১৮৩৫ বার ইয়াবা ব্যবসায়ীকে কল দিয়েছেন আ.লীগ নেতা - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ৮:২৭, ৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

১৮৩৫ বার ইয়াবা ব্যবসায়ীকে কল দিয়েছেন আ.লীগ নেতা

প্রকাশিত এপ্রিল ২৮, ২০১৯
১৮৩৫ বার ইয়াবা ব্যবসায়ীকে কল দিয়েছেন আ.লীগ নেতা

ডেস্ক রিপোর্ট :: মাদকের দুই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান মনির মোল্লা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত।

রোববার দুপুর ১২টার দিকে মাদকের দুই মামলায় বরিশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান মনির মোল্লা। আদালতের বিচারক মো. শামীম আহম্মেদ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।

বরিশাল মেট্রোকোর্টের জেনারেল রেজিস্ট্রার অফিসার (জিআরও কোতোয়ালি মডেল থানা) এসআই খোকন চন্দ্র মাদকের দুই মামলায় মনির মোল্লাকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মনির মোল্লা নগরীর ২৫নং ওয়ার্ডের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার মৃত ইসাহাক মোল্লার ছেলে এবং বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নগরীর রূপাতলীর ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিশ্রামাগারের একটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে ৪৫২ পিস ইয়াবা উদ্ধার এবং এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

অভিযানের সময় মনির মোল্লাও গ্রেফতার হন। পরে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী কামরুল ইসলাম ও জাহিদুলকে আসামি করে একটি এবং শুধু জাহিদুলকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। তবে অজ্ঞাত কারণে দুটি মামলা থেকে মনির মোল্লার নাম বাদ দেয়া হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই বিশ্রামাগারের একটি কক্ষ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির মোল্লা মাদক সেবন ও বেচাকেনার আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করতেন। অভিযানের সময় জাহিদুল ইসলাম মনির মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ৭০০ পিস ইয়াবা। তবে আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মনির মোল্লাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

মাদকের ওই আস্তানায় অভিযানে ইয়াবা উদ্ধারের খবর নগরীতে ছড়িয়ে পড়লেও পুরো বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেন অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেন।

এ নিয়ে নগরবাসী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়। পরে পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজনকে ৪৫২ পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুটি মামলা করা হয়। অভিযানে ৭০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার হলেও মামলায় দেখানো হয়েছে ৪৫২ পিস ইয়াবা। আসামির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় মনির মোল্লার নাম।

মামলার বাদী গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেন এজাহার থেকে মনির মোল্লার নাম বাদ দিলেও গ্রেফতার সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী জাহিদুল ইসলাম ও কামরুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুর রহমান মনির মোল্লার ছত্রছায়ায় থেকে ইয়াবা ব্যবসা করতেন তারা।

এরই প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতা মনির মোল্লাসহ মোট ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দেন। মনির মোল্লাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় ৪ নম্বর ও অপর মামলায় ৩ নম্বর আসামি করা হয়।

মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম, টেকনাফ ও কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মনির মোল্লার যোগাযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মুঠোফোনে এক হাজার ৮৩৫ বার কথা বলেছেন মনির মোল্লা। একই সময় ৬৬৯টি এসএমএস আদান-প্রদান করেন তিনি।

এছাড়া শুধুমাত্র ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনির ও মাদক ব্যবসায়ী জাহিদুলের ২৪২ বার এবং ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত মোট ২২ বার কথা হয়। এ সময়ের মধ্যে আদান-প্রদান হয় ১১৮টি এসএমএস। যার বেশিরভাগই ইয়াবা কেনাবেচা ও লাভের টাকার বিষয়ে কথা হয়। ইয়াবা বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা লাভ হলে ১০ হাজার টাকা মনির মোল্লাকে দিতে হতো বলেও মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, মামলার চার্জশিট দাখিলের আগেই মনির মোল্লা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও আত্মসমর্পণ না করে প্রকাশ্যে নগরীতে ঘুরে বেড়ান। এ নিয়ে আবারও সমালোচনার ঝড় ওঠে। পুলিশের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে জনমনে। নানা চাপের মুখে অবশেষে রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মনির মোল্লা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মনির মোল্লাকে কারাগারে পাঠানোর খবর পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে অতীতে না থাকলেও ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান মনির মোল্লা। একই সঙ্গে তিনি নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগেরও সাধারণ সম্পাদক। তারই ছোট ভাই মামুন মোল্লা একই ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বলেন, ১২ বছর আগে জমি দখল করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন মনির মোল্লার বাবা ইসাহাক মোল্লা। হঠাৎ নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়ে মনির মোল্লা রূপাতলী এলাকায় গড়ে তুলেছেন মাদক ব্যবসার ঘাঁটি। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দোকানপাট থেকে চাঁদা তোলা এবং জমি দখল করা তার কাজ। এত কিছুর পরও তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

মনির মোল্লার আইনজীবী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ইয়াবা উদ্ধারের সঙ্গে মনির মোল্লার সম্পৃক্ততা নেই। এজহারে মনির মোল্লার নাম ছিল না। ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় মনির মোল্লা বড় ষড়যন্ত্রের শিকার। মনির মোল্লার জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে যাব আমরা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।