ডেস্ক রিপোর্ট : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শায়খ হামজা ইউসুফকে তাঁর ‘রিলিজিয়াস লিবার্টি কমিশন’-এর উপদেষ্টা বোর্ডে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে এই নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। শায়খ হামজাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামিক ধ্রুপদী শিক্ষার অগ্রণী প্রচারক এবং প্রথম স্বীকৃত মুসলিম লিবারেল আর্টস কলেজ ‘জায়তুনা কলেজ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, বার্কলের গ্র্যাজুয়েট থিওলজিক্যাল ইউনিয়নের ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টারের উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর ভূমিকার কথাও বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে। গত ১ মে হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে এক বহুধর্মীয় অনুষ্ঠানে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে এই কমিশন গঠন করেন। ২৬ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশনের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা ও উন্নয়নে ফেডারেল সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। কমিশনে খ্রিস্টান ও ইহুদি নেতাদের পাশাপাশি শায়খ হামজা এবং ইসমাইল রয়ারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রয়ারকে ‘রিলিজিয়াস ফ্রিডম ইনস্টিটিউট’-এর ইসলাম অ্যান্ড রিলিজিয়াস ফ্রিডম অ্যাকশন টিমের পরিচালক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
শায়খ হামজার এই নিয়োগ মার্কিন মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশের মধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এর প্রধান কারণ ট্রাম্পের ইসরায়েলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান। এছাড়া, শায়খ হামজার অতীতের কয়েকটি বক্তব্য ও সংশ্লিষ্টতাও বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। ২০০১ সালের আগে পশ্চিমা নীতির কঠোর সমালোচক হলেও ৯/১১ পরবর্তী সময়ে শায়খ হামজা তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেন। তিনি “ন্যায়ের চেয়ে স্থিতিশীলতা”র পক্ষে অবস্থান নেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও কথা উঠেছে। শায়খ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ (ইউএই-এর ফতোয়া পরিষদের চেয়ারম্যান) এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এবং ইউএই-এর শান্তি ফোরামে অংশগ্রহণকে অনেকে রাজনৈতিক আপস হিসেবে দেখে থাকেন।
২০১৬ সালে সিরিয়ান বিপ্লবের স্লোগানকে উপহাস করা এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার দায় তাদের নিজেদের উপর চাপানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে কম বর্ণবিদ্বেষপূর্ণ দেশ” এমন মন্তব্য ও ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে অনীহা প্রকাশের কারণে শায়খ হামজা সমালোচিত হয়েছেন। সমালোচনার জবাবে শায়খ হামজা তাঁর কাজকে ইসলামিক মূল্যবোধ ও শিক্ষার প্রসারের প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। জায়তুনা কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পশ্চিমে ইসলামিক জ্ঞানচর্চাকে এগিয়ে নেওয়াকে তিনি তাঁর প্রধান অর্জন হিসেবে উল্লেখ করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বদলে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দেওয়াকে তিনি অগ্রাধিকার দেন বলে জানান।
সরকারি উদ্যোগে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় প্রভাবশালী মহলে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করে। ইউএই-এর ফোরাম ফর প্রমোটিং পিস বা ট্রাম্প প্রশাসনের কমিশনে কাজকে তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতার লড়াইয়ে সংলাপের মাধ্যম হিসেবে দেখেন। মার্কিন মুসলিম নেতা ও সক্রিয়দের একটি বড় অংশ এই নিয়োগকে ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ট্রাম্পের সমর্থন এবং মুসলিম টার্গেটেড নীতির পরিপ্রেক্ষিতে শায়খ হামজার সম্পৃক্ততা তাদের মতে “স্ববিরোধী”। অন্যদিকে, কিছু সমর্থক যুক্তি দেখান যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইসলামিক কণ্ঠস্বর অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
রয়ারের নিয়োগও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ১৯৯২ সালে ইসলাম গ্রহণকারী রয়ার ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক পণ্ডিতদের অধীনে পড়াশোনা করেছেন এবং অলাভজনক ইসলামিক সংগঠনে এক দশকের বেশি কাজ করেছেন। তাঁর লেখনী এবং আন্তধর্মীয় শান্তি প্রচেষ্টাকে হোয়াইট হাউস ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তবে, কিছু বিশ্লেষক প্রশ্ন তোলেন যে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা কি প্রকৃতপক্ষে মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। এই কমিশনকে কিছু মহল “খ্রিস্টিয়ান ন্যাশনালিজম” এর হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন। স্কুল চয়েস, প্যারেন্টাল রাইটসের মতো ইস্যুতে কমিশনের ফোকাসকে তারা ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন। অন্যদিকে, সমর্থকরা যুক্তি দেন যে ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা সকল নাগরিকের অধিকারের জন্য জরুরি। ট্রাম্পের এ মেয়াদে গঠিত এই কমিশন মার্কিন ধর্মীয় পরিমণ্ডলে কী প্রভাব ফেলে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে, শায়খ হামজার মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের সম্পৃক্ততা নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। এই নিয়োগ ইসলামিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
Desk: K