ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। চলছে বোরোর ভরা মৌসুম। কিন্তু তারপরও নানা বাহানায় অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। গত এক মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা বেড়েছে। মিল মালিকদের মতে, মূল্যস্ফীতি, উৎপাদন খরচ ও ঈদে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। আর আড়তদাররা বলছেন, মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দেয়ায় তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে চাল। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী মোটা চালের কেজিপ্রতি ৫-৬ টাকা দাম বেড়েছে। আর মিনিকেট ও নাজিরের মতো চিকন চালের ক্ষেত্রে এ দাম ৬-৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠান ও ট্রাক মালিকরা দিনাজপুরের পাশাপাশি নওগাঁ, কুষ্টিয়াসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় চাল পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়েছেন। কোরবানি ঈদকে ঘিরে নওগাঁ থেকে চট্টগ্রামে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকের ভাড়া প্রায় ১০ হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে চালের দামে এর প্রভাব পড়েছে। বাজারে এখন চালের খুব বেশি চাহিদা না থাকলেও চালের দাম নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। এখন যেকোনো সময় তা কমতেও পারে, বাড়তেও পারে। সূত্র জানায়, উত্তরের জেলা নওগাঁর বাজারে বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫১-৫২ টাকা, ব্রি-২৮ ৫৬-৫৭, সুভলতা ৫৭-৫৮, জিরাশাইল ৬২-৬৩ ও কাটারীভোগ ৬১-৬৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। খুচরা ব্যবসায়ীদের মতে, এ মুহূর্তে পাইকারিতে চালের দাম বেড়ে যাওয়া অযৌক্তিক। খুচরা বাজারে কোনো সিন্ডিকেট হয় না। আড়ত ও মিলগেটে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে চালের দাম। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বর্তমানে বস্তাপ্রতি চালের দাম সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকার মতো বেড়েছে। অজুহাত হচ্ছে- পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে বস্তাপ্রতি চালে ১০-১২ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। আর এর সুযোগ নিয়ে মোকাম ও বড় পাইকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতায় প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি- চালের দাম বৃদ্ধির এ ঘটনা সাময়িক। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে আশা করা যায় চালের দাম কমে আসবে। সূত্র আরো জানায়, সরকারিভাবে দেশে গত কয়েক মৌসুমে রেকর্ড উৎপাদনের দাবি করা হলেও সাম্প্রতিক সময় দফায় দফায় চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠতে দেখা গেছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত চাল আমদানি করেনি সরকার। ফলে সরকারি গুদামগুলোকে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণ ও চাহিদা মেটানোর জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ লাখ ৫২ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৮৫ হাজার ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছয় লাখ টন চাল আমদানি করে সরকার। কিন্তু চলতি বছর দেশের মানুষের প্রধান এ খাদ্যপণ্যটি আমদানি করা হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর সুযোগ নিচ্ছেন মিল মালিকরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় খাদ্যশস্য বিতরণ হয়েছে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। ফলে সরকারের মজুদ কমার সুযোগে বিভিন্ন সময়ে চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এদিকে বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক বলছেন নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার। তার মতে, চালকলগুলো পুরোপুরি চালু হলে শিগগিরই চালের বাজার আবারো নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে। কারণ এখনো জেলার বেশির ভাগ চালকল বোরো মৌসুমের ধান থেকে চাল উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেনি। মোকামে চালের সরবরাহ সংকটের কারণে বর্তমানে বেশি দামে চাল কেনা-বেচা হচ্ছে।
সুত্র: এফএনএস ডটকম
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।