গৌরীপুরের জাতীয় চারনেতার ভাষ্কর্য্য নতুন প্রজন্মকে জানায় ইতিহাস - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৬:১৪, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

গৌরীপুরের জাতীয় চারনেতার ভাষ্কর্য্য নতুন প্রজন্মকে জানায় ইতিহাস

ADMIN, USA
প্রকাশিত নভেম্বর ৩, ২০২০
গৌরীপুরের জাতীয় চারনেতার ভাষ্কর্য্য নতুন প্রজন্মকে জানায় ইতিহাস

শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) :
ডানেবামে জাতীয় চারনেতা, মাঝে বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চমুখ। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সোনালী রঙের পিতলে তৈরী বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ম্যূরাল সমৃদ্ধ ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’। নভেম্বর মাস এলেই এ দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় ’৭৫এর নারকীয় হত্যাকা-ের কথা। পৃথিবীর ইতিহাসে আরেক কলঙ্কিত অধ্যায় ‘৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস’। শোকে মূহ্যমান করে তোলে বাঙালী জাতিকে। সেই শোকাতুর মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে এ ভাষ্কর্য। এ চত্বর নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ভূমিকা ও পঁচাত্তর এর কলঙ্কময় অধ্যায়। আজ এ স্থানটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। ৩ নভেম্বর, জেলহত্যা দিবস। এ চত্বর যুগযুগ অনুসন্ধিৎসু মানুষের নিকট পৌঁছে দিবে এই পাঁচ নেতার আদর্শ, আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা।
এ চত্বরে এলেই দর্শনার্থীদের মনে করিয়ে দিবে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী মহান পাঁচ নেতার অবদান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ওই বছরের ৩রা নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রকোষ্ঠে চার জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সেদিন জাতীয় চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করে। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুরতম হত্যার ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল গোটা বিশ্ব। কারাগারে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে যোগদানের প্রস্তাব জাতীয় চার নেতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ কারণেই তাদের নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়।
তরুন-তরুণীদের ফেসবুক, টুউটার আর ইন্টারনেট ভার্চ্যুয়াল জগতে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে তোলা ছবি ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বময়। চমকপ্রদ এ চত্বরের পরিকল্পনা ও অর্থায়নের পুরো কৃতিত্বই প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপির। চত্বরের এক কোনায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবার। তাদের নামের সঙ্গে দেয়া হচ্ছে পরিচিতি। শিল্পী এম.এ মাসুদের পরিকল্পনায় পাথরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ৭জন বীরশ্রেষ্ঠ। বাদ যায়নি স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগে অবদান রাখা নেতৃবৃন্দও। বিকাল ঘনিয়ে এলেই এখানে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। সখের কাছে হার মানছে রাজনৈতিক মতাদর্শও।
বঙ্গবন্ধু চত্বরে চিত্রশিল্পী মৃণাল হক সোনালী রঙে তৈরি করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। দু’পাশে রয়েছেন জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতি। বঙ্গবন্ধুর বাম পাশে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী, ডানপাশে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও অর্থমন্ত্রী এম কামরুজ্জামান। একপাশে রয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুনন্নেছা মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পুরো পরিবারের একটি গ্রুপ চিত্রায়ন করেন মৃৎশিল্পী মোহনগঞ্জের সুকেশ কুমার পাল। পাথর কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছে অপরূপ দৃষ্টির এ ছবিটি।
অন্যপাশে চিত্রশিল্পী এম.এ মাসুদ পাথরে ফুটিয়ে তুলেছেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, রুহুল আমিন, মুন্সী আব্দুর রব, সিপাহী হামিদুর রহমান, মোস্তফা কামাল, নুর মোহাম্মদ। পামবীথি সড়কের প্রতিটি গাছের গোড়ায় চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের অমর সৃষ্টি চিত্রকর্ম। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের দৃর্শ্যপটে অংকিত ছবি। রয়েছেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনের প্রতিকৃতি। চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন বাহাদুর পাথর কেটে চত্বরটিকে আলপনা খুদাই করেছেন।
নয়ানাভিরাম সৌখিন কারুকার্য্যরে ভিতরে একপলক বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতাকে দেখতে তারুণ্যের ঢল নামছে গৌরীপুরে। অপরূপ সৌন্দর্য্যরে পুরোধা প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির পর্যটকদের বসার জন্য তৈরি করে ছিলেন স্টেইনলেস স্টিলের বেঞ্চ। যেখানে এক সাথে প্রায় ৫শ পর্যটক প্রকৃতির হাওয়া, দু’পাশের জলের কলতান আর পামবীথির রূপ নিতে পারবেন। কিন্তু রাজনৈতিক বৈরিতায় এসব উপকরণ আজ উধাও হয়ে গেছে। খুলে নেয়া হয়েছে ফ্যানসহ নিরাপত্তায় থাকা সিসি ক্যামেরাও। এ স্বপ্নের পুরোধা ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকিরের ইচ্ছা ছিলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এই মুর‌্যালের উদ্বোধন করবেন। যা জীবনদশায় পূরণ হয়নি। তবে এসেছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোঃ নাসিম। তিনি বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার ভাষ্কর্য্যে পুষ্পমাল্যও অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।