ডেস্ক রিপোর্ট : দীর্ঘ সময় ধরে শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের দায়ে হাফেজ আশরাফ উদ্দিন নামে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ধর্মীয় শিক্ষককে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ইপসুইচ ক্রাউন কোর্ট এই রায় ঘোষণা করেন। বার্কিংয়ের উইভেনহো রোডের বাসিন্দা হাফেজ আশরাফ উদ্দিনের বর্তমান বয়স ৭১ বছর। আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে তার তত্ত্বাবধানে থাকা ছয়জন ছাত্রীর ওপর ধারাবাহিকভাবে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ছিল। ভুক্তভোগী শিশুদের বয়স সে সময় ছিল মাত্র ৭ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।
আদালতকে জানানো হয়, শিশুদের জামার ভেতর হাত দেওয়াসহ বিভিন্ন অশালীন আচরণ করতো আশরাফ উদ্দিন। স্থানীয় কমিউনিটিতে হাফেজ ও ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে আশরাফ উদ্দিনের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মান ছিল। প্রসিকিউশনের মতে, নিজের এ ভাবমূর্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সে দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে গেছে এবং ভুক্তভোগীদের মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে।
চলতি বছরের শুরুতে ইপসুইচ ক্রাউন কোর্টে আশরাফ উদ্দিনের বিচার শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে মোট সাতজন ভুক্তভোগীর ওপর ২২টি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে চারটিতে একাধিকবার অপরাধ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার ফলে মোট নির্যাতনের ঘটনার সংখ্যা অন্তত ২৯টি। জুন মাসে শেষ হওয়া চার সপ্তাহব্যাপী দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে জুরি বোর্ড তাকে ছয়জন ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে ১৩টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। এর মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর প্রকৃতির।
সাজা ঘোষণার সময় বিচারক ৭১ বছর বয়সি এই বৃদ্ধকে কঠোর ভর্ৎসনা করেন। ১২ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে আজীবনের জন্য ‘সেক্স অফেন্ডারস রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সে যেন ভবিষ্যতে আর কোনও শিশুর ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য তার ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সেক্সুয়াল হার্ম প্রিভেনশন অর্ডার’ জারি করা হয়েছে। বিচারক মন্তব্য করেন, পরিবারগুলো ধর্মীয় শিক্ষার জন্য অত্যন্ত বিশ্বাসের সঙ্গে তাদের কন্যাসন্তানদের তার কাছে পাঠিয়েছিল। কিন্তু আশরাফ উদ্দিন সেই পবিত্র বিশ্বাসের জঘন্য অপব্যবহার করেছে।
সাউথ সেফগার্ডিং ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ডোনা হপার ভুক্তভোগী নারীদের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, হাফেজ আশরাফ উদ্দিন কমিউনিটিতে তার সম্মানিত পদের অপব্যবহার করে এই জঘন্য অপরাধগুলো করেছে। ঘটনার সময় সামাজিক লজ্জা এবং ওই শিক্ষকের প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে ভুক্তভোগীরা মুখ খোলার সাহস পাননি। দীর্ঘ সময় পার হলেও যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব, এই রায় তারই প্রমাণ। পুলিশ কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন, অপরাধী হয়ত ভেবেছিল, ঘটনার বহু বছর পার হয়ে যাওয়ায় এবং নিজের বয়সের কারণে সে পার পেয়ে যাবে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের দৃঢ়তায় শেষ বয়সে তাকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।