ইসলামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ১:২৮, ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

ইসলামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

editorbd
প্রকাশিত জানুয়ারি ৪, ২০২৫
ইসলামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

ডেস্ক রিপোর্ট:

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য সব দৃষ্টান্ত। মদিনায় হিজরতের পর তিনি একটি চুক্তি করেছিলেন যা ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত। এটি ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান এবং এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মুসলিম ও অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষা করা।

মদিনা সনদ অনুযায়ী : ১. মুসলিম এবং ইহুদি সম্প্রদায় মদিনায় পরস্পর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকবে। ২. উভয় সম্প্রদায় নিজেদের ধর্ম পালনে স্বাধীন থাকবে। ৩. মদিনায় কেউ কাউকে আক্রমণ করবে না এবং বাইরের আক্রমণের ক্ষেত্রে সবাই মিলে প্রতিরোধ করবে। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মাইলফলক হিসাবে ইতিহাসে চিহ্নিত।

হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেই ব্যক্তি নও, যে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি জুলুম করে, তাদের অধিকার হরণ করে বা তাদের প্রতি কঠোর হয়।’ (আবু দাউদ)। এ হাদিসে স্পষ্টভাবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সুবিচার এবং সম্মানের নির্দেশনা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিবেশীর অধিকার নিশ্চিত করা ইমানের একটি অংশ।

তিনি বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না, যার প্রতিবেশী তার অন্যায় বা ক্ষতির কারণে নিরাপদ নয়।’ (সহিহ বুখারি, ৬০১৬)। এ হাদিসে প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম মূলনীতি।

ইসলাম যুদ্ধ বা হিংসার পরিবর্তে শান্তি ও সংলাপের ওপর গুরুত্ব দেয়। যুদ্ধের সময়ও ইসলাম শত্রুপক্ষের ধর্মীয় উপাসনালয় ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করার নির্দেশ দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধের জন্য সাহাবাদের প্রেরণ করার সময় বলতেন, ‘কোনো নারী, শিশু, বৃদ্ধ বা ধর্মীয় ব্যক্তিকে হত্যা করবে না। উপাসনালয় ধ্বংস করবে না।’ – (মুসলিম শরিফ)

বর্তমান বিশ্বে সাম্প্রদায়িক বিরোধ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ধর্মের নামে হিংসা এবং বিভাজনের ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা এসব হিংসার বিপরীতে শান্তি এবং সহযোগিতার আদর্শকে তুলে ধরে। বিশ্বায়নের যুগে, যেখানে ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি এবং জাতির মানুষের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব আরও বেড়েছে।

ইসলাম শিক্ষা দেয় কিভাবে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ পরস্পর সম্মানের সঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে। ইসলামের মূলভিত্তি হলো তাওহিদ বা একত্ববাদ, যা মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ হতে উৎসাহিত করে।

এটি মানবজাতির জন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূল মন্ত্র হলো আল্লাহর সৃষ্টি হিসাবে মানুষকে ভালোবাসা এবং তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা।

কুরআনে উল্লেখিত একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। সঠিক পথ ভ্রান্ত পথ থেকে পৃথক হয়ে গেছে।’ (সূরা আল-বাকারা, ২:২৫৬) এ আয়াত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, ইসলাম ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতাকে সমর্থন করে না। এটি ব্যক্তির স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয় এবং অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান করতে বলে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।