গাজা ইস্যুতে গোপন পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আলোচনা
০৯ মে ২০২৫, ০১:২৮ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট : গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি সাময়িক প্রশাসন গঠনের বিষয় নিয়ে গোপনে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও অবগত পাঁচ ব্যক্তি এমনটাই জানিয়েছেন। খবর রয়টার্সের। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আলোচনাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, ইরাক যুদ্ধের পর এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ সামরিক-রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হতে পারে। আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে এমন একটি প্রস্তাব, যেখানে একজন মার্কিন কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী প্রশাসন গাজা পরিচালনা করবে।
গাজা নিরস্ত্রীকরণ ও স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসা এবং একটি টেকসই ফিলিস্তিনি প্রশাসনের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত এটি কাজ করবে। এই সম্ভাব্য মার্কিন-নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থাপনার সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সরেজমিন পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হবে এ প্রশাসন কত দিন চলবে। সংশ্লিষ্ট পাঁচ জন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ প্রস্তাব অনেকটা ২০০৩ সালে ইরাকে গঠিত ‘কোয়ালিশন প্রোভিশনাল অথরিটি’র মতো। ঐ সময় ইরাক যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করেছিল, যা পরে স্থানীয় বিদ্রোহের মুখে পড়ে এবং এক বছরের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়।
সূত্রগুলো আরো জানায়, প্রস্তাবিত প্রশাসনে অন্য দেশগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এই প্রশাসনে ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের স্থান দেওয়ার কথা বলা হলেও হামাস কিংবা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এতে থাকবে না। গাজা শাসনকারী হামাস এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া অফিসের পরিচালক ইসমাইল আল-খাওবাতা বলেন, আমাদের জনগণ নিজেরাই তাদের শাসক বেছে নেবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রশাসন তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এপ্রিলে আমিরাত-নিয়ন্ত্রিত স্কাই নিউজ আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার বলেছিলেন, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ‘আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে’ গাজা পরিচালিত হতে পারে। যেখানে ‘মধ্যপন্থি আরব দেশগুলো’ অংশ নেবে এবং ফিলিস্তিনিরা তাদের দিকনির্দেশনায় কাজ করবে। তবে কোন দেশগুলো এই তত্ত্বাবধানে থাকবে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র সরাসরি পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে তিনি বলেন, আমরা শান্তি চাই এবং জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি চাই। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার: আমরা ইসরায়েলের পাশে আছি এবং আমরা শান্তির পক্ষে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি অস্থায়ী প্রশাসন গঠনের উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রকে আরো গভীরভাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে জড়িয়ে ফেলবে। মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয় পক্ষই এটিকে দখলদারত্ব হিসেবে বিবেচনা করতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত, ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য শর্ত দিয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্তি এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ থাকতে হবে।