তীব্র দূষণে জীববৈচিত্র্যহীন ও পানযোগ্যতার সীমার বাইরে চলে দেশের নদীগুলোর পানি – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সন্ধ্যা ৭:৩২, ১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

তীব্র দূষণে জীববৈচিত্র্যহীন ও পানযোগ্যতার সীমার বাইরে চলে দেশের নদীগুলোর পানি

newsuk
প্রকাশিত নভেম্বর ১, ২০২৫
তীব্র দূষণে জীববৈচিত্র্যহীন ও পানযোগ্যতার সীমার বাইরে চলে দেশের নদীগুলোর পানি

Manual5 Ad Code

ডেস্ক রিপোর্ট : জীববৈচিত্র্যহীন ও পানযোগ্যতার সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে দেশের নদীগুলোর পানি। গত ১৫ বছরে দেশের নদীগুলোতে দূষণের মাত্রা তিনগুণ বেড়েছে। ওই সময়ে বুড়িগঙ্গায় দূষণ ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশে, পদ্মায় ১৮ থেকে ৬৫, যমুনায় ১০ থেকে ৫৫ এবং মেঘনায় ১৫ থেকে ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। ঢাকার নদীগুলোয় প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ কোটি লিটার বর্জ্য মিশছে। যার অন্তত ৬০ শতাংশই অপরিশোধিত শিল্পবর্জ্য। ফলে অক্সিজেনের মাত্রা ১.৫ মিলিগ্রাম/লিটারে নেমে এসেছে। যা জীববৈচিত্র্যের জন্য একেবারেই প্রতিকূল। পরিবেশ অধিদফতর (ডিওই) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর প্রাণ বুড়িগঙ্গা এখন কার্যত মৃত নদী। ওই নদীর পানি এখন কালচে, দুর্গন্ধযুক্ত, প্রাণহীন-নিস্তব্ধ। বুড়িগঙ্গার পানি  জীবন বহন না করে বিষ বহন করছে। শিল্পবর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য ও প্লাস্টিকের বর্জ্যে বিষাক্ত মিশ্রণ হয়ে উঠেছে নদীর পানি। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, ঢাকার আশপাশের তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা নদীও এখন পরিণত হয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে। আর শুধু ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ছাড়াও মেঘনা, যমুনা, পদ্মা, কর্ণফুলীসহ দেশের প্রধান নদীগুলোর পানিও এখন মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

Manual4 Ad Code

সূত্র জানায়, ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব, দ্রুত নগরায়ন, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং নিষ্কাশন-ব্যবস্থার ঘাটতি কেড়ে নিচ্ছে বাংলাদেশের নদীগুলোর প্রাণ। ঢাকার চারপাশে নদীতে প্রতিদিন বিষ ঢালছে হাজারো কারখানা, ডাইং ইউনিট ও চামড়াশিল্প। এ অবস্থা শুধু পরিবেশ নয়, কৃষি, মাছচাষ, এমনকি জনস্বাস্থ্যকেও ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আগামী এক দশকের মধ্যে জীববৈচিত্র্যহীন ও পানযোগ্যতার সীমার বাইরে চলে যাবে দেশের বড় নদীগুলোর ৮০ শতাংশ পানি। যদিও নদী দখল ও দূষণ রোধে বিগত সরকার অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছেল। আর ওসব প্রকল্পের নামে লুটপাট হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। শুধু বুড়িগঙ্গা বাঁচানোর নামে গত ১২ বছরে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে নদীর তলদেশ থেকে পলিথিন পরিষ্কার, ওয়াকওয়ে, সীমানা পিলার, গ্রিনেজ, ইকোপার্ক প্রকল্প ইত্যাদি। ওসব প্রকল্পে নদীর কোনো উপকারই হয়নি। বরং আগের চেয়ে বেড়েছে নদীর দূষণ আর দখল। নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ফলে মাছ বা অন্যান্য জলজপ্রাণী বুড়িঙ্গা নদীর পানিতে বেঁচে থাকতে পারে না। মূলত ওসব প্রকল্পে নদীকে ধ্বংস করা হয়েছে। সীমানা পিলার দিয়ে অবৈধ দখলদারদের বৈধতা দেয়া হয়েছে এবং নদীকে খালে পরিণত করা হয়েছে। আর ভরাট করা হয়েছে নদীর সঙ্গে যুক্ত ছোট ছোট খাল।

Manual8 Ad Code

সূত্র আরো জানায়, বিগত সরকার ২০০৯ সালে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ভুল পরিকল্পনার কারণে একযুগের বেশি সময়েও প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়নি। ওই প্রকল্পে যেসব কাজ করা হয়েছিল, সেগুলোও দৃশ্যমান নয়। বুড়িগঙ্গা নদীর পানির প্রবাহ দৃশ্যমান করার জন্য যেভাবে নদী খননের কথা ছিল, তার নকশায় ছিল গলদ। জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে নানা বাধায় তা অগ্রসর হয়নি। বুড়িগঙ্গা নদী উদ্ধার করতে গিয়ে ২২টি সেতু ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় প্রকল্পের কাজসম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় প্রায় এক হাজার ২০০ কোটিতে গিয়ে ঠেকলেও বুড়িগঙ্গার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আবার ওই  প্রকল্প চলমান অবস্থার মধ্যেই ঢাকার চারপাশের চারটি নদীর অবৈধ দখল বন্ধ করতে পরে ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) হাতে নেয় আলাদা একটি প্রকল্প। ওই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের তীরভূমি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করা। কিন্তু ভুলের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হয়। দুই বছর পর ভুল পরিকল্পনা সংশোধন করে নতুন করে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। ফলে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পটির কাজ শেষ না হয়েও খরচ বেড়েছে। আর নতুন করে ঢাকার চারটি নদী রক্ষার প্রকল্পের ব্যয়ও অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। ফলে সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। তাছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বুড়িগঙ্গার দূষণরোধে এর তলদেশ থেকে পলিথিন ওঠানো, পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও কিছুদিন পর আবার তা বন্ধ হয়ে যায়।

Manual2 Ad Code

এদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও দায়িত্ব গ্রহণের পর নদীদূষণ ও দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই অদৃশ্য কারণে ওই কার্যক্রম থেমে যায়। অথচ বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার পাশের নদী বাঁচাতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কিন্তু কোনো সংস্থার একার পক্ষে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। সেজন্য পরিবেশ, নৌপরিবহন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ওসব মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে কাজ করা প্রয়োজন।

অন্যদিকে এ বিষয়ে পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত জানান, নদীদূষণ ও দখলমুক্ত করতে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাছাড়া নদীর দখল ও দূষণমুক্ত করা সম্ভব নয়। কারণ নদী দখলকারীরা সরকারের ছত্রছায়ায় রয়েছে। যেসব কোম্পানির কেমিক্যাল বর্জ্য নদীদূষণ করছে তাদের মালিকরাও রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকে। সেজন্যই নদীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করতে হলে রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে দল সরকারের থাকে তাদেরকে আন্তরিক হতে হবে। বর্তমান সরকারের ইচ্ছা থাকলেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। নদী বাঁচাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

Manual2 Ad Code

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code