ডেস্ক রিপোর্ট: পবিত্র কোরআন পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও সর্বোত্তম গ্রন্থ। এটি মানব জীবনে হেদায়েত স্বরূপ ও পথপ্রদর্শক। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘এই সেই কিতাব, যাতে কোনও সন্দেহ নেই, মুত্তাকিদের জন্য হিদায়েত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২)হাদিস শরিফে কোরআনের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে তা শেখায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০২৭) তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর বাণী (কোরআন)।’ (নাসাঈ শরিফ)আল কোরআনের এই শ্রেষ্ঠত্বের কথা শুধু মুসলমানরাই নয়; বরং পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই জাহেলি ভাষাবিদরাও এটি স্বীকার করেছেন। কোরআনের কাছে আত্মসমর্পণ করে তারা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘লাইসা হাজা-মিন কালামিল বাশার’, মানে এটি কোনও মানুষের বাণীগুচ্ছ নয়।
কোরআন পাঠ ও শ্রবণের উপকারিতা
কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠ করলে ১০টি নেকি (পুণ্য) লাভ করা যায়। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করল, এতে সে ১০টি নেকির অধিকারী হলো। আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম ও মিম একটি হরফ। বরং আলিফ
একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম একটি হরফ।’ (তিরমিজি শরিফ) কোরআন তিলাওয়াতে যেমন অনেক ফজিলত, তেমনি পবিত্র এ গ্রন্থের তিলাওয়াত শ্রবণেও পাওয়া যায় অনেক সওয়াব ও নেকি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন কোরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগসহ তা শোনো এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪)
জনসমাগমে কী লাউডস্পিকারে তিলাওয়াত ছাড়া যাবে?
উপরোক্ত বর্ণনাগুলো ছাড়াও কোরআনের বহুমুখী ফজিলত সম্পর্কে আরও অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বর্ণিত আছে। এসব ফজিলত অর্জনের জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ কোরআন তিলাওয়াত করার পাশাপাশি শ্রবণ করতেও পছন্দ করেন। এজন্য দেখা যায়—কখনও হাট-বাজারে, জনসমাগমে কিংবা লিফটের
মধ্যেও কোরআন তিলাওয়াতের অডিও রেকর্ড লাউডস্পিকারে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, কোরআন শ্রবণ তো অনেক সওয়াবের কাজ, কিন্তু এই পদ্ধতিতে তা কতটুকু অর্জিত হবে?
এর উত্তর হচ্ছে—এসব স্থানে লাউড স্পিকার দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত শোনা মোটেও ঠিক নয়। কারণ, এর দ্বারা কোরআনের সম্মানহানি হয়। কেননা, এরূপ স্থানে মানুষ স্থির হয়ে কোরআন শুনতে পারে না, যে কারণে আল্লাহ তায়ালার আদেশ লঙ্ঘন করা হয়। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমে
নির্দেশ দিয়েছেন, যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা মনোযোগ সহকারে চুপচাপ শোনা
উচিত, যাতে আয়াতগুলোর ওপর চিন্তাভাবনা করে উপকার লাভ করা যায়; তা নামাজের ভেতরে হোক
কিংবা নামাজের বাইরে।
কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণের আদব সম্পর্কে ফকীহ আলেমরা লিখেছেন, সরাসরি তিলাওয়াত শোনার
যে আদব, রেকর্ড করা কোরআনের তিলাওয়াত শোনার আদবও সেই একইরকম। এমনকি রেকর্ড করা
তিলাওয়াত শোনার দ্বারাও সাওয়াব অর্জিত হয়। সুতরাং যেসব স্থানে মানুষ শুনতে মনোযোগী হতে
পারে না, সেখানে লাউডস্পিকারে কোরআন তিলাওয়াতের রেকর্ড বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
(জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া আল্লামা মোহাম্মদ ইউসুফ বানুরী টাউন করাচির ফতোয়া নাম্বার :
১৪৪২০৮২০০৬০৫)
মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘জাদিদ আলাত কে শরঈ আহকাম’ (আধুনিক
যন্ত্রপাতির শরঈ বিধান)-এ উল্লেখ করেছেন, ‘যেহেতু রেকর্ডারে কোরআনের তিলাওয়াত করা
জায়েজ, সেহেতু তার মাধ্যমে অন্যকে শোনানোও জায়েজ। তবে শর্ত হলো, এমন আসরে যেন শোনানো
না হয় যেখানে মানুষ নিজ নিজ ব্যবসা বা ব্যস্ততায় নিমগ্ন থাকে বা শুনতে মনোযোগী হয় না। তা হলে
সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে।’ (পৃষ্ঠা : ২০৭)
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।