সাউথ এশিয়া ডেস্ক:
সিন্ধু সভ্যতার প্রাচীন লিপির অর্থ উন্মোচনে এক মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন। এই লিপি বহুদিন ধরে গবেষকদের জন্য এক রহস্য হয়ে রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা প্রায় ৫ হাজার ৩০০ বছর আগে বর্তমান ভারত ও পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম অংশে গড়ে ওঠে। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম নগর সভ্যতাগুলোর একটি। এর ধনাঢ্য কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পোড়ামাটির ইটের শহরে বসবাস করতেন। সভ্যতাটির আকস্মিক পতনের কারণ আজও অস্পষ্ট এবং সবচেয়ে বড় রহস্য হলো এর অমীমাংসিত লিপি।
লিপি বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি চিহ্ন ও প্রতীকের একটি সংমিশ্রণ। এগুলো সাধারণত বাণিজ্যিক লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত পাথরের সিলমোহর বা মৃৎপাত্রে পাওয়া যায়। তবে লিপির ভাষা, শাসনব্যবস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে এখনও কোনও নির্ভরযোগ্য সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের কম্পিউটার বিজ্ঞানী রাজেশ পি এন রাও বলেন, সিন্ধু লিপি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত লিপি। এটি কাঠামোগত হলেও এর ভাষা অজানা।
গবেষণার অগ্রগতি
গবেষক নিশা যাদব ও তার দল মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ থেকে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে লিপি বিশ্লেষণ করছেন। তারা ৬৭টি চিহ্ন চিহ্নিত করেছেন, যা লিপির ৮০ শতাংশের বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে।
একটি মেশিন লার্নিং মডেলের মাধ্যমে গবেষকরা ধ্বংসপ্রাপ্ত ও অস্পষ্ট লিপির পুনর্গঠন করেছেন। নিশা যাদব বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, লিপিটি কাঠামোগত এবং এর লেখার মধ্যে একটি সুসংগঠিত যুক্তি রয়েছে।
সিন্ধু লিপি উন্মোচনে মূল চ্যালেঞ্জ এর অল্প সংখ্যক চিহ্ন—প্রায় ৪ হাজারটি, যা সাধারণত ছোট বস্তু যেমন সিলমোহর বা ট্যাবলেটে পাওয়া যায়। দীর্ঘ পাঠ্য যেমন দেওয়াল বা পাথরের ফলকে পাওয়া যায়নি।
গবেষণায় একটি বড় সমস্যা হলো দ্বিভাষিক নিদর্শনের অনুপস্থিতি, যা মিসরের হায়ারোগ্লিফ পড়তে রোজেটা স্টোন সাহায্য করেছিল।
পুরস্কার ঘোষণার কারণ
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর এই পুরস্কার ঘোষণা গবেষণার গতি বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সিন্ধু লিপির অনেক চিহ্ন তামিলনাড়ুর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর চিহ্নের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। গবেষক কে রাজন ও আর শিবানান্থন জানিয়েছেন, এটি সিন্ধু উপত্যকা ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ইঙ্গিত দেয়।
তবে গবেষকরা মনে করেন, এই পুরস্কারের দাবিদার শিগগিরই কেউ হতে পারবেন না। নিশা যাদবের কথায়, সিন্ধু সভ্যতার মানুষ কী লিখেছিলেন আমরা তা সত্যিই জানতে চাই।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।