নিউজ ডেস্কঃ ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি আশা করছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার প্রার্থী হবেন। সংবাদ সম্মেলনে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
আমেরিকার আগ্নেয়াস্ত্র সমস্যা থেকে শুরু করে বৈদেশিক নীতি নিয়ে নিজের অবস্থানের কথা জানান তিনি। করোনার টিকাদানের আগের লক্ষ্যমাত্রা বদলে দিয়ে বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যেই আমেরিকায় দুই কোটি ডোজ টিকা প্রদান করা হবে।
২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর সরাসরি সংবাদ সম্মেলন করার জন্য একটু সময় নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। গতকাল ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে করা এই সংবাদ সম্মেলনে আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্তের বেসামাল অবস্থা নিয়ে একের পর এক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। সীমান্তের সমস্যার জন্য পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সীমান্ত পথে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের আসা শুরু হয়েছে।
‘বাইডেন আমাদের প্রবেশ করতে দিন’—এমন টি-শার্ট পরে হাজারো মানুষ দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন বলে ছবিসহ সংবাদ বেরিয়েছে। এ নিয়ে আমেরিকার রক্ষণশীল মহলের তোপের মুখে পড়েছেন বাইডেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে আক্রমণ করেছেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোনো ধারণাই নেই, সীমান্তে কী হচ্ছে। ট্রাম্প সমর্থক ও অভিবাসীবিরোধীরা জোর গলায় বলতে শুরু করেছেন, আমেরিকা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের কারণে সীমান্তে অভিবাসন সমস্যা আগে থেকেই সৃষ্ট বলে উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলেন, নতুন করে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। মহামারির কারণে লোকজনের আগমন আগে সীমিত ছিল। আবহাওয়ায় উষ্ণতা আসার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকামুখী লোকজনের যাত্রা বেড়েছে। মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে চরম অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। অপরাধ বেড়েছে। সুযোগ-সুবিধা কমে আসার কারণেও জনপ্রবাহ বেড়েছে।
সীমান্তে অভিবাসীদের সঙ্গে আসা শিশুদের প্রতি মানবিক আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন বাইডেন। শিশুদের পিতা-মাতার সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করতে গিয়ে সীমান্ত উপচে উঠেছে। দক্ষিণের সীমান্তে এসব অভিবাসী রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সবার জন্য আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য লোকবলও নেই।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তের ওই সব এলাকায় সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোকের প্রবেশ ঘটছে। সীমান্তজুড়ে রেডক্রসসহ নানা নাগরিক সংগঠন দুর্গম পথে আসা বেপরোয়া অভিবাসীদের সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোটেল ভাড়া করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে আগেই। তারপরও বহু অভিবাসীকে মানবেতর অবস্থায় সীমান্তে রাখা হয়েছে বলে সংবাদ বেরিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সবকিছু স্বচ্ছতার সঙ্গেই করা হবে। তাঁর নিজের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে সীমান্তে কোনো সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, এ নিয়ে তাঁর দুঃখিত হওয়ার একদমই কোনো কারণ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়া সবচেয়ে বেশি বয়সী বাইডেনকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি ২০২৪ সালের নির্বাচনে দাঁড়াবেন? উত্তরে ৭৮ বছর বয়সী বাইডেন বলেন, তিনি আশা করেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার প্রার্থী হবেন। সেই নির্বাচনে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও তাঁর সঙ্গী হিসেবে থাকবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রশংসা করে সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে একজন চমৎকার সহকর্মী হিসেবে উল্লেখ করেন বাইডেন।
বাইডেন বলেন, তিনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন। এখনো আগামী নির্বাচনের সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় বাকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রার্থী হলে অবশ্যই কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর সঙ্গে নির্বাচন করবেন।
২০২৪ সালে নির্বাচন করলে সে সময় বাইডেনের বয়স হবে ৮২ বছর। বয়সের কারণে বাইডেন পরের নির্বাচনে প্রার্থী না-ও হতে পারেন বলে ধারণা করা হয়। তেমনটা হলে কমলা হ্যারিসই প্রার্থী হবেন বলে মনে করা হয়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৬ সালে শপথ গ্রহণের দিনই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন করবেন। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে বাইডেন বলেন, ‘আমার পূর্বসূরির জন্য বিষয়টি প্রয়োজন ছিল।’ এ কথা বলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজে নিজে বলতে থাকেন, ‘আমার পূর্বসূরি, আমি তাঁকে মিস করি!’
পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, আমেরিকার মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা হবে। আফগানিস্তান থেকে ঠিক কবে মার্কিন সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে, এ নিয়ে কোনো নিশ্চিত সময়সীমা দিতে পারবেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।