ডেস্ক রিপোর্ট: রোজকার ধুলো-বালি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে কতকিছুই না করি আমরা। কিন্তু নিয়মিত ১০টি বিষয়ে খেয়াল রাখলে সহজেই ত্বকের যত্ন নেওয়া যাবে বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাওহীদা রহমান ইরিন। বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য তিনি বলেন, যারা অনেককিছু করতে সময় পান না,তারা নিজের নিয়মিত জীবন যাপনের মধ্যে এই নিয়মগুলো নিয়ে আসতে পারলেই পোহাতে হবে না বাড়তি ঝামেলা। কেবল শারীরিক সুস্থতা নয়, মনের সুস্থতাও জরুরি। আমরা যদি রুলস অব টেন মেনে চলি তাহলে আমরা নিজেরাও ভালো থাকবো।দিনে ১০ গ্লাস পানি খান|পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে কারণ আর্দ্রতা না থাকলে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ আর খসখসে হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকে খুব দ্রুত ঝুলে যাওয়া, বলিরেখা আর ফাইন লাইন দেখা দেয়। ব্রণ, অ্যালার্জি বা চুলকানি অনেক সময় আর্দ্রতা ঘাটতির কারণে বেড়ে যায়। যথাযথ পরিমাণ পানি পান করলে ত্বকের আর্দ্রতা থাকে এবং বাইরের ধুলো, দূষণ আর জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হাইড্রেটেড ত্বক সবসময় টানটান, কোমল আর স্বাভাবিক উজ্জ্বল দেখায়।
নয় হাজার ধাপ হাঁটুন
মনে হতে পারে হাঁটার সঙ্গে ত্বকের কী সম্পর্ক! গভীর সম্পর্ক আছে। যদি নিয়মিত মাত্র ৯ হাজার
ধাপ হাঁটতে পারেন, তাহলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন সক্রিয় হয়। এতে ত্বকের কোষগুলোতে অক্সিজেন
ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি দ্রুত পৌঁছায়, ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ দেখায়। হাঁটার সময় ঘাম হয়, আর
ঘামের সাথে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায়। এতে ব্রণ বা ত্বকের নিস্তেজভাব কমে যায়।
প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ঘুম মানেই সুস্থ, ফ্রেশ ও উজ্জ্বল
ত্বক।
আট মিনিট মেডিটেশন করুন
মেডিটেশন ভেতর থেকে ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য দারুণ ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত স্ট্রেসের
কারণে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা ব্রণ, একজিমা বা চুলকানি বাড়ায়। মেডিটেশন মানসিক চাপ
কমিয়ে এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। মেডিটেশনের সময় শ্বাস-
প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়, শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ ভালো হয়। এতে ত্বক বেশি উজ্জ্বল ও
প্রাণবন্ত দেখায়।
অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমান
দিনে ৭ ঘণ্টা ঘুমের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি। ঘুম আর ত্বক একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত।
পর্যাপ্ত ও ভালো মানের ঘুম ত্বককে ভেতর থেকে সতেজ ও স্বাস্থ্যকর রাখে। ঘুমের সময় শরীর
নতুন কোষ তৈরি করে আর ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তোলে। এতে ত্বক সতেজ থাকে। গভীর ঘুমে
কোলাজেন প্রোটিন তৈরি হয়, যা ত্বক টানটান ও মসৃণ রাখে। এতে বলিরেখা দেরিতে আসে। ঘুমের
অভাব হলে চোখের নিচে কালো দাগ ও ফুলে যাওয়া দেখা দেয়। পর্যাপ্ত ঘুমে এগুলো কমে যায়। ঘুমের
সময় শরীরের পানি ভারসাম্য ঠিক থাকে, ফলে ত্বক শুষ্ক বা রুক্ষ হয় না।
যে ১০ নিয়মে ত্বক থাকবে স্বাস্থ্যসম্মত
৬. ছয় ধরনের ফল সবজি খাবেন
সারাদিনের খাবার তালিকায় আমরা অনেককিছু রাখি। কিন্তু একটু যদি ভেবে খাবারের তালিকা বানানো
যায়, তাহলে শরীরের প্রয়োজনের সবকিছুই পেয়ে যেতে পারেন। যেমন নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ
খাবার খেলে কোলাজেন তৈরি হয় ও ত্বক টানটান রাখে। গাজর খাদ্য তালিকায় থাকলে এতে যে বিটা-
ক্যারোটিন থাকে তা ত্বককে উজ্জ্বল রাখে, শুষ্কতা কমায়, ত্বক নরম করে। শসা ত্বক হাইড্রেট
রাখে, প্রদাহ ও ফোলাভাব কমায়। পেঁপে মৃত কোষ ঝরাতে সাহায্য করে, ত্বক মসৃণ করে। সবুজ
শাকসবজি আয়রন, ভিটামিন কে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তশূন্যতা কমিয়ে ত্বকে
প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে। এতে ইনফ্ল্যামেশন বা লালচেভাব কমে।
৫. প্রতি ঘণ্টায় কাজ থেকে ৫ মিনিটের ব্রেক নিন
এটা জরুরি। কারণ দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়। ৫ মিনিট ব্রেক নিয়ে
এদিকে সেদিকে হাঁটলে বা পা ঝুলিয়ে নিলে রক্ত চলাচল বাড়ে। এতে ত্বকে অক্সিজেন ও পুষ্টি দ্রুত
পৌঁছে, ত্বক সতেজ দেখায়। মনে রাখবেন ছোট ব্রেক মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয়। আর কম স্ট্রেস মানে
ব্রণ, চুলকানি বা লালচে ভাব কম। এছাড়া কম্পিউটার বা ফোনের পর্দা তাকানো দীর্ঘ সময়ের জন্য
থাকলে চোখ ক্লান্ত হয়, চোখের চারপাশের ত্বক নিস্তেজ দেখাতে পারে। ৫ মিনিট বিশ্রাম বা চোখ
বন্ধ রাখলে চোখ ও ত্বক উভয়ই সতেজ থাকে।৪. দিনে চার দফা ডিভাইস থেকে দূরে যান
দিনে অন্তত চার বার ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন। পরিবারকে সময় দেওয়ার সময়, খাওয়ার
সময়, ঘুমের আধা ঘণ্টা আগে ও ঘুম থেকে ওঠার পরের আধা ঘণ্টা অবশ্যই ফোন বা ল্যাপটপ
ব্যবহার করবেন না। কম্পিউটার, মোবাইল বা ট্যাবের স্ক্রিন থেকে ব্লু লাইট নির্গত হয়। এটি
ত্বকের কোলাজেন ভেঙে দিতে পারে এবং বয়সের ছাপ দ্রুত বাড়ায়। কিছু সময় দূরে থাকলে ত্বককে ব্লু
লাইটের ক্ষতি কমানোর সুযোগ পাওয়া যায়। স্ক্রিনের দীর্ঘ ব্যবহার স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বাড়ায়
এবং কর্টিসল হরমোন বেড়ে ব্রণ ও ত্বকের প্রদাহ হয়। বিরতি নিলে স্ট্রেস কমে, ত্বক স্বাভাবিক
রঙ ও উজ্জ্বলতা পায়।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।