বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সমাধান করতে হবে - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, বিকাল ৩:১০, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সমাধান করতে হবে

editorbd
প্রকাশিত নভেম্বর ১৩, ২০২৪
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সমাধান করতে হবে

সম্পাদকীয়:

বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিপ্রতিবেশ এবং সাংস্কৃতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহন করে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিামাঞ্চলে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চল নামে এই অঞ্চলটি খরাপ্রবণ। এখানকার আবহাওয়া এবং মাটির বৈশিষ্ট্য আলাদা। এই অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। সার্বিকভাবে এই অঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের একটি রেজুলেশনের মাধ্যমে ১৯৯২ সালে তৎকালীন রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মূলত: কৃষিভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এর সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ ( ২০১৮ সালের ৩৬ নং আইন) প্রণীত হয়।

এতে বলা হয়, বরেন্দ্র এলাকার সার্বিক উন্নয়ন এবং তদসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কার্য সম্পন্ন করিবার লক্ষ্যে আইনটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। আইনটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সম্পূর্ণ আইনজুড়ে শুধু এক শ্রেণীর মানুষের সংশ্লিষ্টতা। এখানে যাদের জন্য উন্নয়ন, উন্নয়নে যাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সেই মানুষগুলোর অংশগ্রহণ এবং মতামত দেবার আইনি কোন স্থানই দেয়া হয়নি। কৃষক, আদিবাসী প্রতিনিধিসহ নেই কোন জনগোষ্ঠীর কার্যকর অংশগ্রহণ। আইনটির সেকশন ৮ (১) এর ধারায় একটি উপদেষ্টো পরিষদের কথা বলা হয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদে কোন কৃষক এবং আদিবাসী প্রতিনিধি নেই।

বিএমডিএর শুরু থকেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপশি সব থেকে বেশি যে কাজটি তারা করে থাকে, তা হলো পানি কেন্দ্রিক সমস্যা সমাধান। শুরু থেকেই বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানটি ভূ-গর্ভস্থ্য পানির প্রতি জোর দেবার কারণে বর্তমান এমন সংকট তৈরি হয়েছে যে দিনে দিনে ভূ-গর্ভস্থ্য পানির স্তর ভয়ংকরভাবে নেমে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে একমুখী অধিক পানি নির্ভর শস্য ফসলের চাষাবাদ বেশি হয়েছে। এক সময়ে এসে কৃষক ধান চাষের দিকে বেশি ঝুকে পড়েছে। অথচ এই অঞ্চলটি বৈচিত্র্যময় শস্য পষল চাষ হতো একসময়। কম পানি নির্ভর রবি শস্যের চাষ বেশি হতো। বিএমডিএ এর কাজের ধারাবাহিকতায় একসময় প্রতিষ্ঠানটি

তার আওতাধীন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার পূর্বক সেচ কার্যক্রমের লক্ষ্যে নতুন গভীর নলকুপ/শক্তি-চালিত পাম্প স্থাপন, পরিচালনা, সেচনালা নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, গভীর নলকূপ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ, খাল/পুকুর পুনঃখনন পূর্বক ব্যবহার, সেচের গভীর নলকূপ হতে খাবার পানি সরবরাহ ইত্যাদি কার্যক্রম নিয়ে বিএমডিএ সেচ নীতিমালা-২০০৮ প্রণয়ন করে। নীতিমালাটিতে ভালো কিছু কৃষকবান্ধব অনুচ্ছেদ থাকলেও তা বাস্তবায়ন না করে বিএমডিএর পক্ষে এবং প্রবাবশালীদের পক্ষে যায় সেকল অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ডিপ দখল এবং ডিপকে কেন্দ্র করে ডিপের আওতাভুক্ত এলাকার কৃষি জমিতে পানি বৈষম্য চরম আকার ধারণ করছে। পানিকে কেন্দ্র করেই বরেন্দ্র অঞ্চলে সামাজিক সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাই বলা যায়, পানি নিপীড়নের নয়া কৌশল ও অস্ত্র হলো এখন বরেন্দ্র ডিপগুলো। ডিপগুলোকে কেন্দ্র করেই এখানে পানি রাজনীতির এক নয়া আধিপত্য সৃষ্টি হয়েছে। ‘জোর যার মল্লুক তার’ বিষয়টি এমন হয়েছে। এই ডিপকে কেন্দ্র করেই বরেন্দ্র জনপদে সামাজিক সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পারিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হত্যা, মারামারি, ডিপ দখল, পানির অন্যায্যতা, পানি হীনতা এবং প্রান্তিক কৃষকের পানির অধিকার বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এখানেও নীতির নামে আইনের নামে এক শুভংকরের ফাঁকি এবং প্রভাবশালীদের এক নতুন সুযোগ করে দিয়েছে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। নীতিমালার কারণে কৃষক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের ন্যায্যতা থেকেও বঞ্চিত হচ্চে। নীতিমালার মধ্যে অনুচ্ছেদ ১.২ স্কিম প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুপারিশের শুধু বিএমডিএর একজন কর্মকর্তার কথা বলা হয়েছে, এখানে কৃষক এবং কৃষক সমিতির মতামতগুলো গুরুত্ব দেয়া দরকার।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।