আজীবনের জন্য শাসন কেন? – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, দুপুর ১:৫১, ৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

আজীবনের জন্য শাসন কেন?

প্রকাশিত মার্চ ১৩, ২০১৮
আজীবনের জন্য শাসন কেন?

Manual5 Ad Code

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ শেষ পর্যন্ত উপেক্ষাই করা হলো ভিন্নমত। ভিন্নমতকে তোয়াক্কা না করাটা সি চিন পিংয়ের পছন্দও। চীনের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মেয়াদ তুলে দিতে রোববারের ভোটাভুটির পর ২০২৩ সালে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ক্ষমতায় থাকতে পারছেন তিনি। সম্ভবত আজীবনের জন্য।

প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ তুলে দেওয়াসংক্রান্ত বিলটি বিপুল ভোটে পাস হয়। কংগ্রেসের মোট সদস্যের মাত্র দুজন ভোট দেন বিলটির বিপক্ষে। পক্ষে ভোট দেন প্রায় সবাই—২ হাজার ৯৫৮ জন। বাকি তিনজন ভোটদান থেকে বিরত থাকেন। এ পরিসংখ্যানে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, সি চিন পিং তাঁর প্রথম মেয়াদ শেষ করেছেন ক্ষমতাসীন চায়নিজ কমিউনিস্ট পার্টিকে (সিসিপি) শুদ্ধীকরণ অভিযানেই। দলের যে অংশটি তাঁর সর্বশক্তিমত্তার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তা তিনি গোড়াতেই সমূলে উৎপাটন করেছেন।

Manual1 Ad Code

ভোটাভুটির পর চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) চেয়ারম্যান ঝাং দেজিয়াং পার্লামেন্টে প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ‘জাতীয় পুনর্জাগরণের মহান স্বপ্ন আমাদের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেয়।’ তিনি প্রতিনিধিদের ‘সি চিন পিংয়ের চিন্তাধারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়ন ও তা প্রয়োগ…এবং চীনাদের স্বপ্ন অনুধাবনের’ আহ্বান জানান।

Manual7 Ad Code

কিন্তু চীনের একক ক্ষমতাশালী ব্যক্তির রাজনীতিতে ফিরে যাওয়াটা মাও সে-তুংয়ের নেতৃত্বে দেশটির কালো অধ্যায়ের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। মাও সে-তুংয়ের ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ ও ‘কালচারাল রেভল্যুশন’-এর কারণে লাখ লাখ মানুষের জীবন গেছে। আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার জন্য সংবিধানে পরিবর্তন আনাটা সি চিন পিংয়ের ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক হলেও দেশটিতে বিরুদ্ধাচরণের সুযোগ কমে আসবে। অব্যাহতভাবে সুশাসনের ক্ষেত্রে আবশ্যিক তর্কাতর্কিও কমে যাবে। আর আজ যেটা হচ্ছে তার প্রভাব শুধু চীনের সীমান্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ হিসেবে বৈশ্বিক জিডিপিতে ভূমিকা থাকায় তা অন্যান্য দেশকেও প্রভাবিত করবে।

Manual2 Ad Code

লন্ডনের কিংস কলেজের লাউ চায়না ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক কেরি ব্রাউন বলেন, ‘আজকের চীনের তুলনায় মাও সে-তুংয়ের সময়ে বেশি ভিন্নমত পোষণের সুযোগ ছিল।’ ‘সিইও, চায়না: দ্য রাইজ অব সি চিন পিং’ বইয়ের এই লেখক বলেন, এটা বিস্ময়ের। তখন বিরোধিতা করার প্রচুর সুযোগ ছিল, অথচ এখন সেটা নেই। বর্তমানে কোনো বিরোধিতা নেই বললেই চলে।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসওএএস চায়না ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক স্টিভ সাং বলেছেন, সি চিন পিংয়ের বিরুদ্ধে যাওয়া মানে কারও রাজনীতি ও ক্যারিয়ার নিজেই শেষ করে দেওয়া এবং তাঁর অর্থনীতিসংক্রান্ত বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা এখন হয়তো সি চিন পিংয়ের নেতৃত্ব মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু একবার তিনি ক্ষমতাচ্যুত হলে তাঁর কপালে কী ঘটবে? সির দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আগ পর্যন্ত চীনের সর্বোচ্চ পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির (পিএসসি) সদস্যদের নিরাপদে অবসরে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপরই দেশটির সাবেক নিরাপত্তা সার্ভিসের প্রধান পিএসসি সদস্য ঝু ইয়ংকাংকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

Manual8 Ad Code

এভাবে নিজ দলে ও দলের বাইরে অনেক শত্রুর জন্ম দিয়েছেন সি চিন পিং। অধ্যাপক স্টিভ সাং এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সি ইতিমধ্যে অনেক শত্রুর জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কি নিশ্চয়তা দিতে পারেন যে তাঁর অবসরের তিন বছর, চার বছর পর তিনি ও তাঁর পরিবারকে ছেড়ে দেওয়া হবে?

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code