মান্দার গণেশপুরে ঝুট কাপড় থেকে সুতা তুলে জীবিকা নির্বাহ - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৬:২৯, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

মান্দার গণেশপুরে ঝুট কাপড় থেকে সুতা তুলে জীবিকা নির্বাহ

ADMIN, USA
প্রকাশিত জানুয়ারি ৭, ২০২০
মান্দার গণেশপুরে ঝুট কাপড় থেকে সুতা তুলে জীবিকা নির্বাহ

 

মান্দা (নওগাঁ):
নওগাঁর মান্দায় ৫নং গনেশপুর ইউনিয়ন ও তার আশপাশের প্রতিটি বাড়ি যেন এক একটি ঝুট কাপড় থেকে সুতা তৈরির কারখানা। এখানে ঝুটের কাপড় থেকে তৈরি হচ্ছে নানান রঙ-বেরঙের বিভিন্ন সাইজের সুতা।

যা পাল্টে দিচ্ছে প্রান্তিক জনপদের অসহায় নারী-পুরুষের জীবন-যাত্রার মান ও গ্রামীণ অর্থনীতি। পাশাপাশি তা জাতীয় উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা স্বচল রাখতে নিরব ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

উপজেলার গনেশপুর গ্রামের কারিগরপাড়ার প্রায় শতাধিক বাড়িতে পরিবারের প্রায় ১ হাজার নারী-পুরুষ এই পেশার সাথে জড়িত। এই পেশাকে সামনে রেখে এখানে গড়ে উঠেছে একটি গামছা-তোয়ালা তৈরীর কারখানা। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা, দক্ষ শ্রমিক, পুঁজি সংকট এবং প্রশিক্ষণ না থাকায় নানা রকমের সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে সুতা তোলার সাথে জড়িতদের ।

সরকার পক্ষ থেকে প্রাথমিক ভাবে ঋন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের সুযোগ পেলে এখানকার সুতা শিল্প জাতীয় উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এই পেশার সাথে জড়িতরা।

উল্লেখ্য,মান্দার গনেশপুর- কারিগরপাড়ায় গার্মেন্টেসের ঝুট কাপড় থেকে সুতা তুলে জীবিকা নির্বাহ করছে শতাধিক পরিবারের লোকজন। জানাগেছে, প্রতিটি ঝুট কাপড়ের বস্তার ওজন প্রায় ৮০-৮৫ কেজি।

প্রতিকেজি ঝুট কাপড়ের দাম ৪৫ টাকা। একটি বস্তা থেকে সুতা তুলে বিক্রির পর লাভ আসে প্রায় এক হাজার ৫ শ’ টাকা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে এবং সংসারের কাজের ফাঁকে সপ্তাহে ২০-২৫ কেজি ঝুট কাপড় থেকে সুতা তোলা যায়। এই পেশার সাথে জড়িতরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। সেই সাথে বেকারত্ব দূর হবে এমনটাই আশা করেন সচেতন মহল।

উপজেলার গনেশপুর ইউপি’র গনেশপুর গ্রামের (কারিগরপাড়া) মৃত কুকড়া শেখের ছেলে মছির উদ্দিন শেখ ঝুট কাপড় থেকে সুতা তুলে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে কিভাবে এই পাড়ার চিত্র পাল্টে যাচ্ছে সে ব্যাপারে তিনি জানান,

এখানকার আব্দুস সামাদের ছেলে মাসুদের বাড়িতে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার শাওইল থেকে গত বছর তিনেক আগে একদিন বেড়াতে এসে অত্র এলাকার স্বল্প আয়ের গরীব অসহায় মানুষদের জীবন-জীবিকা সম্পর্কে জানার পরে এসব গরীব -দু:খী মানুষদের ভাগ্য উন্নয়নে বিষয়টি মাথায় রেখে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলেন যে আপনরাতো অধিকাংশ সময় বসেই থাকেন, তাহলে আপনাদের একটা কাজ দিই বলে এসব ঝুট কাপড় এবং ঝুট কাপড় থেকে কাপড় তোলার চড়কি মেশিন দিয়ে যান। বিনিময়ে ঝুট কাপড় থেকে সুতা তোলার জন্য ১৫/ ২০ দিন পর পর এসে ১৫, ২০, ২৫ অথবা ৪০ টাকা কেজি দরে পারিশ্রমিক দিয়ে এসব সুতা রানীনগরের শাওইলে তার কারখানায় নিয়ে যান। রানীনগরের শাওইলে এসব ঝুট কাপড় থেকে তোলা সুতা বিক্রয়ের হাট আছে বলে জানান তিনি। ওই হাট বা কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত তাঁতীরা এসব সুতা ক্রয় করে থাকেন। যা দিয়ে তাঁতীরা গামছা,চাদর তৈরী করেন। সুতাগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক মোটা হওয়ার কারণে এসব সুতা দিয়ে শুধু গামছা আর চাদরই তৈরী হয়ে থাকে। এছাড়া আর কিছু না। এসব সুতা দিয়ে শাড়ী লুঙ্গি তৈরী করা যায় না। আর নিজ হাতে তৈরীকৃত গামছা এবং চাদর বিক্রয়ের টাকা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি।

সেই কাপড় থেকে ধীরে ধীরে স্থানীয় কিছু বেকার যুবক-যুবতী এবং বয়জৈষ্ঠ নারী-পুরুষ মিলে সুতা তোলার কাজ শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে এসবের চাহিদা মন্দ থাকলেও ধীরে ধীরে এর চাহিদা বাড়তে থাকে।

বর্তমানে এখানে প্রতিদিন পরিবার ভেদে ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের সুতা তুলতিছে । চাহিদা বেশি থাকায় এবং ঝুট কাপড় থেকে প্রতি কেজি সুতা তোলার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পারিশ্রমিক পাওয়ায় এই পেশার সাথে এখন অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে। বাড়ির ছোট-বড় সকল সদস্য মিলে সুতা তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করে থাকেন।

চড়কির মাধ্যমে সুতা তোলার সাথে জড়িত একেক পরিবারের লোকজন ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত সুতা তুলতে পারে। এতে করে তাদের ১৫ অথবা ২০ টাকা কেজি হিসেবে দিনে প্রায় ৮০ থেকে ১ শ টাকা হয়ে থাকে।

সংসারের কাজের ফাঁকে তারা এসব কাজ করে থাকেন। এসব কাজ করে তারা সকলেই বাড়তি আয় করতে পারেন বলে জানান।

আর সুতা তোলাকে তারা পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন। এই ঝুট কাপড় থেকে গামছা এবং চাদর তৈরী হয়। এইসব ঝুট কাপড় থেকে তৈরী সুতা বেশ মজবুত ও টেকশই বলে বাজারে ক্রেতাদের কাছে এসব ঝুট কাপড় থেকে তৈরীকৃত গামছা এবং চাদরের চাহিদাও বেশি।

তবে অভাবের সংসারে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নেয়ায় পারিশ্রমিকের একটি অংশ চলে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধে। সরকারী সহযোগীতা ও স্বল্প সুদে ঋণের দাবী করেছেন গ্রামীন এসব নারী-পুরুষরা।

সুতা তোলার কাজের সাথে জড়িত ওই গ্রামের রহিমা, সাজেদা, আলো, কিনারবিসহ আরো অনেকে জানান, প্রতিবেশীদের দেখাদেখি আমরাও ঝুট কাপড় থেকে সুতা তুলে থাকি। ফলে স্বামী-সংসারে কিছুটা বাড়তি আয় হয়।

প্রতিদিন আমরা নানান সাইজের প্রায় ৩ থেকে ৫ কেজি সুতা তুলতে পারি । নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো। কাজ নেই, কি আর করার! তাই; ঝুট কাপড় থেকে সুতা তুলে কেজি প্রতি মাত্র ১৫/ ২০ টাকা পারিশ্রমিকের মাধ্যমে এসব সুতা মহাজনদেরকেই দিতে হয়। সরকারি সুযোগ সুবিধা আমাদের মত গরীব লোকজনদের দিলে এই পেশায় থেকেই আমাদের জীবন-মান উন্নয়ন করা সম্ভব।

মান্দা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এস.এম ফজলুর রহমান জানান, গ্রামীন নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। তবে মান্দার গনেশপুরে যে সব নারীরা ঝুট কাপড় থেকে সুতা তুলে পারিবারিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তাদের বিষয়ে ইতিপূর্বে জানা না থাকলেও তারা যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে তাহলে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করাসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।