সাইমূম ইভানঃ
নতুন প্রজন্মকে মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ৭৫তম জয়ন্তী উদ্যাপন করলেন বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।
রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ‘আসাদুজ্জামান নূর জয়ন্তী জাতীয় উদ্যাপন কমিটি’ আয়োজন করে ‘তোমারই হোক জয় আসাদুজ্জামান নূর’ ‘শুভ ৭৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমি জন্মদিন পালনে কখনোই আগ্রহী ছিলাম না। এবার সম্মতি দিয়েছি একটি মাত্র কারণে, এখানে সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। কিন্তু এই আয়োজন ম্লান হয়ে যায়, যখন দেখি, যে অপশক্তির বিরুদ্ধে ৭১ সালে লড়েছি, সেই শক্তি তার হিংস্র ফণা তুলেছে। এ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে চিরতরে। আমাদের অবশ্যই ফিরতে হবে ৭২ এর সংবিধানে, যে সংবিধান আমাদের দিয়ে গেছেন জাতির পিতা, যে সংবিধানের পাতায় পাতায় লাখো শহীদের রক্তের চিহ্ন, লক্ষ মা বোনের কান্না আর অশ্রু।’
তিনি আরও বলেন, ‘৭৫ বছর পূর্ণ করে সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে আছি। তাতে আমি এতটুকু বিষণ্ন বোধ করি না। দীর্ঘকাল এ পথ চলায় যে সময়টাকে সঙ্গে নিয়ে আমি পথ হেঁটেছি সেটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সঞ্চয়। সময় আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেছে এক গন্তব্য থেকে আরেক গন্তব্যে। চলার পথে কত মানুষের সাহচর্য আমার জীবনবোধকে শাণিত করেছে, কত মানুষের ভালোবাসা আমার জীবনকে ঋদ্ধ করেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা, এ বাণীই আমার সবচেয়ে বড় সত্য।’

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘চিরকাল মানুষের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি, থাকার চেষ্টা করেছি এখানে সাফল্য-ব্যর্থতা দু’টাই আছে। ব্যর্থতার দায়ভার আমার। সাফল্যে সবার অবদান। আমার পথচলা আপনাদেরই হাত ধরে।’
তিনি বলেন, দীর্ঘকাল এ পথ চলায় যে সময়টাকে সঙ্গে নিয়ে আমি পথ হেঁটেছি সেটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সঞ্চয়। সময় আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেছে এক গন্তব্য থেকে আরেক গন্তব্যে।
তিনি আরো বলেন, নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে প্রকৃত বাঙালি করে, প্রকৃত মানুষ করে। সেজন্য চাই শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চার মেলবন্ধন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও কবি কামাল চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন গোলাম কুদ্দুছ। আবৃত্তি করেন হাসান আরিফ। শংসাবচন পাঠ করেন নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ। বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, রামেন্দু মজুমদার, সারা যাকের, আতাউর রহমান, আনিসুল হক প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্য দেন অধ্যাপক অনুপম সেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মো. আহকাম উল্লাহ।

সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অভিনয় ও আবৃত্তিশিল্পী ঋদ্ধমানব আসাদুজ্জামান নূর-এর জন্মদিনে ‘তোমারই হোক জয়’ শিরোনামে এ আয়োজনে বিশিষ্টজনের সঙ্গে সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
আয়োজনের শুরুতে তার জনপ্রিয় পরিবেশনা সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাট্য ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ এর মুখবন্ধের আবৃত্তির সঙ্গে নৃত্যশিল্পীরা তাকে মঞ্চে উপস্থাপন করেন। এই পর্বের গ্রন্থনা ও নির্দেশনা করেছেন হাসান আরিফ।
পরে বাংলাদেশের সকল সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষে আসাদুজ্জামান নূরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান অধ্যাপক অনুপম সেন ও গোলাম কুদ্দুছ। মঞ্চে আসাদুজ্জামান নূরকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষে আসাদুজ্জামান নূরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনার পোশাক পরিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি ও কবি কামাল চৌধুরী। মিলনায়তনের সব দর্শক একযোগে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকামউল্লাহ্’র নেতৃত্বে সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করে আসাদুজ্জামান নূরকে নিবেদন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব গোলাম কুদ্দুছ। আসাদুজ্জামান নূরকে নিবেদন করে কবিতা আবৃত্তি করেন হাসান আরিফ। শংসাবচন পাঠ করেন নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
আসাদুজ্জামান নূরের কর্মময় জীবনের চিত্রকল্প উপস্থাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, অভিনেত্রী সারা যাকের, আতাউর রহমান, কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক আনিসুল হক প্রমুখ।
সভাপতির বক্তৃতা করেন জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অনুপম সেন। এরপর আসাদুজ্জামান নূর তার আত্মকথনে নিজের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সেসময় সমবেত অতিথিরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মো. আহকাম উল্লাহ।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, আসাদুজ্জামান নূর একজন বিশ্বমানের অভিনেতা। যে কোনো চরিত্রকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরতে তিনি অদ্বিতীয়। তার অভিনীত চরিত্র ‘বাকের ভাই’ তুমুল জনপ্রিয় ছিল। সেই বাকের ভাইয়ের ফাঁসি রোধ করতে রাস্তায় মিছিল হয়েছে। একজন অভিনেতার জন্য এটা বিশাল প্রাপ্তি। তিনি অভিনয়ে বিরতি দিয়ে রাজনীতি করেছেন মানুষের সেবা করার জন্য। তার জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি সব সময় মানুষের সঙ্গে, মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। সারা যাকের বলেন, নূর ভাইয়ের কাছ থেকে এখনো আমি শিখি। সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার, নিবেদিত হয়ে কাজ করা তার কাছ থেকে শিখেছি। কে এম খালিদ বলেন, আসাদুজ্জামান নূরের কোনা বিকল্প নেই। অভিনয় শিল্পী থেকে রাজনীতিবিদ সব খানেই তিনি অনন্য।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।