অনলাইন ডেস্ক:
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী ঢুকে পড়ার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় আসছে কিয়েভে পশ্চিমা সামরিক সহায়তার বিষয়টি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালানোর অনুমতি চেয়ে আসছেন।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে এই অনুমতি দিয়েছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বৈঠকেও উঠে আসে বিষয়টি। তবে দৃশ্যত ওই বৈঠক থেকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে ইউক্রেনকে সবুজসংকেত দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনকে দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল ব্যবহারের অনুমতি দিতে বাইডেনকে রাজি করানোর চেষ্টা হয়েছে কি না, বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, ‘একাধিক বিষয়ে আমাদের মধ্যে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে নতুন কোনো নীতি ঘোষণার পরিকল্পনা করছে না যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি। তিনি বলেন, ‘রুশ ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনকে অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মধ্যকার বৈঠক থেকেও আমি এ বিষয়ে বড় কোনো ঘোষণা আশা করি না।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সঙ্গে আলাপকালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, পশ্চিমারা যদি ইউক্রেনকে রুশ ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমোদন দেয়, তাহলে তার অর্থ দাঁড়াবে ন্যাটো কর্তৃক রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া। যদি তা-ই হয়, সে ক্ষেত্রে রাশিয়া যে হুঁশিয়ারির মুখোমুখি হবে, তার ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনে পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি যদি ন্যাটোর সামরিক কর্মীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়, তবে জোটটি সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে। কারণ, এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যের পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথ নিয়ন্ত্রণের সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। এ কাজে দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইউক্রেনের নেই। তাই তাদের এ কাজগুলো করতে হবে ন্যাটো জোটের মাধ্যমে। ফলে বিষয়টি শুধু রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে সম্মতি দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আসল প্রশ্ন হচ্ছে, সামরিক সংঘাতে ন্যাটো সদস্যরা জড়াবেন কি না।’
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত যদি পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনকে রাশিয়ায় হামলার অনুমতি দেয়, তার প্রতিক্রিয়া হতে পারে ভয়াবহ। তাঁরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে রাশিয়া তার আশপাশে থাকা ব্রিটিশ সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালাতে পারে এবং ভয় দেখানোর জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে।
জার্মানির হামবুর্গ ইনস্টিটিউট ফর পিস রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির অস্ত্র বিশেষজ্ঞ উলরিখ কুয়েন রয়টার্সকে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুতিনের পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পশ্চিমাদের ভয় দেখাতে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা সংঘাতকে নাটকীয়ভাবে আরও উসকে দেবে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।