অনলাইন ডেস্ক:
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। আগামী ২০ জানুয়ারি তাঁর শপথগ্রহণ। তবে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে বিভিন্ন দপ্তরে সম্ভাব্য মুখ কারা হতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার মন্ত্রিসভা ও উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা, কূটনীতি, বাণিজ্য, অভিবাসন এবং অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর জন্য শীর্ষ প্রার্থীদের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো। এদের মধ্যে কিছু প্রার্থী একাধিক পদেও বিবেচিত হতে পারেন।
ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন স্কট বেসেন্ট। তিনি ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর ধরে শিক্ষকতা করা বেসেন্টকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে অন্যতম প্রধান প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এই পদে আসতে পারেন জন পলসনও। মার্কিন ধনকুবের ও ট্রাম্পের তহবিলে অন্যতম শীর্ষ অনুদান দাতা পলসন এই পদে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনে অর্থমন্ত্রী হতে পারেন—এমন লোকদের তালিকায় আরেকজন হলেন, ল্যারি কুডলো। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন অর্থমন্ত্রী হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের ব্যক্তিত্ব ল্যারি কুডলো। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কুডলোর সুযোগ থাকলেও তার পছন্দের ভিত্তিতে তিনি অর্থনীতিকেন্দ্রিক অন্য কোনো পদে যাওয়ার সুযোগও পেতে পারেন।
সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় আছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রবার্ট লাইটহাইজারও। যদিও অর্থমন্ত্রীর পদে সম্ভাবনা বেশি হেনরি বেসেন্ট ও জন পলসনের, লাইটহাইজারেরও সেই পদে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি চাইলে আবারও তার পুরোনো দায়িত্বে ফিরতে পারেন। এ ছাড়া, ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের সহসভাপতি এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ক্যান্টর ফিটজেরাল্ডের প্রধান নির্বাহী হাওয়ার্ড লুটনিকও অর্থমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন।
ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন রিচার্ড গ্রেনেল। গ্রেনেল ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতি পরামর্শকদের একজন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এবং জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে গ্রেনেল ব্যক্তিগত আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে তিন সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে একজন হলেন রবার্ট ও’ব্রায়েন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ আছে। এই পদের জন্য বিবেচিত আরেক প্রার্থী বিল হ্যাগার্টি। টেনেসির সিনেটর বিল হ্যাগার্টি ট্রাম্পের ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণা এবং প্রশাসন গঠন প্রক্রিয়ায় কাজ করেছেন। তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম দিকে জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ফ্লোরিডার মার্কিন সিনেটর ও ২০১৬ সালের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মার্কো রুবিওকেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে যেসব নাম আলোচনায় তাদের মধ্যে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বর্তমানে ফ্লোরিডার কংগ্রেসম্যান মাইক ওয়াল্টজ অন্যতম। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সিআইএ পরিচালক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাইক পম্পেও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে অন্যতম শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। তবে জাতীয় নিরাপত্তা, গোয়েন্দা বা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যান্য পদেও তাকে রাখা হতে পারে। হার্ভার্ড কলেজ ও হার্ভার্ড ল স্কুলে পড়াশোনা করা সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বর্তমান আর্কানসাসের সিনেটর টম কটনের নামও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে।
ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদে সম্ভাব্য চার প্রার্থীর মধ্যে কিথ কেলগ জাতীয় নিরাপত্তার সংশ্লিষ্ট কোনো পদে দায়িত্ব পেতে পারেন। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলগ ট্রাম্পের আগের প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের চিফ অব স্টাফ ছিলেন।
নতুন প্রশাসনে সম্ভাব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারির দায়িত্ব পেতে পারেন টম হোম্যান। তিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রায় দেড় বছর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া এই পদে সম্ভাব্য মন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় আছে চ্যাড উলফের নামও। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে প্রায় ১৪ মাস স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন চ্যাড উলফ। এই পদের আরেক প্রার্থী হলেন, সাবেক আর্মি ফ্লাইট সার্জন এবং বর্তমান হাউস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির চেয়ারম্যান মার্ক গ্রিন।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।