ভয়ের সংস্কৃতির ভেঙেছে তারুণ্য - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৭:১৪, ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

ভয়ের সংস্কৃতির ভেঙেছে তারুণ্য

editorbd
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
ভয়ের সংস্কৃতির ভেঙেছে তারুণ্য

সম্পাদকীয়:

সামাজিক তারুণ্য মনে হচ্ছিল অনুপস্থিত, যেন হারিয়েই গেছে, সেই তারুণ্যের বিদ্রোহ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এর ফলে এমন একটি সরকারের পতন ঘটল, যেটি স্বৈরাচারের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এবং আশা করছিল কমপক্ষে আরও ১৫ বছর থাকবে। সে ব্যবস্থা মোটামুটি পাকাপোক্তই করে ফেলেছিল। তারুণ্য শুধু যে বিদ্রোহই করেছে তা নয়, সৃজনশীলতাও দেখিয়েছে।

সরকার পতনের পর তিন-চার দিন রাজধানীতে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছে; ছেলেরা ছিল, মেয়েরাও এসেছে। তারপর এলো ভয়াবহ এক বন্যা। তখন দেখা গেল তরুণরা ত্রাণেও কেমন উদ্ভাবনশীল ও সমর্থ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েরা রাত-দিন ত্রাণ সংগ্রহ করেছে, ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বন্যাপীড়িত মানুষের কাছে ছুটে গেছে। ছেলেমেয়েতে কোনো পার্থক্য ছিল না, ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানি মনে হয়েছে মিথ্যা প্রচারণা। বন্যার বিরুদ্ধে পালটা এক বন্যা, ধ্বংসের বিরুদ্ধে সৃষ্টির। মানুষ এখন একে অপরকে বিশ্বাস করতে ভয় পায়; আস্থায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ; কিন্তু শিক্ষার্থীদের ত্রাণের উদ্যোগে মানুষের আস্থা দেখা গেল অতুলনীয়। নগদ অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে শত শত মানুষ ছুটে এসেছেন। কে কার আগে দান করবেন, তার প্রতিযোগিতা।

মানুষ কাজ চায়, শুধু জীবিকার নয়, মানুষ জীবনের কাজও করতে প্রস্তুত; জীবনের কাজটা সমাজ বদলের। অভাব যার, সেটি হলো আন্দোলন। ওই আন্দোলন বুর্জোয়ারা করবে না, বুর্জোয়ারা বৈষম্যবিরোধী নয়, তারা বৈষম্য সৃষ্টি ও লালন-পালনের পক্ষে; আন্দোলন করতে হবে বৈষম্যবিরোধীদের, অর্থাৎ সমাজতন্ত্রীদের।

সমাজতন্ত্রীরা যদি একটি সুনির্দিষ্ট ও অতীব প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে, তবে দেখা যাবে সেই ফ্রন্টে মানুষ কীভাবে সাড়া দিচ্ছে এবং অসম্ভবকে সম্ভব করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ১৯৫৪-এর নির্বাচনে পাঁচমিশালি একটি যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল, তাতে মুসলিম লীগের পতন ভিন্ন অন্য কিছু অর্জিত হয়নি। এখন আর পাঁচমিশালি না, প্রয়োজন সমাজতন্ত্রীদের যুক্তফ্রন্ট।

ক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাফল্য সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য সমাজতন্ত্রীদের আবারও বলছে, মিলিত হতে, মিলিত হয়ে সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্ভব করে তোলার পথে এগোতে হবে। এ যুক্তফ্রন্ট জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে; ওই পথে সামাজিক বিপ্লব ঘটবে এ আশা নিয়ে নয়, সমাজ বিপ্লবের পক্ষে জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে জনমত এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য।

নির্বাচনের আগে দাবি হওয়া চাই প্রান্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে আসন বণ্টনের এবং নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে রাষ্ট্রীয় সংবিধানে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক উপাদান যুক্ত করার অধিকার দানের। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ ঘোষণাটাও থাকা চাই, বাহাত্তরের সংবিধানে গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রগঠনের যে অঙ্গীকার ব্যক্ত ছিল, সংবিধানকে তা কোনোমতেই অমান্য করবে না।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।