্তে মুক্ত করে দেন যে, তাদের প্রত্যেকেই দশ জন করে নিরক্ষর মুসলমানকে অক্ষরজ্ঞান দান করবে। দূরবর্তী এলাকার যেসব নওমুসলিম মদিনায় আসতে পারতেন না, তাদের জন্য নিজ এলাকায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও করা হয়। এজন্য বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষকদের পাঠানো হয়। তাছাড়া ইসলামি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত গভর্নরদের প্রতি নির্দেশ ছিল-তারা যেন নিজ নিজ এলাকার অধিবাসীদের ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষাদান করেন। মোটকথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অনুসারীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে নিরক্ষরতামুক্ত একটি আলোকিত সমাজ গড়ে তোলেন।
লেখক : তরুণ আলেম, প্রাবন্ধিক (সংকলিত)

সুত্র: এফএনএস ডটকম

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।