বাদল সৈয়দ
অনেকদিন পর ভদ্রলোকের সাথে দেখা। তাঁকে আমি খুব পছন্দ করতাম। কারণ এত স্বজ্জন লোক খুব কম হয়। আরেকটি কারণ হলো, তাঁর দুছেলেই ছিল সেরা ছাত্র। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে তাঁর বাচ্চাদের কথা শুনতাম।
সময় পেরিয়ে গেছে প্রায় এক যুগ। তিনি অনেক আগেই সত্তর পেরিয়েছেন। কিন্তু শরীরের টানটান ভাব অটুট, বরং চেহারায় এক ধরনের নতুন আভা দেখা যাচ্ছে, যা আগে দেখিনি। এটাসেটা আলাপ করার পর জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা,আপনার ছেলেরা কী করছে?
তিনি বললেন, ‘উপরওয়ালার কৃপায় বড়োটি বুয়েট থেকে বের হয়ে এমআইটি থেকে পিএইচডি করেছে। ছোটোটিও বছর খানেক আগে বুয়েট থেকে রেকর্ড মার্ক নিয়ে ফার্স্ট হয়ে সেখানেই জয়েন করেছে। তবে এখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে। পড়া শেষে ফিরে আসবে।’
শুনে আমার খুব ভালো লাগল। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কেমন আছেন?’
‘খুব ভালো, বছরের একটি সময় ওদের সাথে কাটাই, বাকি সময় দেশে আগের কোম্পানিতেই চাকুরি করি। মালিক আমাকে ছাড়েননি।’
কিছুটা লজ্জা ভেঙে বললাম,আচ্ছা, ‘এই যে আপনার বাচ্চারা এত ভালো করছে এর সিক্রেট কী?’
তিনি বললেন, ‘কোনো সিক্রেট নেই তবে কিছু উপদেশ আছে। আগ্রহী হলে বলতে পারি।’
‘অবশ্যই বলুন।’
আচ্ছা, শুনুন তাহলে….,
অবশ্যই দ্বীনি শিক্ষা দিবেন, তাহলে ভবিষ্যতে বৃদ্ধ জীবন শান্তির হবে ইনশাআল্লাহ, পাশাপাশি…..
১. খান বা না খান বাচ্চাদের সেরা শিক্ষকের কাছে পড়াবেন। মনে রাখবেন, টাকা দিয়ে সেরা শিক্ষক পাওয়া যায় না, সেরা শিক্ষক জ্ঞান ও মন যার ভালো তিনি।
২. তাদের শরীর ঠিক রাখার সব ব্যবস্থা নেবেন। সামান্য অসুস্থ হলেও ভালো ডাক্তারের কাছে নেবেন।
৩. সব সময় উপরওয়ালার কাছে সন্তানের শান্তির জন্য প্রার্থনা করবেন। আসলে শান্তির চেয়ে বড় সাফল্য আর নেই।
৪। বাচ্চাদের সামনে ঝগড়া করবেন না। বাবা-মার ঝগড়া হচ্ছে টর্নেডো। তা বাচ্চার ভবিষ্যত উড়িয়ে নিয়ে যায়।
৫। প্রয়োজনে কঠোর হবেন। বাবা-মা দরকারে শক্ত না হলে সন্তানের ভবিষ্যত ‘নরম’ হয়ে যায়।
৬। তাদের গতিবিধি খেয়াল রাখবেন। আমার ছেলেরা টেম্পু চরে স্কুল/ কলেজে যাওয়ার সময় তারা জানতো না যে, পেছনের টেম্পুতে আমি তাদের ফলো করছি। সব কাজ ফেলে আমি এটা করতাম। কারণ, একটা বয়স পর্যন্ত এভাবে নজর রাখার দরকার আছে।
৬। বাচ্চাদের জন্য একটি উপদেশই যথেষ্ট, তাহলো, ‘তুমি মানুষ, পশু নও, তাই তোমাকে মানুষের আচরণ করতে হবে, পশুর নয়।’
৭। স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেবেন। কারণ আসলে বাচ্চারা মানুষ হয় মায়ের হাতে, বাবারা তেমন সময় দিতে পারেন না।
একটানা কথা বলে তিনি দম নিলেন। তারপর বললেন, ‘বাচ্চা মানুষ করার জন্য এগুলোই যথেষ্ট,আর কিছু লাগবে না।’
ভদ্রলোক হাসছেন, তাতে এক ধরনের আলো, আমি সে আলোয় ডুবে যাচ্ছি।
(আমি সবসময় সফল বাবা-মাদের কাছে তাঁদের সিক্রেট কী তা জিজ্ঞেস করি।)
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।