সম্পাদকীয়:
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর জোর দিচ্ছে বিএনপিসহ মিত্ররা। অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে এখন একাট্টা দলগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে বিএনপি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিষয়ে একমত বিএনপির মিত্র অন্তত ৫২টি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতারাও। তাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, তা দুই থেকে তিন মাসেই শেষ করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এ বছরের মাঝামাঝিতেই নির্বাচন দেওয়া উচিত। তারা মনে করেন, সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাড ঘোষণার লক্ষ্যে আয়োজন করতে পারে একটি জাতীয় সংলাপের। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত সব রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে দ্রুত সংলাপে বসে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা যেতে পারে। অন্যথায় সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়বে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা অস্থিরতাও নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই নির্বাচন করার জন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচন যত বিলম্ব হচ্ছে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। বিএনপির এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে জামায়াতে ইসলামী বলছে, জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, তা দুই থেকে তিন মাসে শেষ করা সম্ভব। কাজেই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এ বছরের মাঝামাঝিতেই নির্বাচন দেওয়া উচিত। এদিকে ইসলামী আন্দোলন বলছে, এত বেশি কালক্ষেপণ করা ঠিক নয়, যাতে মানুষের মধ্যে বিরক্তি, ক্ষোভ তৈরি হয়। আবার এত বেশি তড়িঘড়ি করাও ঠিক নয়। অন্যদিকে ছয়দলীয় জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চারদলীয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপিসহ মিত্র দলগুলো অভিন্ন সুরে বলেছে, দেশের যে পরিস্থিতি তাতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দরকার। তা না হলে সংকট আরও বাড়বে। এমনকি ছয়দলীয় বাম গণতান্ত্রিক জোটও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে।
বলা বাহুল্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করে তা সম্পন্ন করা এবং যথাসম্ভব দ্রুতই তা করা। অন্যথায় রাজনৈতিক সংকট ভিন্নমাত্রা পাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। আবার এটাও সত্য, তড়িঘড়ি নির্বাচন করতে গেলে আশানুরূপ ফল না-ও মিলতে পারে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে প্রশ্ন ও তাগিদ দেখা যাচ্ছে, তা নিরসনে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনি রোডম্যাপ দেওয়াই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য প্রধান কাজ।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।